CAG REPORT ON STATE BUDGET

ঘোষণা আর বাস্তবায়নে বিস্তর ফারাক, তীব্র ক্ষোভ সিএজি’র রিপোর্টে

রাজ্য জেলা কলকাতা

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP bengali news

ঘোষণা হয়েছে বাজেটে। বাস্তব চিত্র ভয়াবহ। 
বাজেটে বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে মমতা ব্যানার্জির সরকারের ঘোষণার সঙ্গে বরাদ্দের বিপুল ফারাক নিয়ে রাজ্য সরকারকে কার্যত কাঠগড়ায় তুলেছে সিএজি রিপোর্ট। ২০২০-২১সালের রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ হয়েছে। তাতেই স্পষ্ট হয়েছে বাজেট ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবে তার ন্যূনতম প্রতিফলন নেই। রাজ্যের আর্থিক স্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিএজি রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করে জানিয়েছে, বাজেট তৈরি করার সময় সরকারের উচিত বাস্তবসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আর্থিক বরাদ্দের বিষয়টি বিবেচনা করা। একইসঙ্গে সরকারি দপ্তরগুলির ক্ষমতা ও খরচ করার দক্ষতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হয়ে বাজেট বরাদ্দ করা দরকার।

বুধবার পেশ হতে চলেছে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের জন্য এরাজ্যের বাজেট। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। এমনিতে গ্রামের অর্থনীতি তলানিতে পৌঁছে গেছে। গত এক বছরে বন্ধ ১০০ দিনের কাজ। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় সাড়ে ১১লক্ষ উপভোক্তা চূড়ান্ত নথিভুক্ত হওয়ার পরও আসেনি টাকা। ভয়াবহ অবস্থা গ্রামের রাস্তাঘাট থেকে পরিকাঠামো। গত এক দশকে ঋণজালে জড়িয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে দপ্তরগুলির বরাদ্দ টাকায় ছাঁটাই করেছে নবান্ন। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে গ্রামের ভোটকে প্রলুব্ধ করতে বাজেটকেই আঁকড়ে ধরে থাকবে রাজ্য সরকার। নবান্নের শীর্ষ মহল থেকে ইতিমধ্যে চলতি বাজেটে গ্রামের পরিকাঠামো ও কর্মসংস্থানকে গুরুত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে নজরে রেখেই বাজেটে গ্রামীণ ক্ষেত্রে বাড়তি বরাদ্দ করে তৃণমূল কংগ্রেস ভোটে যাবে।

আর এখানেই সামনে এসেছে সিএজি’র রিপোর্ট। কীভাবে বাজেট ঘোষণার সঙ্গে বাস্তব বরাদ্দের ফারাক তৈরি করেছে রাজ্য সরকার তা উল্লেখ করা হয়েছে ক্যাগ রিপোর্টে। গত ২০২০-২১ সালে রাজ্য বিধানসভা ভোটের আগে বাজেট পেশ করার সময় বেশ কিছু জনমোহনী প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৮টি সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়েছিল বাজেটে। বিধানসভা ভোটের সময় একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীকালে সিএজি’র অডিট দেখিয়ে দিয়েছে, বাজেটে ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবে ছিটেফোঁটা বরাদ্দ হয়নি সরকার ঘোষিত প্রকল্পে।

নমুনা হিসাবে সিএজি উল্লেখ করেছে ২০২০-২১ সালে বাজেটে রাজ্যে তফসিলি জাতি মানুষের জন্য ‘বন্ধু প্রকল্প’। বাজেটে রাজ্যের বাসিন্দা তফসিলি জাতির ৬০ বছর পার করা সমস্ত মানুষের জন্য মাসে ১ হাজার টাকা পেনশন ঘোষণা করা হয়েছিল। এই প্রকল্পে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল ২৫০০ কোটি টাকা।


