Siliguri TMCP Leader

চাকরির লোভ দেখিয়ে মহিলাকে কুপ্রস্তাব তৃণমূল ছাত্র নেতার, শিলিগুড়িতে বিক্ষোভ

রাজ্য জেলা

সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক বিবাহিত মহিলাকে অশালীন মেসেজ করার অভিযোগে শিলিগুড়ি মহকুমার বাগডোগরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতিকে। সোমবার রাতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি তনয় তালুকদারকে গ্রেপ্তার করে বাগডোগরা থানার পুলিশ। অভিযোগ, কুরুচিপূর্ন মেসেজ পাঠিয়ে মহিলাকে চাকরির প্রলোভন দিয়েছিলো ধৃত ওই তৃণমূলী ছাত্র নেতা। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি ধৃত নেতা দীর্ঘদিন ধরেই এভাবে মহিলাকে উত্যক্ত করছিলো। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় শিলিগুড়ি সংলগ্ন লোয়ার বাগডোগরা এলাকায়। 
অভিযোগ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি তনয় তালুকদার বাগডোগরার ক্ষুদিরামপল্লী এলাকার বাসিন্দা মহিলাকে প্রথমে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেবার জন্য প্রস্তাব দেয়, পরে তৃণমূল দল করার পরিবর্তে ওই মহিলাকে চাকরির প্রতিশ্রুতি দেয়। তারও পরবর্তীতে মহিলাকে ধারাবাহিকভাবে হোয়াটসঅ্যাপে কুরুচিপূর্ন মেসেজ পাঠিয়ে কুপ্রস্তাব দিতে শুরু করে। নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয় মহিলাকে। প্রথমে বিষয়টি সম্পর্কে কাউকে কিছু না জানালেও পরিস্থতি ক্রমশই জটিল হতে থাকলে সোমবার মহিলা তাঁর স্বামীকে বিষয়টি জানান। জানা গেছে, এরপরেই সোমবার গোটা ঘটনা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা নীরেন রায়ের বাড়িতে সালিশী সভাও বসে। কিন্তু সালিশী সভায় বেশ কিছু তৃণমূলের লোকজন মহিলার স্বামী ও বাকিদের ওপর চড়া হয়। এরপরেই স্ত্রীর মোবাইল ফোনে সমস্ত অশালীন মেসেজ দেখতে পেয়ে তনয় তালুকদারকে হাতে পেয়ে ব্যাপক মারধোর করে মহিলার স্বামী। একরকম দলবেঁধে মারধরের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। স্থানীয় বাসিন্দারাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। খবর পেয়ে বাগডোগরা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তৃণমূলী ছাত্র নেতাকে আটক করে। 
আরো জানা গেছে, লোয়ার বাগডোগরা পঞ্চয়েতের তৃণমূলী প্রধান বীথি তালুকদারের স্বামী ধৃত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি তনয় তালুকদার। পঞ্চায়েত প্রধান হিসেবে মনোনীত হবার পরেই সরকারি চাকরি সূত্রে বীথি তালুকদার দক্ষিণবঙ্গে থাকেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরির লোভ দেখিয়ে অশ্লীল মেসেজে মহিলাকে কুপ্রস্তাব দেওয়ার গোটা ঘটনা জানিয়ে রাতেই ওই মহিলা বাগডোগরা থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে অভিযোগ দায়ের করার পরে মহিলাকে থানা থেকে কোনরকম রিসিড দেওয়া হয়নি বলে জানা যাচ্ছে। সোমবার অনেক রাতে অভিযুক্তকে থানা থেকে ছেড়েও দিয়েছে পুলিশ। ঘটনা জানাজানি হতেই মঙ্গলবার দফায় দফায় বাগডোগরা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষ। স্থানীয়রা অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র নেতাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন। অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি তনয় তালুকদারের বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে বাগডোগরা থানায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন ছাত্ররা। 
এসএফআই দার্জিলিঙ জেলা কমিটির পক্ষ থেকে এদিন বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি বাগডোগরা থানার ওসি’র হাতে স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে কেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে সেই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখান ছাত্র নেতৃত্ব। অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা। কর্মসূচিতে ছিলেন সংগঠনের দার্জিলিঙ জেলা সভাপতি তন্ময় অধিকারী, সম্পাদক অঙ্কিত দে, সম্রাট সাহা সহ অন্যান্যরা।
এদিকে বিবাহিত মহিলাকে জোর করে তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা, সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখানো, কুপ্রস্তাব দেওয়া ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক কুকীর্তির কথা চাউর হতেই ব্যাপক অস্বস্তিতে পড়েছে জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। যদিও এবিষয়ে দার্জিলিঙ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ কোন মন্তব্য করতে চাননি। সমগ্র ঘটনা প্রসঙ্গে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি বিশ্বচাঁদ ঠাকুর বলেন, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment