গল্প
মুক্তধারা
জানা গল্প — অজানা হ্যালোইন
স্তনিত পাল চৌধুরি
পড়ার গল্প — জীবনের গল্প — আমাদের স্কুল ‘নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন’-এর বাঁধাধরা রুটিনের বাইরে সময় পেলেই গল্পের বই, ম্যাগাজিন ইত্যাদি পড়ার জন্য লাইব্রেরিতে চলে যাই। এরকম নানা পত্রিকা ঘাঁটতে ঘাঁটতে ভুতের উপর লেখা একটা পত্রিকা পেলাম যেখানে বিভিন্ন দেশের ভুতের গল্প যা আজও কিছু লোকে বিশ্বাস করে এবং ভুত নিয়ে নানা উৎসবের গল্প। সেখানে হ্যালোইন সম্পর্কে যা পড়েছিলাম তাই এখানে লিখছি।
হ্যালোইন নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকায় উৎসাহ আর রোমাঞ্চের শেষ নেই। এ নিয়ে অসংখ্য গল্প, উপন্যাস লেখা হয়েছে, বানানো হয়েছে অনেক সিনেমা।
খ্রীস্টান-রা ৩১-শে অক্টোবর হ্যালোইন দিবস পালন করে থাকে। এর উৎপত্তি কোথা থেকে ? কেল্টিক-ভাষা গোষ্ঠির মানুষের কৃষি উৎসব থেকে হ্যালোইনের উৎপত্তি। ৩১-শে অক্টোবর ও ১-লা নভেম্বর ‘সামেন’ উৎসব পালন করত। তীব্র শীতে নিজেদের এবং গবাদি পশুর সুরক্ষার জন্য অপ-দেবতাকে খাদ্য-পানীয় ও ফসলের অংশ উৎসর্গ করত। বাড়ির মৃতদের টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখা হত এবং বিশ্বাস করত এই সময়ে নাকি সদ্য মৃতরা বাড়ি ফিরে আসে। রোমানরা এই সময়ে মৃতদের স্মরণ করে, ‘ফেরালিয়া’ গাছ ও ফলের দেবী পোমো’-কে উপাসনা করে থাকে।
১-লা নভেম্বর পালিত হয় ‘অল হ্যালোজ ডে’, পরের দিন পালিত হয় ‘অল সোলস ডে’, আর ৩১-শে অক্টোবর হল ‘অল হ্যালোজ ইভ’ – এই তিনদিন মিলিয়ে ‘আলহ্যালোটাইড’ বা ‘ অল সেন্টসটাইড’, এছাড়া ঘরে মোম জ্বালিয়ে মৃতদের ঘরে ফিরিয়ে আনাকে ‘সোল লাইট’ বলে।
‘ট্রিক-অর-ট্রিট’এবং ‘জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন' বাচ্চা থেকে বুড়ো সবারই মজার খেলা। আর উৎসব মানে খাওয়া দাওয়া তো চাই, তাই হ্যালোইন কে
ঘিরে কিছু সুন্দর খাদ্য তালিকায় থাকে - বনফায়ার টফি, ক্যান্ডি অ্যাপেল, টফি অ্যাপেল, রোস্টেড পামকিন সিড, হ্যালোইন কেক ইত্যাদি।
মুসলমানদের মধ্যে সবেবরাত পালন করা হয়। সেদিন তারা আগামী দিনের জন্য ভাগ্য নির্ধারণ হয় বলে বিশ্বাস করে , পাপীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। অনেক অঞ্চলে মৃতব্যক্তির প্রতি ক্ষমা ও আত্মার শান্তির জন্য রাত্রিকালীন প্রার্থনা জাগরণ করা হয়।
হিন্দু ধর্মেও এরকম একটা প্রথা আছে। আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষ, আমরা মহালয়া বলে জানি। এই কৃষ্ণপক্ষকে বলা হয় ‘অপরপক্ষ’ কিংবা ‘পিতৃপক্ষ’। পিতৃপক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা ও তর্পণ করা হয়। বিশ্বাস যমালয় থেকে মর্ত্যলোকে এই সময়ে পিতৃপুরুষেরা আসেন, তাদের তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল প্রদান করা হয়। এছাড়া তাদের আগমনের পথকে আলোকিত করার জন্য উল্কাপ্রদান করা হয়। গল্পের কথা — জীবনের প্রথা — সবই গল্প কথা।
Comments :0