BJP USES CENTRAL AGENCIES

অপরাধী ধরে না, দলে টানে বিজেপি

জাতীয় বিশেষ বিভাগ

BJP TMC CPIM ABHISHEK BANERJEE CBI ED ADANI BENGALI NEWS

অনিন্দ্য হাজরা  

 

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান ছিল, ‘‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা।’’ ২০২৩ সালে এসে সেটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, আমার সঙ্গে থাকলেই একমাত্র খাওয়ার সুযোগ পাবে। নইলেই ইডি কিংবা সিবিআই।  

এরাজ্যে সারদা, নারদা, নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা পাচার, গরু পাচার, বালি পাচার সহ একঝাঁক দুর্নীতির তদন্ত করছে ইডি, সিবিআই’র মত কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীরা। কিছু ক্ষেত্রে প্রায় এক দশক ধরে তদন্ত চললেও নিট ফল শূন্য। সেই সুযোগে অভিষেক ব্যানার্জির মতো দুর্নীতি কান্ডে প্রধান অভিযুক্তরা ইডি কিংবা সিবিআই তদন্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পাচ্ছেন। 

এই রাজ্যে সমস্ত দুর্নীতির তদন্ত হচ্ছে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে। অন্যান্য বিরোধী শাসিত রাজ্যে সামান্য দুর্নীতির ‘গন্ধ’ পেলেই ইডি কিংবা সিবিআই পাঠিয়ে থাকে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে গল্প সম্পূর্ণ ভিন্ন। হাইকোর্টের প্রশ্নে নিরুত্তর থাকতে হচ্ছে ইডি এবং সিবিআই’কে। অভিষেক ব্যানার্জির মতো নেতাদের জেরা হচ্ছে, ফের ৩ অক্টরোবর ডেকেছে ইডি, কিন্তু যোগ্যদের রাস্তায় বসিয়ে টাকার বিনিময়ে চাকরির অপরাধের কিনারা হচ্ছে না। 

সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘এক লুটেরা কখনও আরেক লুটেরাকে ধরে না। কেন্দ্রে এবং বিভিন্ন রাজ্যের সরকারে আসীন বিজেপি-ও লুটের জন্য দায়ী।’’ তদন্তের ঢিলেমির জন্য কলকাতা হাইকোর্টে পরপর প্রশ্নের মুখে পড়ছে কেন্দ্রের তদন্তকারীরা। প্রধানমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে সেলিম বলেছেন, ‘‘কার নির্দেশে তদন্ত ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে তা দেখা দরকার।’’ 

সিপিআই(এম) বা বামপন্থীরাই কেবল নন। বিরোধী এবং প্রতিবাদী বিভিন্ন অংশই বলছে যে দুর্নীতিতে সাজা দেওয়া বিজেপি’র উদ্দেশ্য নয়। বরং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদকে দল ভাঙিয়ে নিজের দিকে টানাই আসল লক্ষ্য। তার নজির রয়েছে সারা দেশে। বিজেপি ইডি কিংবা সিবিআই’র মত কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে কাজে লাগিয়ে দলে টানার জন্য ব্যবহার করে। বিজেপি’র সুবিধা করে দিতে পারলে দুর্নীতির তদন্ত ঠান্ডা ঘরে চলে যায়। এ রাজ্যে যেমন হয়েছে মুকুল রায় বা শুভেন্দু অধিকারী, নিশিথ প্রামাণিকদের বেলায়।  

এই প্রসঙ্গে মহারাষ্ট্রের উদাহারণ সামনে আনছে ওয়াকিবহাল মহল। মহারাষ্ট্রে বিরোধী জোট ‘মহা বিকাশ আঘাড়ি’ সরকারকে ভাঙিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। ২০২২ সালের জুলাই মাসে শিবসেনা ভেঙে ৩৭ জন বিধায়ককে নিয়ে বেরিয়ে আসেন একনাথ শিন্ডে। তৈরি করেন বালাসাহেবাঞ্চি শিবসেনা। শিন্ডে বিজেপি’র সঙ্গে হাত মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার চালাচ্ছেন।  

একনাথ শিন্ডের সঙ্গে রয়েছেন এমন অন্তত ২০ বিধায়ক এবং নেতা, যাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের তোড়জোড় শুরু করেছিল ইডি। কয়েকজনকে নোটিসও পাঠিয়েছে। দল ভেঙে বিজেপি’র হাত ধরার পর তদন্ত ধামাচাপা পড়ে গিয়েছে। 

