Salim meets ssc seekers

উৎসবের দিনও কাটে রাস্তার ধারে

কলকাতা

উৎসবের লেশমাত্র নেই ওঁদের জীবনে। রাস্তার ধারেই বসে অসহ্য যন্ত্রণায় কাটে দিনের পর দিন। বছরের আর পাঁচটা দিনের মতোই বড়দিন ২৫ ডিসেম্বরও এক সময়ে শুরু হয়ে শেষও হয়ে যায় চোখের নিমেষেই। রবিবারের পড়ন্ত বিকেলে কয়েক পা দূরে আলো ঝলমলে পার্ক স্ট্রিট আর ধর্মতলার দিকে তাকিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা বলে ওঠেন, ‘কি দোষ করেছিলাম আমরা, আমরাও তো পারতাম আজকে উৎসবে শামিল হতে। আমাদের বাঁচতে দেওয়া হচ্ছে না, সরকার-প্রশাসন-শাসক দলের দুর্নীতি আমাদের বাঁচতে দিচ্ছে না।’ 
সূর্য ডোবার সন্ধিক্ষণে ম্লান আলোয় অসংখ্য উদ্বিগ্ন চোখ খুঁজে পেতে চায় কোনও এক সান্তাক্লজকে। সেই শিবিরে দাঁড়িয়েই এদিন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বললেন, আন্দোলন আরও বৃহত্তর হবে। তৃণমূলের দুর্নীতি আমরা শেষ করব। তৃণমূলকে নিশ্চিন্তে আর ঘুমাতে দেব না। রুখবো ওই দলের সঙ্গী অন্যান্য সমস্ত দক্ষিণপন্থী দলগুলির ধান্দাবাজদের। একদিন অবশ্যই নিয়োগপত্র নিয়ে ‘সান্তাক্লজ’ আসবে ন্যায়সঙ্গতভাবে প্রাপ্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছে। সেই দিনটির অপেক্ষা করছি। 
কলকাতার মাতঙ্গিনী মূর্তির নিচে তখন অসংখ্য প্ল্যাকার্ড মাথা তুলেছে। অজস্র মলিন মুখ সেই প্ল্যাকার্ড হাতে তুলে ধরে রয়েছে। হাহাকারে ভরে উঠছে পরপর পাঁচটি ধরনামঞ্চই। কোথাও চোখের জল মিশেছে আবেদন নিবেদনের স্লোগানের সঙ্গে। কোথাও আন্দোলনের নতুন প্রয়াস আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে নতুন উদ্যমে আগামী দিনের চলার পথের নির্দেশিকা তৈরি করছে। কোনও শিবিরে চাকরিপ্রার্থী মায়ের সঙ্গে বসে রয়েছে একরত্তি শিশুরা। আবার কোনও শিবিরে অসহায় কোনও গরিব বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ছেলে ধরনামঞ্চে ঠায় বসে রয়েছেন তাঁর চুরি হয়ে যাওয়া চাকরি ফিরে পেতে। 
রবিবার এভাবেই কেটে গিয়েছে তাঁদের বড়দিনের কেকের উৎসব। তাঁদের হাতে লেখা গ্রিটিংস কার্ডে ফুটে উঠেছে সেই যন্ত্রণারই কথা, ‘খেলা মেলা বর্ষবরণ হচ্ছে সবই তা-ধিন-ধিন, বেকার ছেলের গলায় দড়ি, চাকরি না হয় মৃত্যু দিন।’ তাঁদের পাহাড় প্রমাণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে জমে উঠেছে গত ৮ বছরের ক্ষোভ। এদিন একে একে ৫টি ধরনামঞ্চেই যান মহম্মদ সেলিম। কথা বলেন তাঁদের সঙ্গে। শোনেন তাঁদের জীবন যন্ত্রণার কথা, ক্ষোভের কথা।
এদিন চাকরিপ্রার্থীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, এই ছেলেমেয়েরা পরীক্ষা দিতে চান, ইন্টারভিউয়ে বসতে চান। তাঁরা স্বাভাবিক নিয়মে একটা চাকরি পেতে চান যোগ্যতা অনুসারে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী থেকে শিক্ষামন্ত্রী-ভাঁওতাবাজি আর মিথ্যাচারের প্রতীক হয়ে গিয়েছেন। সরকারিভাবে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়, তাহলে দুর্নীতি কেন। এই ছেলেমেয়েদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না কেন। এত দুর্নীতি তাও সরকারের টনক নড়ছে না। এমন লোকজনকেই মাথায় মাথায় বসানো হয়েছে যারা বহু টাকা নিয়ে চাকরি বিক্রি করে। টাকা নিয়ে সাদা খাতা জমা দিয়েও নিয়োগ হয়। 
