Vandalism in North Bengal Medical College

এবার ভাঙচুর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেও

রাজ্য

মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে আবার রোগীর পরিবারের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতাল সুপারের অফিসে ভাঙচুর এবং নিরাপত্তারক্ষীকে মারধর করারও অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় দুই মহিলা সহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে, এদিনই জলপাইগুড়ি জেলার সদর ব্লকের মণ্ডলঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের ফান্দাইতপাড়া এইচডব্লিউসি’তে কর্মরত মহিলা কমিউনিটি হেলথ অফিসারকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার ঘটনা ঘটেছে। 
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যখন তোলপাড় গোটা রাজ্য, চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা সহ একাধিক দাবিতে কর্মবিরতি, অনশন করে চলেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা, তখন সরকার কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দেওয়ার কথা মুখে বললেও আদতে তা যে কিছুই হয়নি আরও একবার প্রমাণিত হলো।  
মঙ্গলবার সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে ভাঙচুরের এই ঘটনায় উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার ন্যায়বিচার সহ ১০দফা দাবিতে গোটা রাজ্যের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও চলছে জুনিয়র চিকিৎসকদের অনশন ৷ তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে আইএমএ’র ডাকে কর্মবিরতি পালন করছেন সিনিয়র চিকিৎসকরাও। যার জেরে হাসপাতালের রোগী পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে বলে অভিযোগ জানায় রোগীর পরিবারের লোকজন। অন্যান্য বহির্বিভাগ এবং জরুরি পরিষেবা সিনিয়র ডাক্তাররা চালু রাখলেও মানসিক রোগ বিভাগের বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল এদিন। 
রোগীদের অভিযোগ, মনোরোগ বিভাগ, স্নায়ু বিভাগে মিলছে না কোনও পরিষেবা। অভিযোগ, দু’দিন ধরে চিকিৎসা করাতে এসে মিলছে না পরিষেবা। মিলছে না অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ। এদিন পরিষেবা না দেওয়ার অভিযোগ তুলে প্রথমে উত্তেজনা ছড়ায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বিভাগে। তারপর দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন মহিলারা। ওষুধ না পাওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা। হাসপাতাল সুপারের অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়। এমনকি, হাসপাতালে কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন রোগীর আত্মীয়রা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে।
অভিযোগ, মানসিক রোগের ওষুধ না খাওয়ায় তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। পরে ক্ষিপ্ত রোগীরা হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখান ও পরে সেখানে ভাঙচুর চালান। ঘটনার খবর পেয়ে মেডিক্যাল কলেজের আউটপোস্টের পুলিশ সেখানে পৌঁছে তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। 
এই ঘটনা প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার সঞ্জয় মল্লিক বলেন, “চিকিৎসকদের পেনডাউন চলছে, কাজেই ডাক্তার নেই। রোগীদের অভিযোগ থাকতেই পারে। তবে ওষুধ নেই, এমন অভিযোগ আগে কখনও পাইনি।”
উল্লেখ্য, গত রবিবার সকালে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। হাসপাতালে উইকেট, হকি স্টিক নিয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ ওঠে কয়েক জনের বিরুদ্ধে।
এদিকে, এদিন জলপাইগুড়ির ফান্দাইতপাড়া এইচডব্লিউসি’তে আয়ুব আলি নামে একজন দুষ্কৃতী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রবেশ করে একা থাকার সুযোগে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। চিৎকার করলে আসে আশপাশের মানুষ ছুটে আসেন। সিএইচও’র পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এফআইআর করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিন ওয়েস্ট বেঙ্গল নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদিকা পাপিয়া মুখোটি বলেন, রাজ্যজুড়ে কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার বাস্তব পরিস্থিতি কেমন তা এই ঘটনা আবার প্রমাণ করল। সদর ব্লকের ফান্দাইতপাড়া সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কমিউনিটি হেলথ অফিসারকে নিগৃহীত করে তাঁকে শারীরিকভাবে আক্রমণ করার ঘটনার তীব্র ধিক্কার জানান তিনি। ঘটনার বিবরণ জানিয়ে আক্রান্ত নার্সিং স্টাফ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সহ স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভিন্ন আধিকারিককে বিষয়টি জানিয়েছেন। ঘটনা জানাজানি হতেই অভিযুক্ত গা-ঢাকা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

Comments :0

Login to leave a comment