শিন্ডের বিরোধী অংশ, উদ্ধব থ্যাকারের নেতৃত্বাধীন শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা’তে সেই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালের মে মাসে। ‘সামনা’ জানায়, শিন্ডে গোষ্ঠীর ২২ বিধায়ক এবং ৯ সাংসদ ফের মূল দলে ফিরে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। এরপরে ফের সক্রিয় হয় ইডি। জুলাই নাগাদ ফের একবার এই বিধায়কদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামতে দেখা গিয়েছিল ইডিকে। 

একই ছবির দেখা মিলেছে এনসিপি ভেঙে বিজেপি’র সঙ্গী অজিত পাওয়ারের ক্ষেত্রে। চলতি বছরের জুলাই মাসে ৩৮ জন বিধায়ককে নিয়ে কার্যত দল ভাঙার ঘোষণা করেন শারদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত। এই শিবির বদলের আগে অজিত পাওয়ার সহ এনসিপি’র ৪ শীর্ষনেতা কিংবা তাঁদের পরিবারের বিরুদ্ধে ইডি তদন্ত শুরু করেছিল। অজিত পাওয়ার, প্রফুল প্যাটেল, হাসান মুশরিফ, ছগন ভুজবল এবং অদিতি টাটকারের বিরুদ্ধে সেই তদন্ত এখন হিমঘরে। এই ৫ জনই বর্তমানে মহারাষ্ট্রের সরকারে ক্যাবিনেট মন্ত্রী। অজিত পাওয়ার নিজে বিজেপি’র দেবেন্দ্র ফড়নবিশের সঙ্গে উপ-মুখ্যমন্ত্রী। অপর মুখ্যমন্ত্রী হলেন একনাথ শিন্ডে। ইডি’র তৎপরতাও চলে গিয়েছে ঠান্ডা ঘরে। 

কর্ণাটকে দল ভাঙিয়ে সরকার গড়া বা মধ্য প্রদেশে ব্যাপম দুর্নীতিতেও এমন নজির রয়েছে। বিরোধীদের বড় ক্ষোভ, আদানির বিরুদ্ধে দেশের আইন ভেঙে বিদেশি বিনিয়োগের নামে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। শেয়ারের দাম ভাঁড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু ইডি তদন্তে নামেনি। শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রক ‘সেবি’ তদন্তের তলদেশে পৌঁছাচ্ছে না। 

‘সেবি’ না পারলেও সাংবাদিকদের উদ্যোগ ‘আর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোরটিং প্রজেক্ট’ দেখিয়েছে যে আদানি পরিবারের ঘনিষ্ঠরা তাঁদেরই পরিচালিত ট্রাস্টের টাকা বিদেশ থেকে ঘুরিয়ে এনে ভারতের তাঁদেরই সংস্থার শেয়ার কিনেছে। এর আগে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্ট জানিয়েছিল আদানির শেয়ারের দাম ৮০ শতাংশ ফাঁপানো। রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার দেখাও গিয়েছিল একাধিক সংস্থার শেয়ার প্রায় ৮০ শতাংশ নেমেছে।

মোদীর সময়েই ললিত মোদী, নীরব, মোদী, মেহুল চোকসিরা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের টাকা লোপাট করে বিদেশে পালিয়েছেন। মেহুল চোকসিকে মোদীর বিদেশ সফরে সঙ্গী থাকতে দেখা গিয়েছে, শোনা গিয়েছে ‘মেহুল ভাই’ সম্বোধন। আর অনিল আম্বানির আনকোরা সংস্থাকে রাফালে যুদ্ধ বিমানের চুক্তিতে ভারতীয় অংশীদার করা হয়েছে। ছেঁটে ফেলা হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হ্যাল’-কে। 

প্রশ্ন জোরালো, এই বিজেপি তৃণমূলের দুর্নীতির তদন্ত করবে? অপরাধীদের ধরবে? সিপিআই(এম) বলছে, ৫ অক্টোবর সিবিআই’র সদর দপ্তর সিজিও কমপ্লেক্স অভিযান এই কারণেই জরুরি।   

Comments :0

Login to leave a comment