AIPSO STATE CONFERENCE

শান্তি আন্দোলনকে বিস্তারের আহ্বাণ এআইপিএসও’র চতুর্থ রাজ্য সম্মেলনে

রাজ্য কলকাতা

AIPSO ISRAEL PALESTINE CONFLICT BENGALI NEWS STATE CONFERENCE

‘‘আমাদের শান্তি মিছিলে সিন্ধু চলমান, যুদ্ধ-খোর সভ্যতার শত্রুরা সাবধান’’। মানবতার শত্রু যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তি রক্ষার প্রশ্নে, এই হুঁশিয়ারির বার্তা দিয়ে  রবিবার সুবর্ণ বণিক সমাজ হলে সম্পন্ন হলো ’সারাভারত শান্তি ও সংহতি সংস্থা’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির  চতুর্থ সম্মেলন। চতুর্থ রাজ্য সম্মেলনের নগরের নাম করন করা হয়েছিল  প্যালেস্তাইনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে( প্যালেস্তাইন সংহতি নগর),ও মঞ্চের নামকরণ করা হয়েছিল প্রয়াত তরুণ মজুমদার, ওয়াসিম কাপুর ও গীতেশ শর্মা’র নামে। এদিন সকালে সংগঠনের পতাকা উত্তোলন ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মধ্যদিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়। পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব রবীন দেব। 

সম্মলেনের উদ্ধোধন করেন বিশিষ্ট চিত্র সমালোচক, অধ্যাপক শমিক বন্দোপাধ্যায়। তিনি সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে বলেছেন,  যে কোনও যুদ্ধের পিছনে থাকে এক শ্রেণীর মানুষের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক থেকে  বিভিন্ন ভাবে ফায়দা তোলার অভিসন্ধি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সাম্রাজ্য লোভী থেকে বৃহৎ পুঁজিপতি ও কর্পোরেট সংস্থাও নিজের স্বার্থের লক্ষ্যে যুদ্ধে মদত দেয়, যুদ্ধ উন্মাদনা তৈরি করে , যুদ্ধ জিইয়ে রাখতে চায়। এই যুদ্ধ উন্মাদনা তৈরির পিছনে একটা বড় অংশের সংবাদ মাধ্যমেরও ভুমিকার সমালোচনা করেছেন অধ্যাপক বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন যুদ্ধবাজরা মিডিয়ার দখল নিয়েছে, যুদ্ধ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক স্বার্থেই বর্তমানের বিভিন্ন সংবাদ পত্র কাজ করে চলেছেন। যুদ্ধ হওয়া মানেই পুঁজিপতি , কর্পোরেট, ফড়ে রাজের রমরমা। 

সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে এআইপিএসও’র অন্যতম সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হরচরণ সিং ভাট বলেন,   বেশিরভাগ মানুষ শান্তির পক্ষেই,  কিন্তু কিছু মানুষ  বিভিন্ন স্বার্থে এই যুদ্ধ বাধায়, তাই শান্তির প্রশ্নে মানুষকে একজোট হতে হবে। মানুষ একজোট হলেই যুদ্ধ বাজরা ভয় পায়। তিনি প্যালেস্তাইনের যুদ্ধ বিদ্ধস্ত  পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলেছেন, ইজরায়েলের এই নারকীয় হামলার নিন্ধায় সরব হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শান্তিকামী মানুষ। প্যালেস্তাইন বাসীর স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পক্ষেও বহু দেশ , তবে আমেরিকা সহ কিছু দেশ সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র নিয়ে ও এই যুদ্ধে মদত যোগাচ্ছে। প্যালেস্তাইনে যা হচ্ছে তা শতাব্দীর অন্যতম বৃহৎ গণহত্যা । এই নারকীয় হত্যালীলারা বিরুদ্ধে শান্তির প্রশ্নে বড় ভুমিকা এআইপিএসও পালন করবে বলেই  আশা প্রকাশ করেছেন সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক।  

এদিন সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের অন্যতম সর্বভারতীয় নেতা নিলোৎপল বসু। তিনি বলেছেন, ইজরায়েল রাষ্ট্র সাম্রাজ্যবাদ এবং জায়নবাদ উভয়ের প্রতিনিধিত্ব করে। ইজরায়েলী ইতিহাসবিদ ইলান পাপ্পের লেখাতেও সেই বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি বলেছেন, প্যালেস্তিনীয়দের গণহত্যা করছে ইজরায়েল। সাম্প্রতিক সময়ে সেই ছক আরও স্পষ্ট হয়েছে। তারফলে সমস্ত পশ্চিমী  দেশগুলির পক্ষেও সবক্ষেত্রে ইজরায়েলকে সমর্থন করা সম্ভব হচ্ছেনা। ইজরায়েল রাষ্ট্রসংঘের নির্দেশ মানছে না। ইউএনআরডাব্লিউএ’র মত সংস্থাকে কাজ করতে দিচ্ছেনা। এর বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব জুড়ে জনমত গড়ে উঠছে। পশ্চিমী বিশ্বের এমন কোনও বড় শহর নেই, যেখানে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে মিছিল সমাবেশ হয়নি। 

