body of the migrant worker returned to his village at Rayganj

মুক্তিপণ চেয়ে বাড়িতে ফোন, টাকা দিতে না পারায় বাড়িতে ফিরলো পরিযায়ী শ্রমিকের নিথর দেহ

রাজ্য

বিশ্বনাথ সিংহ: রায়গঞ্জ, 
ফোন করে ঝাড়খণ্ডে ডেকেছিলেন বন্ধু, সঙ্গে যা টাকাপয়সা ছিল, তাও ছিনিয়ে নেওয়া হয়। আরও ৫০ হাজার টাকার দাবিতে বাড়িতে ফোন করা হয়। টাকা দিতে পারেনি পরিবার। তারপরেই ফিরল ডালখোলা শহর সংলগ্ন হেমানপুর গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক জাকির হোসেনের কফিনবন্দি দেহ। গোটা এলাকায় স্তব্ধ মানুষ।  
উত্তর দিনাজপুর জেলার ডালখোলা ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের হেমানপুর গ্রামের চাঙ্গাটোলির বাসিন্দা জাকির হোসেন পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি। বেশ কয়েক বছর আগে ব্যাঙ্গালোরে রাজমিস্ত্রির ঠিকাদারের কাজ শুরু করেন। বয়স আনুমানিক ৩৪ বছর। ব্যাঙ্গালোর থেকে ডালখোলাতে ফিরেছিলেন সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি। ঝাড়খন্ডের বাসিন্দা বিদেশ মার্ডি নামে এক যুবকের সাথে তাঁর বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। বিদেশ মার্ডি গত ২৫সেপ্টেম্বর ঝারখাণ্ডের সেরাইকেলাতে কাজের জন্য ফোন করে তাঁকে ডেকে নেন। ২৬ সেপ্টেম্বর সেখান থেকেই তাঁকে অপহরণ করা হয় বলে পরিবার সুত্রে খবর। পরিবারের লোকজন ডালখোলা থানায় এই বিষয়ে অভিযোগ দাযের করেছেন। শনিবার তাঁরা জানতে পারেন, জাকির হোসেনের মৃতদেহ জঙ্গলে পড়ে আছে। মঙ্গলবার জাকির হোসেনের কফিনবন্দি নিথর দেহ বাড়িতে ফিরে আসে। 
মৃত পরিযায়ী শ্রমিক জাকির হোসেনের বাড়িতে রয়েছে ২৮ বছর বয়সি স্ত্রী সেরিনা বিবি, এক ছেলে ও এক মেয়ে সহ বৃদ্ধ মাতা-পিতা। বাবা মহম্মদ মুসা এদিন বলেন, বাড়ির বড় ছেলে জাকির হোসেন  ব্যাঙ্গালোরের আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিল। সেখানেই ঠিকাদারি করতো। বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিক নিয়ে যাওয়ার জন্য সে ঝাড়খণ্ডেও যায়।  দু’সপ্তাহ আগে ঝাড়খণ্ডের এক বন্ধু ওকে ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়।  সেখানে দুষ্কৃতীরা চক্রান্ত করে আমার ছেলেকে ঘন জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে তার কাছে থাকা সমস্ত টাকা-পয়সা, এমনকি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যা টাকা ছিল, সেটাও চাপ দিয়ে নিয়ে নেয়। এরপরে আমার ছেলে শনিবার একবার বাড়িতে ফোন করে বলেছিল, ওকে দুষ্কৃতীরা অপহরণ করেছে। ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে, না হলে খুন করে দেবে। অচেনা মোবাইল নাম্বারে ফোন করলেও সেই মোবাইল নম্বর সুইচড অব থাকায়, পরে আর কিছু জানতে পারিনি। 
রবিবার সন্ধায় আবার খবর পেয়ে পুলিশের সাথে যোগাযোগ করে ঘটনা জানালে পুলিশ ঝাড়খণ্ড পুলিশের সহায়তায় কফিনবন্দি নিথর দেহ বাড়িতে পৌঁছায়। এলাকায় কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ বাবা মা স্ত্রী সন্তান প্রতিবেশীরা। দোষীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন মৃতের পিতা। 
শোকস্তব্ধ সিআইটিইউ অনুমোদিত নির্মাণ কর্মী ইউনিয়নের নেতা সুরেশ গুপ্ত। তিনি বলেন, প্রায় ২০ দিন আগের ঘটনায় তদারকি করলে হয়ত খুন হতে হত না পরিযায়ী শ্রমিককে। তিনি জানান, ওই বন্ধু বিদেশ মার্ডিকে ঝাড়খণ্ড পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছেন। পরিবারের পাশে সিআইটিইউ আছে। 

Comments :0

Login to leave a comment