General elections 2024

পূর্ণাঙ্গ ভোট-তথ্যের দাবিতে কমিশনকে চিঠি ইয়েচুরির

জাতীয় লোকসভা ২০২৪

  ভোট দানের চূড়ান্ত হার প্রকাশ্যে জানানোর কাজে নির্বাচন কমিশনের বিস্ময়কর দেরি এবং অসঙ্গতিতে গভীর উদ্বেগ জানালেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। শুক্রবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারকে একটি চিঠি লিখে তিনি বলেছেন, কমিশনের এই বেনজির আচরণে বিভিন্ন মহলে নানান সন্দেহ তৈরি হয়েছে। স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার স্বার্থে অবিলম্বে সর্বসমক্ষে পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানিয়ে সব সন্দেহ নিরসন করতে হবে কমিশনকে। এদিকে নির্বাচন কমিশনের এই রহস্যজনক আচরণে ক্ষোভ জানিয়েছে সংযুক্ত কিষান মঞ্চও। দেশবাসীর কাছে দ্রুত বিস্তারিত তথ্য জানানোর জন্য কমিশনের উদ্দেশে দাবি তুলেছে তারা।
ইয়েচুরি তাঁর চিঠিতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে লিখেছেন, ‘‘লোকসভার প্রথম দফা নির্বাচনে ভোট পড়ার হারের চূড়ান্ত হিসাব জানাতে কমিশন যেভাবে দীর্ঘ ১১ দিন অযৌক্তিক এবং ব্যাখ্যাহীন দেরি করেছে তা সত্যিই বিস্ময়কর।’’ 
সিপিআই(এম) নেতা লিখেছেন, ‘‘কেন এই অনুচিত দেরি হলো, দুঃখজনকভাবে তার কোনও ব্যাখ্যা দেয়নি ভারতের নির্বাচন কমিশন। কমিশনের প্রাথমিক তথ্যের তুলনায় চূড়ান্ত তথ্যে ভোটের হার কিভাবে ৬ শতাংশ বেড়ে গেল, তারও কোনও জবাব মেলেনি। প্রাথমিক এবং চূড়ান্ত হিসাবের মধ্যে সামান্য কিছু হেরফের হওয়া স্বাভাবিক; কিন্তু একেবারে ৬ শতাংশের ফারাক যথেষ্ট অস্বাভাবিক এবং এতে বেশ কিছু সন্দেহও তৈরি হয়েছে। আরও নজর করার ব্যাপার, কমিশন ভোট পড়ার চূড়ান্ত হার জানিয়েছে বটে কিন্তু ভোটের সংখ্যা (মোট কত সংখ্যক ভোট পড়েছে) প্রকাশ্যে আনেনি এখনো।’’
‘‘গোটা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতার স্বার্থে এব্যাপারে সমস্ত সন্দেহ নিরসনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের’’, রাজীব কুমারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, ‘‘এজন্য রাজ্য ভিত্তিক, লোকসভা কেন্দ্র ভিত্তিক ও বিধানসভা কেন্দ্র ভিত্তিক প্রাথমিক ও চূড়ান্ত হিসাবের বিস্তারিত এবং অবশ্যই প্রদত্ত ভোটের মোট সংখ্যা অবিলম্বে প্রকাশ করা উচিত কমিশনের। একইসঙ্গে ইভিএম, পোস্টাল ব্যালট এবং ভোটকর্মীদের জন্য বিশেষ কেন্দ্র—  কোথায় কত ভোট বেড়েছে তার হিসাবও বিস্তারিতভাবে প্রকাশ্যে আনা দরকার।’’ 
প্রসঙ্গত, ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ হয়েছে যথাক্রমে গত ১৯ এবং ২৬ এপ্রিলে। সাধারণভাবে ভোটগ্রহণ পর্বের পরপরই নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোট পড়ার হার ঘোষণা করে দেওয়াই দস্তুর। কিন্তু এবারে রহস্যজনক কারণে ভোটের তথ্য প্রকাশ করছিল না কমিশন। কমিশনের এই আচরণের সমালোচনা করে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এহেন ঢিলেমির পেছনে কারচুপির আশঙ্কাও প্রকাশ করেন। সমালোচনার শুরু হয় অন্যান্য মহলেও। সব মিলিয়ে চাপে পড়ে প্রথম দফার ১১ দিন এবং দ্বিতীয় দফার ৪ দিন বাদে ভোট পড়ার চূড়ান্ত হার প্রকাশ করে কমিশন। জানানো হয়,প্রথম দফায় ৬৬.১৪ শতাংশ এবং দ্বিতীয় দফায় ৬৬.৭১ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে আগের অনুমিত হারের তুলনায় এই হিসেব প্রায় ৬ শতাংশ বেশি হওয়ায় এবং আসনভিত্তিক প্রদত্ত মোট ভোট ও হারের উল্লেখ না থাকায় ফের আরেকদফা আশঙ্কা প্রকাশ করে বিরোধী দলগুলি।
উল্লেখ্য, বাকি আরও পাঁচ দফা ভোট হবে ৭, ১৩, ২০, ২৫ মে এবং ১ জুন।
এদিকে যথাযথভাবে ভোট-তথ্য প্রকাশে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতায় জোরালো উদ্বেগ জানিয়েছে দেশের ১১ কোটি কৃষক এবং ১৩.৫ কোটি কৃষি শ্রমিকের প্রতিনিধিত্বকারী সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘সংযুক্ত কিষান মঞ্চ’। শুক্রবার এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, দু’দফার ভোট গ্রহণের বহুদিন পরেও কেন্দ্রভিত্তিক মোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা জানায়নি কমিশন। তাছাড়া অনুমিত হিসাবের তুলনায় চূড়ান্ত তথ্যে ভোটের হার ৫.৭৫ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার ঘটনাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে এব্যাপারে যাবতীয় সন্দেহ নিরসন করা উচিত নির্বাচন কমিশনের।
গুজরাটের সুরাট এবং মধ্য প্রদেশের ইন্দোরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মনোনয়ন বিকৃত করা সত্ত্বেও শাসকদল সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের নীরবতায় ক্ষোভ জানিয়েছে সংযুক্ত কিষান মঞ্চ। তারা বলেছে, এই প্রবণতায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিজেপি’র চরম অবমাননা ও স্বৈরাচারী দৃষ্টিভঙ্গি এবং নির্বাচন কমিশনের অসহায় আত্মসমর্পণের ঘটনাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কৃষকদের সর্ববৃহৎ সংগঠনের বিবৃতিতে এদিন স্পষ্ট অভিযোগ করা হয়েছে, ভোট-প্রচারে বারবার বিদ্বেষ-ভাষণ দিয়েও নির্বাচন কমিশনের কাছে ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপি নেতারা। অথচ সংযুক্ত কিষান মঞ্চের তরফে কমিশনকে বলা হয়েছিল, কোন আইন ভঙ্গকারী ব্যক্তি অতি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদ দখল করে থাকলে তাতে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মোদীকে অপসারণ এবং পরের ছ’বছর নির্বাচনে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতার অধিকার কেড়ে নেওয়া উচিত কমিশনের। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আজ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে ন্যূনতম একটি নোটিসও ধরাতে ব্যর্থ হয়েছে। এব্যাপারে দেশের সুপ্রিম কোর্টের স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা দরকার বলে মন্তব্য করেছে সংযুক্ত কিষান মঞ্চ।   
 

Comments :0

Login to leave a comment