বাজেট ঘোষণার পর বাস্তবে কী হয়েছে?
২০২১সালে এই প্রকল্পে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার প্রকৃত বরাদ্দ করেছিল ৭৬৭ কোটি টাকা। মোট বরাদ্দের মাত্র ৩১ শতাংশ! পরবর্তীকালে এই খাতে রাজ্য সরকার সব মিলিয়ে ১১৪৭ কোটি টাকা খরচ করে। সেই টাকাও বাজেট প্রস্তাবের মাত্র ৪৬শতাংশ। কিন্তু ৩৮০ কোটি টাকা যে বরাদ্দ করা হয়েছিল, তা নিয়েও সিএজি প্রশ্ন তুলেছে। কারণ ৩৮০ কোটি টাকা এসসি এসটি ফিনান্স কর্পোরেশন সংস্থা থেকে রাজ্য সরকার ধার নেয়। সরকারি সংস্থা থেকে ধার শেষ পর্যন্ত পরিশোধ করেনি রাজ্য সরকার।

নবান্ন থেকে প্রায়শই উত্তরবঙ্গে যান মমতা ব্যানার্জি। সম্প্রতি তিনি উত্তরবঙ্গ সফর করে চা বাগান শ্রমিকদের জন্য চা সুন্দরী প্রকল্পে বাড়ি তুলে দিয়েছেন। ২০২০-২১সালে এই চা সুন্দরী প্রকল্প হাতে নিয়ে ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর বাস্তবে কত টাকা জুটেছিল চা বাগান শ্রমিকদের ঘর তৈরির প্রকল্পে?
সিএজি রিপোর্টে জানানো হয়েছে, মাত্র ৩ শতাংশ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল চা সুন্দরী প্রকল্পে। বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৬ কোটি টাকা। বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয়। যৎসামান্য টাকা বরাদ্দ হওয়ার পরও তা খরচ করা সম্ভব হয়নি। মাত্র ৪৩লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছিল। যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে সিএজি রিপোর্টে। 


তফসিলি বন্ধু প্রকল্পের মতোই আদিবাসী বৃদ্ধদের জন্য জয় জোহর প্রকল্পের নাম দিয়ে গত বিধানসভা ভোটের আগে ঘোষণা করা হয়েছিল। মাসে ১ হাজার টাকা পেনশন দেওয়ার জন্য শুরুতে ৫০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। 

এরাজ্যে কর্মসংস্থান নিয়ে একাধিকবার নানা তথ্য দিয়েছে সরকার। গত বছর ২০২২সালের বাজেট পেশ করতে গিয়ে বিধানসভায় রাজ্য সরকার দাবি করেছিল, আগামী চার বছরে রাজ্যে নতুন করে ১ কোটি ২০ লক্ষ কাজ তৈরি করা হবে। সেই কাজের সুযোগ বাড়াতে বেকার যুবক যুবতীদের জন্য কম সুদ ও ভরতুকি দিয়ে ব্যবসা করার জন্য কর্মসাথী প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। বাজেটে নতুন এই প্রকল্পের ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ৫০০ কোটি টাকা খরচ করবে।


শেষ পর্যন্ত কত টাকা বরাদ্দ হয়েছিল? বেকার যুবক যুবতীদের জীবনযন্ত্রণা কে তামাশায় নামিয়ে মাত্র ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। বিধানসভায় বাজেটের ঘোষণার সঙ্গে সরকারের প্রকৃত বরাদ্দ কার্যত পরিষদীয় ব্যবস্থার সঙ্গে তঞ্চকতা বলে জানিয়েছে সিএজি। 

একের পর এক নতুন প্রকল্পের ঘোষণার পর তার পরিণতি কী তা ফাঁস করে দিয়েছে সিএজি’র রিপোর্ট। বৃহস্পতিবার সরকারের পেশ করা বাজেট ঘোষণার সঙ্গে বাস্তবে কী হতে চলেছে সেটাই দেখার।
 

Comments :0

Login to leave a comment