বসু বলেছেন, সাম্রাজ্যবাদ জায়নবাদকে পুষ্ট করছে। এটা প্রতিদিন স্পষ্ট হচ্ছে। সেই পরিস্থিতি গোটা বিশ্বের মানুষকে পথ নামাচ্ছে। এরফলে শান্তি আন্দোলনের সামনে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এরসঙ্গে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের অধিকার বোধের দাবিকে, পরিবেশের দাবিকে, কর্পোরেট লুটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে যুক্ত করতে পারলে শান্তি আন্দোলনের ‘মরা গাঙে’ নতুন করে বাণ আসতে পারে। 

উপস্থিত ছিলেন বিনায়ক ভট্টাচার্য, প্রবীর ব্যানার্জি প্রমুখ।  এদিন সম্মেলন মঞ্চ থেকে   স্বাধীন ও সার্বভৌম প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠন, সামরিক জোট ন্যাটোর অবিলম্বে বিলুপ্তি, স্বাধীন বিদেশ নীতিতেই জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা , সংবিধানের ধর্ম নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক  চরিত্র রক্ষা করা, পশ্চিমবঙ্গের ধর্ম নিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য রক্ষা করা সহ ৬ টি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সম্মেলনে সম্পাদকীয় খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেন বিদায় রাজ্য কমিটির সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক অঞ্জন বেরা। খসড়া প্রতিবেদনের ওপর ২৬জন প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ নেন।  

জবাবী ভাষণে রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক অঞ্জন বেরা বলেন, শান্তি আন্দোলন কেবল যুদ্ধ হলে পথে নামেনা। কর্পোরেট সাম্রাজ্যবাদ যেখানে যেখানে হস্তক্ষেপ করে, সেখানেই অস্থিরতা তৈরি হয়। সেই অস্থিরতা ভবিষ্যতে সামরিক সংঘাতের জন্ম দেয়। সামরিক সংঘাত এড়াতে শান্তি আন্দোলনকে হস্তক্ষেপ করতে হবে অস্থিরতা ঠেকাতে। তারফলে টেলিকম, ব্যাঙ্ক, বিমা কর্মচারীদের আন্দোলন থেকে শুরু করে কৃষক আন্দোলন- সমস্ত কিছুর সঙ্গে শান্তি আন্দোলন সম্পৃক্ত। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে আমরা সংবিধানের মৌলিক আদর্শগুলি পেয়েছি। সামাজিক ন্যায়ের ধারণা পেয়েছি। কিন্তু কর্পোরেট ও উগ্র জাতীয়তাবাদের মিশেলের রাজনীতি সেটাকে ছিনিয়ে নিতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তুলতে এআইপিএসও’র অন্তর্গত সমস্ত সংগঠনগুলির নিজস্ব লড়াইয়ের পুঞ্জিভূত অভিজ্ঞতাকে নিয়ে এগোতে হবে। 

নতুন কমিটির নাম প্রস্তাবের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন রবীন দেব। তিনি বলেন, গাজায় সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পরে ভারতের মাটিতে সবার আগে তৎপর হওয়া সংগঠনগুলির অন্যতম হল এআইপিএসও। রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষের সময়েও সবার আগে পথে নেমেছিল এআইপিএসও। মনে হতেই পারে, সারা বিশ্বে প্যালেস্তাইন সংহতিতে যে আন্দোলনগুলি হচ্ছে তার কোনও প্রভাব পড়ছে না। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। বরং জনমতের চাপ ইজরায়েল এবং আমেরিকাকে বাধ্য করছে আগ্রাসনের পথ থেকে পিছু হটতে। এই চাপ বজায় রাখতে হবে। 

সম্মেলন পরিচালনা করেছেন রবীন দেব, সমর চক্রবর্তী, তরুণ পাত্র, কাজি-কামাল- নাসের, শ্রাবনী সেনগুপ্ত ও শ্যামাশ্রী দাস কে নিয়ে গঠিত সভাপতি মন্ডলী। চতুর্থ রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন অঞ্জন বেরা, বিনায়ক ভট্টাচার্য এবং প্রবীর ব্যনার্জি। এর পাশাপাশি রবীন দেব, অশোকনাথ বসু, তরুণ পাত্র, সমর চক্রবর্তী, বিপ্লব মজুমদার, কুসুম জৈন, শোভনলাল দত্তগুপ্ত, সুস্নাত দাস, মনোজ ভট্টাচার্য সহ ১১জনকে নিয়ে সভাপতিমন্ডলী গঠিত হয়েছে। কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন কুণাল বাগচী। 

Comments :0

Login to leave a comment