সেলিম বলেন, কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার—সব জায়গায় মমতা ব্যানার্জির মণিমুক্ত ছড়ানো আছে, কিছু অযোগ্য লোক সবক্ষেত্রেই বসে রয়েছে। আর এসব দিক থেকে নজর এড়াতে উৎসব, আলো, মেলা খেলার ব্যবস্থা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরে স্কুলগুলিতে তো শিক্ষক শূন্য হয়ে যাবে। সুতরাং এই চাকরিপ্রার্থীদের লড়াই শুধু তাঁদের নয়, এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই সবার লড়াই। এছাড়াও এদিন ধরনামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ইন্দ্রজিৎ ঘোষ, কলতান দাশগুপ্ত, বিকাশ ঝা প্রমুখ।
চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য, আপার প্রাইমারি টেট পরীক্ষা হয়েছে ২০১৫ সালে। ২০১৯ সালে ইন্টারভিউ হয়েছে, কিন্তু নিয়োগ হয়নি। ইতিমধ্যে জীবন থেকে চলে গেছে ৮টি বছর। নিয়োগের নামে অনেক জল বয়ে গেছে। কিন্তু কিছুই হয়নি। অপেক্ষারতদের মধ্যে কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন, কেউ টোটো চালিয়ে, চানাচুর বিক্রি করে দিন চালাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের দাবি, অবিলম্বে প্যানেল চাই। অপর একটি ধর্নামঞ্চে রয়েছেন টেট আপার প্রাইমারি চাকরিপ্রার্থীরা যাঁদের ইন্টারভিউই হয়নি। ২০১২ সাল এবং ২০১৫ সাল- দুই সালেরই চাকরিপ্রার্থীরা ৮টি বছর ধরে লড়াই চালাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্যানেল বতিল হয়ে গেছে। এমনকি ২০১৬ সালে যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে তাতে যে ইন্টারভিউয়ের আগে সিট আপডেটের কথা লেখা আছে তাও মানা হয়নি। তাহলে এর পরে কি করব আমরা।
ধরনামঞ্চের অন্য শিবিরে ১৩০ দিন ধরে বসে রয়েছেন ২০১৪ প্রাইমারি টেট পাশ ট্রেন্ড নট ইনক্লুডেড প্রার্থীরা। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাঁদের প্রশ্ন, এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে তাঁর মাতঙ্গিনী মূ্র্তির পাদদেশে আসার সময় হবে কবে। এছাড়াও সেখানে ধরনা মঞ্চে রয়েছেন স্কুলের গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীরা। ২০১৭ সালে তাঁদের পরীক্ষা হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে পুরো প্যানেলই ভুয়ো। ধরনামঞ্চে আর একটি শিবিরে রয়েছেন রাজ্য সরকারের গ্রুপ ডি চাকরিপ্রার্থীরা যাঁদের পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৭ সালে। এখনো নিয়োগ দূর অস্ত, ১৩০ দিন ধরে অবস্থানে শামিল রয়েছেন তাঁরা। উৎসব যায়, উৎসব আসে। ঘরেতে তীব্র অভাব আর বাইরে চরম বঞ্চনা নিয়েই দিন কাটে ওঁদের।           
                  
 

Comments :0

Login to leave a comment