অর্পণ সেনগুপ্ত
ভারতীয় ফুটবলের এখন ' হট টপিক ' আনোয়ার আলী । ২০১৭ সালের অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপে খেলা আনোয়ারের ফুটবল জীবনটা খুবই সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গেছে । ১ টা মরশুম মহামেডানে খেলার পরেই তিনি বড়সর চোট পান । ক্যারিয়ার প্রায় শেষ হতে চলা আনোয়ারকে নবজীবন দান করেন তার ' গড ফাদার ' রঞ্জিত বাজাজ। হাসপাতালের খরচা থেকে শুরু করে আনোয়ারের সমস্ত দায়ভার নেন তিনি । রঞ্জিতের ক্লাব দিল্লী এফসি থেকে ২০২৩ এ লোনে ৪ বছরের জন্য সই করেন আনোয়ার মোহনবাগানে । স্বপ্নের মতো একটা মরশুম কাটান সবুজ মেরুনে। ডুরাণ্ড কাপ ও আইএসএল শিল্ড জেতে মোহনবাগান। কিন্তু , মরশুম শেষে গত জুন মাসেই রঞ্জিত বাজাজ টুইট করে জানান যে , আনোয়ারের সাথে মোহনবাগানের চুক্তি টার্মিনেট হয়ে গেছে , তাই এখন তিনি ফ্রি প্লেয়ার। যে কোনো ক্লাবই তাকে নিতে পারে । এইখান থেকেই ঝামেলার সূত্রপাত ।
তার এই টুইট দেখেই নড়েচড়ে বসে মোহন ম্যানেজমেন্ট। কারণ নিয়ম মেনেই তারা আনোয়ারের সাথে লোন চুক্তি করেছিল ৪ বছরের । ফিফার নিয়মানুযায়ী, ২০২২ থেকে কোনো ক্লাবই কোনো ফুটবলারের সাথে ১ মরশুমের বেশি লোন চুক্তি করতে পারবেনা । ১ মরশুম পরে সেটা নিজে থেকেই টার্মিনেট হয়ে যাবে । এই নিয়মের যুক্তিই দেখাচ্ছিলেন রঞ্জিত বাজাজ। কিন্তু পাল্টা যুক্তি মোহনবাগানের। ২০২২ থেকে ফিফা এই নিয়ম চালু করলেও অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন ( AIFF ) এই নিয়ম এখনো চালু করেনি । ফিফার তরফ থেকে এই বিষয়ে ছাড় দেওয়া হয়েছিল বেশ কিছু দেশের ফুটবল ফেডারেশনকে অন্তত তিন মরশুমের জন্য । অর্থাৎ ২০২৫ এর জানুয়ারির মধ্যেই এ আই এফ এফ - কে এই নিয়ম চালু করতেই হবে। তাই এখনো পর্যন্ত ভারতীয় ফুটবলের নিয়মানুযায়ী মোহনবাগান কোনো নিয়মবহির্ভূত কাজ করেনি । ঘটনাটি নিয়ে বেশ কিছুদিন টানাপোড়েনের পরে কেসটি কোর্টে উঠলে সেটির দায়ভার পরে প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটির উপরে ( PSC ) । আজ অর্থাৎ ২ আগষ্ট পি এস সি এবং এ আই এফ এফ আনোয়ারের ব্যাপারে বৈঠকের পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু , এর ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে আনোয়ারের ফুটবল ক্যারিয়ার । এরই মাঝে এই বিষয়ে জড়িয়ে পড়েছে ইস্টবেঙ্গলও। ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার ওরফে নিতু সরকার হরিয়ানায় গিয়ে আনোয়ারের সাথে সইপর্ব সেরে ফেলেছেন । কিন্তু, আনোয়ার জানিয়েছন যে তিনি কোনো ক্লাবেই সই করেননি। পি এস সি এর তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় যে আনোয়ারের কথা সঠিক নয় । তাহলে ৬ মাসের জন্য নির্বাসিত হতে পারে আনোয়ার এবং তার প্যারেন্ট ক্লাব দিল্লী এফসিও পেতে পারে ২ মরশুমের ট্র্যান্সফার ব্যান । ইস্টবেঙ্গলে আনোয়ারের চুক্তিটি যদি অনৈতিক প্রমাণিত হয় তাহলে ইস্টবেঙ্গলও পেতে পারে ২ মরশুমের ট্র্যান্সফার ব্যান। এরই মধ্যে আনোয়ারকে কলকাতা লিগ ও ডুরাণ্ড কাপের জন্য রেজিষ্টার করিয়েছে মোহনবাগান । তাকে ২৯ তারিখে প্র্যাকটিসে জয়েন করার কথা বললেও তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। এই বিষয়েও আনোয়ারেকে জরিমানা দিতে হতে পারে মোহনবাগানকে । সবমিলিয়ে দিল্লী এফসির কাছে আনোয়ারের জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা জরিমানা দাবি করতে পারে মোহনবাগান । মোহনবাগানের তরফ থেকে এন ও সি না দেওয়া পর্যন্ত আনোয়ার কোনো ক্লাবেই খেলতে পারবেননা। তাই তার ক্যারিয়ার এখন বিশবাঁও জলে। এখন বল পুরোটাই মোহনবাগানের কোর্টে।
এর আগে এই ঘটনা ঘটেছিল টোলগে ওজবের ক্ষেত্রেও। অস্ট্রেলিয়ান এই তারকা স্ট্রাইকার সেই সময় ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দুর্দান্ত দুটি মরশুম কাটিয়ে সই করেছিলেন মোহনবাগানে। কিন্তু তার সইটি অন্যায্য বলে দাবি করেছিল ইস্টবেঙ্গল। ঝামেলাটা হয়েছিল মূলত টোকেন নিয়ে । ইস্টবেঙ্গল টোকেন না দিলে কোনো ক্লাবের হয়েই আর মাঠে নামতে পারতেননা টোলগে । তাই প্রায় তিন মাস ধরে চলা এই নাটকের যবনিকা নেমেছিল পিএসসি র মাধ্যমে । পি এস সি টোলগের থেকে জানতে চেয়েছিল যে তিনি কোন ক্লাবে খেলতে আগ্রহী। জবাবে মোহনবাগানের কথা বলায় সেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেছিল। কিন্তু আনোয়ারের এই ব্যাপারটি আরো জটিল । তাই আজ পি এস সি থেকে ন্যায়বিচারের আশায় গোটা ভারতীয় ফুটবল।
Comments :0