Md Salim

ব্রিগেডের রাজনৈতিক উৎসাহ বুথ স্তরে প্রসারিত করাই লক্ষ্য: সেলিম

রাজ্য

 লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুথ ভিত্তিক প্রস্তুতি শুরু করেছে সিপিআই(এম)। জেলায় জেলায় হবে লোকসভা ও বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক কর্মীসভাও। গত জানুয়ারিতে যৌবনের ডাকে জনগণের ব্রিগেড সমাবেশকে কেন্দ্র করে যে রাজনৈতিক উৎসাহের পরিবেশ তৈরি হয়েছে তাকেই বুথ স্তর পর্যন্ত প্রসারিত করার ডাক দিল সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি।
দু’দিনব্যাপি রাজ্য কমিটির সভা শেষে এদিন পার্টির রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠকে মহম্মদ সেলিম বলেন বৈঠকে এই সময়কালে আন্দোলন সংগ্রামের পর্যালোচনা আমরা করেছি। নির্দিষ্টভাবে রাজ্যের পরিস্থিতিও আলোচনা হয়েছে। ব্রিগেড পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক স্তরে এখন সদস্যপদ পুনর্নবীকরণের প্রক্রিয়া চলছে। চলতি মাসেই তা শেষ হবে। লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। একেবারে বুথ স্তর পর্যন্ত সেই উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
আগামী ২১ তারিখে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে যেমন নানা কর্মসূচি বিভিন্ন সংগঠনের তরফে নেওয়া হয়েছে, তেমনি সাংগঠনিক স্তরে পার্টি কর্মীরা সেই দিন ‘রেড বুক ডে’ পালন করবেন। রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানান, গোটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওইদিন এমন কর্মসূচি পালিত হয়। আমার নির্দিষ্ট স্লোগান ঠিক করেছি, ‘মাতৃভাষায় মার্কসবাদী চর্চা’। একদিকে যখন ধর্মের নামে, জাতের নামে বিভাজনের রাজনীতি সেই সময়তেই ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের তাৎপর্য বাড়তি গুরুত্ব বহন করছে। মোদী সরকারের পরিকল্পিত বঞ্চনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবারই দিল্লিতে কেরালার এলডিএফ সরকারের বিক্ষোভের প্রসঙ্গে এদিন সেলিম বলেন, এরাজ্যেও বামফ্রন্ট আগামী ১০ তারিখে গোটা রাজ্যে প্রচার কর্মসূচি সংগঠিত করবে। গরিব মানুষের টাকা কেন আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় সরকার? যাদের প্রাপ্য তাঁদের টাকা দিতে হবে আর যারা চুরি করেছে তাদের জেলের ভরতে হবে। এটা আমাদের স্পষ্ট দাবি। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো আক্রান্ত হচ্ছে মোদী জামানায়। যদিও মমতা ব্যানার্জির মুখে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা মানায় না। বিরোধী থাকাকালীন রাজ্যকে যাতে আর্থিক বঞ্চনা করা হয় তার জন্য কেন্দ্রের কাছে তদ্বির করতেন মমতা ব্যানার্জি। এদিকে আগামী ১৩ তারিখে সর্বভারতীয় আন্দোলনের অংশ হিসাবেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতি, আরএসএস বিজেপি-র উগ্র সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে শিল্প ভিত্তিক ফেডারেশন ও কৃষক খেতমজুর সংঠপন সমূহ জেলা শাসকের দপ্তরে অভিযান ও আইন অমান্য, জেল ভরো কর্মসূচির ডাক দিয়েছে সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি তাতে সমর্থন জানিয়েছে।
