মঙ্গলবার রাতে উত্তমকে চাপের মুখে পড়ে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু এদিন গ্রামবাসীরা অভিযোগ করছেন যে তাকে মানুষের রোষ থেকে রক্ষা করার জন্য থানায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্দেশখালির ত্রিমোহনীতে সভা করে তৃণমূল কংগ্রেস। সভার পর রাতে পরিকল্পনা করা হয় বুধবার গ্রামবাসীদের উপর হামলা চালানো হবে। সেই মতো এদিন বিকাল থেকে জমায়েত হতে থাকে বহিরাগত দুষ্কৃতীরা।
সন্দেশখালি ফেরিঘাটে তৃণমূলী বহিরাগত বাহিনীর জমায়েত দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়ে স্থানীয় মানুষ। হামলা চালাতে পারে তা আঁচ করে পালটা দুষ্কৃতীদের তাড়া করতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে যায়। দুষ্কৃতীদের ছোড়া কাচের বোতলে কয়েককজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে পথচারী শম্ভু সিংহের হাতের আঙুল রক্তাক্ত হয়। এরপর মারমুখী পুলিশের লাঠিচার্জে মাথা ফাটে আরেক সাধারণ এক গ্রামবাসী কৃষ্ণপ্রসাদ লাইয়ার। তাঁকে খুলনা হাসপাতালে নিয়ো যাওয়া হয়। এলাকায় রয়েছে যথেষ্ট উত্তেজনা। থমথমে পরিবেশ।
রাত পর্যন্ত থানায় চলে বিক্ষোভ, শেষমেষ গ্রামবাসীদের চাপে রাত ৯টা নাগাদ পুলিশ এদিনের হামলার মূল পান্ডা জেলা পরিষদ সদস্য সুশান্ত সর্দার ওরফে উত্তম সরদারকে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃত এই তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। সন্দেশখালি অগ্নিগর্ভ অবস্থা জোরপূর্বক দখলিকৃত মাছের ফিশারির আলাঘর জ্বলছে, পোল্ট্রি ফার্ম লুটপাট হয়ে গেছে। উত্তম সরদারের ঘর ভাঙচুর চালাচ্ছে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী।
সন্দেশখালি থানার দাড়িরজঙ্গল মৌজার পেত্নি ঘোলা ও কর্ণখালির গরিব আদিবাসী ও অন্যান্য অংশের মানুষ তাদের জমি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছেন। গত ৩১ জানুয়ারি ও ৫ ফেব্রুয়ারি রাস্তায় নামেন আন্দোলনকারীরা, চলে অবস্থান বিক্ষোভও। তাঁরা দু’দফায় থানা এবং বিডিও অফিসের দ্বারস্থ হন। ৫ফেব্রুয়ারি থানা অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। শেষে বিডিও অভিযোগ জমা নেন। তাদের অভিযোগ বিগত ৩-৪বছর ধরে জমি লিজের টাকা মিলছে না। শয়ে শয়ে বিঘার পর বিঘা জমিতে শেখ শাহজাহান, শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সর্দাররা মাছচাষ করে আসছে। তাঁরা সরকারি খাল ব্যবহার করতে পারেন না। গ্রামবাসীদের অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের সন্দেশখালি -১নং ব্লক সভাপতি ফেরার বাহুবলী শেখ শাহজাহান, তৃণমূল কংগ্রেসে সন্দেশখালি-২ব্লকের সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য শিবুপ্রসাদ হাজরা ও অপর জেলা পরিষদ সদস্য সুশান্ত সর্দার ওরফে উত্তম সরদারের বিরুদ্ধে। তাঁদের দাবি জমি ফেরত দিতে হবে। পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও আন্দোলনকারীরা প্রথম থেকেই তুলছেন। শাহজাহানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার জন্য শাসক দলের হুমকির মুখেও পড়তে হচ্ছে।
বুধবার দুপুর থেকে সন্দেশখালি থানার অদূরে সশস্ত্র বহিরাগত দুষ্কৃতীরা জমায়েত হতে থাকে। এই খবর রটে যেতেই সাধারণ মানুষও পালটা প্রতিরোধ করতে রাস্তায় নামে। তাদের হটিয়ে দিতে মহিলা পুরুষ একত্রিত হয়ে প্রতিরোধে নামলে দুষ্কৃতীরা কাচের বোতল ছুঁড়তে থাকে গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে। যার আঘাতে শম্ভু সিংহ সহ কয়েকজন সাধারণ মানুষ আহত হন ঘটনাস্থলে পুলিশের উপস্থিতিতেই ঘটে ঘটনাটি। বহিরাগত দুষ্কৃতিরা পিছু হটলে এরপর সন্ধ্যা ৬টা ৪০নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশের র্যা পিড অ্যাকশন ফোর্স। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান জমায়েত ছত্রভঙ্গ করতে শুরু হয় লাঠিচার্জ। থানা বিডিও অফিস সংলগ্ন ত্রিমোহনী মোড়ে সাধারণ এক বাসিন্দার মাথা ফেটে যায় পুলিশের লাঠির আঘাতে। পুলিশের মারমুখী এ হেন আচরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা সন্দেশখালি থানা, বিডিও অফিস চত্বর।
Comments :0