‘আমি দেশের জনগণের কাছে বিচার চাইছি’। বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনায় সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে এই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণকে তাদের বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায় বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার মতো আমার আর কোনো ভাষা নেই।’ প্রধানমন্ত্রী এদিন মীরপুরে মেট্রো রেলস্টেশন পরিদর্শনে যান। সেখানে আন্দোলনকারীরা যে ক্ষয়ক্ষতি করেছে, তা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করেন শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কার আন্দোলন করে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদের প্রতিহত করার ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, বুধবার বুধবার নিজের দফতরে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত মুখোমুখি আলাপচারিতায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক এবং বরিষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। হাসিনা সরাসরি অভিযোগ করেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের অশান্তি, হিংসার পিছনে বিএনপি এবং জামার আছে। তিনি বলে, বিএনপি-জামাত আমাদের নির্বাচন করতে দিতে চায়নি। কিন্তু আমরা নির্বাচন করেছি। নির্বাচনের পর আমরা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছি। আমরা সরকার গঠন করেছি। তার পরেই আঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এর আগে ২০১৩-১৪ সালেও ভোটের পর একই ছকে বিএনপি-জামাত অশান্তি বাধিয়েছিল বলে অভিযোগ করে হাসিনার বলেন, শয়ে শয়ে মানুষ সেই সময় হিংসায় নিহত হয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার দুঃখ লাগে, ২০১৮সালে যখন ছাত্ররা কোটাবিরোধী আন্দোলন করল, আমি সঙ্গে সঙ্গে সেটা মেনে নিয়ে কোটা বাতিল করে দিলাম। এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার থেকে মামলা করা হলো। সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তি হাইকোর্টে বাতিল হলো। সেটার বিরুদ্ধে সরকার আপিল করল। সেই সময়ে হাইকোর্টের রায়কে স্থিতাবস্থা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট একটা সময় দিলেন। এই সময়ের মধ্যে সবার বক্তব্য শুনে তাঁরা একটা সিদ্ধান্ত দেবেন। আমি কোটা আন্দোলনকারী থেকে শুরু করে দেশবাসীকে বললাম, একটু ধৈর্য ধরতে হবে। এটা তো সরকার আপিল করেছে, তাদের হতাশ হতে হবে না। সেই আশ্বাস দিয়ে তাদের বললাম বিরত থাকতে। একটু ধৈর্য ধরতে। যে কোনো নগারিককেই তো আইন–আদালত মেনে চলতে হবে। আর এ সুযোগ নিয়ে সেই ১৭ জুলাই থেকে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হলো।’
শেখ হাসিনা এদিন আওয়ানি লিগ সরকারের কাজের বিস্তারিত ফিরিস্তি দিয়ে বলেন, ‘পঁচাত্তরের পর ২৯ বছর এই দেশের মানুষ বঞ্চিত ছিল। সেখান থেকে আওয়ামি লিগ সরকারে এসে খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, রাস্তাঘাট, পুল-ব্রিজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে গত ১৫ বছরে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘এগুলো কাদের জন্য? এই মেট্রো রেলে কি আমি চড়ব? আমাদের সরকার ও মন্ত্রীরা শুধু চড়বে, না জনগণ চড়বে, এটা আমার প্রশ্ন। এর উপকারিতা আপনারা পাচ্ছেন। এ দেশের সাধারণ জনগণ পাচ্ছে। তাহলে এটার ওপর এত ক্ষোভ কেন?’ এরপরেই তিনি কোটা আন্দোলনকে পুঁজি করে যারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তাদের প্রতিহত করারও আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই মেট্রো রেল করার সময়ও অনেক বাধাবিঘ্ন আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছিল। সব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে এই মেট্রোরেল আমরা করে দিয়েছি এবং সময়ের আগেই আমরা করতে পেরেছি। আজ মেট্রো রেল বন্ধ। কারণ, এই স্টেশন সেভাবে ধ্বংস হয়েছে, যেটা সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও ইলেকট্রনিক সিস্টেম, সম্পূর্ণ আধুনিক। এটা কত দিনে ঠিক হবে আমি জানি না। কষ্ট পাবে কিন্তু মানুষ।’
প্রধানমন্ত্রী মেট্রো রেল ক্ষতিগ্রস্ত করার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘এতে আপনারাই কষ্ট পাবেন। দেশের মানুষই কষ্ট পাবে। এই ঢাকা শহরের মানুষই কষ্ট পাবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আবার ট্রাফিক জ্যামে পড়ে থাকতে হবে। কর্মস্থলে সময়মতো পৌঁছানো আবার ফেরত আসায় দীর্ঘ সময় লাগবে। বসে বসে সেই ট্রাফিক জ্যামে কষ্ট পাওয়া থেকে আপনাদের এই কষ্ট লাঘব করতে চেয়েছিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘তাই আমি আপনাদেরকেই বলব, যে কষ্ট আমি লাঘব করতে চেয়েছি, সেই কষ্ট আবার যারা সৃষ্টি করল, তাদের বিরুদ্ধে আপনাদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে। দেশবাসীকেই রুখে দাঁড়াতে হবে। এর বিচার তাদের করতে হবে। আমি তাদের কাছেই বিচার চাই।’
Bangladesh PM Sheikh Hasina
জনগণের কাছে ধ্বংসের বিচার চাইলেন হাসিনা
×
Comments :0