এদিন সন্দেশখালিতে শাসক তৃণমূলের লুটের রাজনীতির বিরুদ্ধে, শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিরোধের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম বলেন, মানুষের ভয় ভেঙে গেছে। এটা শাসক দলের প্রশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের বিদ্রোহ। মাফিয়ারাজের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। আসলে কালীঘাটের ফ্র্যাঞ্চাইজি চলছে সর্বত্র। ভেড়ির টাকা, জমি দখলের টাকা, তোলাবাজির সব টাকার একটা অংশ কালীঘাটে যেত। সন্দেশখালির টাকাও কালীঘাটেই আসতো। যে বিডিও অফিসের ভিতরে ঢুকে এই শাহজাহানের বাহিনী খোদ বিডিও-কেই মারধর করেছিল, আবাস যোজনার ভুয়ো তালিকা না করার জন্য সেই বিডিও অফিস চত্বরেই শত শত মহিলারা ঝাঁটা হাতে বিক্ষোভে নেমেছেন আর পালাচ্ছে তৃণমূলের বাহিনী। আসলে মানুষের সাহস বাড়লে মাফিয়ার ঘরে ঢুকে যায়। যে সন্দেশখালিতে ইডি’র আধিকারিকদের ওপর হামলার পরেও শাহজাহান অধরা থাকে, ঘটনার কুড়ি দিন পরে ইডি লোকদেখানো তল্লাশি করতে যায় সেখানে মানুষের এই প্রতিরোধ নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগের ঘটনায় স্পষ্ট আসলে সেটিং আছে, তাই শাহজাহানকে খুঁজে পাওয়া যায় না। শেখ শাহজাহান ধরা পড়লে টান পড়বে কালীঘাটেও, কালীঘাটের কাকুর ফোনের কান কন্ঠস্বর তো এখন স্পষ্ট হলো না! আর এখন যেটা ঘটছে সেই আসল প্রতিরোধের দিনলিপি। আর বিজেপি কী বলবে? শাহজাহান শেক থো শুভেন্দু অধিকারির প্রোডাক্ট।
শুক্রবারই  সিপিআই(এম) জেলা নেতৃত্ব ও বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃত্ব সন্দেশখালিতে যাবেন। তাঁর শাসক তৃণমূলের সন্ত্রাস ও লুটের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত মানুষের সঙ্গে কথা বলবেন। সংহতি জানাবেন এই প্রতিরোধের লড়াইয়ে। সন্দেশখালিতে তীব্র সন্ত্রাস, আক্রমন, মিথ্যা মামলার মুখেও সিপিআই(এম) কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলী লুটের বিরুদ্ধে সেখানে সোচ্চার। 
শুধু সন্দেশখালি নয়, গোটা রাজ্যের এই লুটতন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ তুলে মহম্মদ সেলিম বলেন, শুধু কি ভেড়ি? কয়লা-গোরু-বালি সব টাকার ভাগই তো আসলে যাচ্ছে কালীঘাটে। মমতা ব্যানার্জি জানেন না কেন শেখ শাহজাহান? দিনের পর দিন অত্যাচার চলেছে। তীব্র সন্ত্রাসের পরিবেশ। মানুষের জমি, জায়গা দখল করে চলছে ভেড়ি। মানুষের জমি বেহাত হচ্ছে। জ্যোতিপ্রিয়র টাকা শাহজাহানের বাড়িতে। শাহজাহান শেখের স্বীকারোক্তিতে বিপদে কারা পড়বে তা জানের মুখ্যমন্ত্রী। তাই সে অধরা। কিন্তু সাধারণ মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেলে, সাহসের সঞ্চার হলে কী হাতে পারে তখন প্রশাসন সন্দেশখালিতে টের পাচ্ছে। মহম্মদ সেলিম বলেন, ক্লাসের সবথেকে দুষ্টু বাচ্চাকে যেমন মনিটর করে দেওয়া হয় তেমনি সবথেকে বড় তোলাবাজ, অপরাধী, দুষ্কৃতীকেই মুখ্যমন্ত্রী দলের ব্লক সভাপতি বানিয়ে দেয়। বগটুই গণহত্যায় দেখা গেল ব্লক সভাপতি জানায়নি বলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি জীবন্তু পুড়িয়ে দেওয়ার খবর পেয়েও। দুষ্কৃতী, প্রশাসন এখানেই সব মিলেমিশে যায়। প্রতিরোধ তাই হয় স্বতঃস্ফূর্ত।  
 

Comments :0

Login to leave a comment