West Medinipur

মেদিনীপুরে আদালতের সামনে ধরনায় দম্পতি

রাজ্য

মায়ের মৃত্যুতে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছিলেন গড়বেতার কেয়া মাইতি। ফতোয়া এল সেই মামলা তুলে নিতে হবে, নইলে প্রাণে মেরে দেওয়া হবে। এমনকি ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এর একটা ‘মিটমাট’ করার জন্যও বলা হয় তাঁকে। তাঁর বাড়িতে ৩ জন লোক পাঠিয়ে এই হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।

এই অবস্থায় নিজের পরিবারের প্রাণ বাঁচাতে ও সুবিচারের দাবিতে এবার মেদিনীপুর জজ কোর্টে বিচারপতির এজলাসের সামনে প্লাকার্ড হাতে ধরনায় বসলেন কেয়া মাইতি, সঙ্গে তাঁর স্বামী। সরাসরি সংবাদমাধ্যমের সামনে অভিযোগ তুলে ধরে তিনি  জানিয়েছেন, তাঁর মায়ের অকস্মাৎ মৃত্যুর পেছনে গাফিলতির ঘটনা চাপা দেওয়া হচ্ছে লোকবল ও টাকার জোরে। তাঁরা সুবিচার থেকে বঞ্চিত। টাকা থাকলে যে প্রশাসনকে কেনা যায় তার নজির তুলে ধরে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। 

কেয়া মাইতির বক্তব্য, তাঁর মা দিপালী খামরুইকে ভুল চিকিৎসায় মেরে ফেলা হয়েছে। এর আগে এই অভিযোগের ভিত্তিতেই চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়ার জেল হেপাজত হয়। মেদিনীপুর শহরের রায় নার্সিং হোমও বন্ধ করে দেয় জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। তিন মাস পর বুধবার জামিনে ছাড়া পান অভিযুক্ত চিকিৎসক। আর বুধবার রাতেই কেয়া মাইতির বাড়িতে ৩ জন অপরিচিত লোক হাজির হয়। তারা অভিযুক্ত চিকিৎসকের হয়ে ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে মামলাটি তুলে নেওয়ার চাপ দিতে থাকে। অন্যথায় তাঁদের সপরিবারে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বলা হয়, মামলা তুলে না নিলে মায়ের মৃত্যুর থেকেও আরও ভয়ঙ্কর পরিণতি হবে। কারণ তাদের হাতেই নাকি রয়েছে পুলিশ প্রশাসন।

এর পরেই সঠিক বিচারের আশায় এবং নিজের পরিবারের প্রাণ রক্ষার কাতর আবেদন নিয়ে বিচারকের এজলাসের সামনে প্লাকার্ড হাতে ধরনায় বসেছেন কেয়া মাইতি ও তাঁর স্বামী। এই ঘটনায় বিধ্বস্ত পরিবারের বাকি সদস্যরাও। কেয়া মাইতির বক্তব্য, তাঁর মা দিপালী খামরুই গত সেপ্টেম্বর মাসে জরায়ুর অপারেশনের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন মেদিনীপুর শহরের রায় নার্সিং হোমে। কিন্তু ভুল অপারেশন করেন ডাক্তার কাঞ্চন ধাড়া ও তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যা ধাড়া। অপারেশনের পরের দিনই গা ঢাকা দেন ওই চিকিৎসক দম্পতি। সঙ্গে সঙ্গে নার্সিংহোম থেকে অপর একজন ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে এসে দ্বিতীয়বার অপারেশন করানো হয় প্রথমবারের ভুল অপারেশন আড়াল করতে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। এর কিছুক্ষণ পর তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়।

ভুল চিকিৎসার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা গড়ায় আদালতে। বিচারকের নির্দেশে বুধবার পর্যন্ত জেলে ছিলেন ওই  চিকিৎসক। বুধবার জামিন পেয়েই তিনি কেয়া মাইতির বাড়িতে লোক পাঠিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, পুলিশের মধ্যস্থতায় টাকা-পয়সার মাধ্যমে সব কিছু ‘ম্যানেজ’ করার চেষ্টা চলেছে। কেয়া মাইতির আইনজীবী অপূর্ব চক্রবর্তী জানান, এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এরকম বহু অভিযোগ ও মামলা রয়েছে মেদিনীপুর জজ কোর্টে। মামলাগুলি আপাতত বিচারাধীন। অভিযোগকারিনী যাতে সঠিক বিচার পান তার জন্য সব উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই আইনজীবী।

অন্যদিকে সরকারি আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব বলেন, চিকিৎসক আইন অনুযায়ী জামিন নিয়েছেন। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন। ইতিমধ্যেই তদন্তকারী পুলিশ অফিসারের কাছে সিডি ও রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে বিরূপ কিছু রিপোর্ট থাকলে জামিন খারিজ হবে। তবে সুবিচারের আশায় আদালতে যেতেই পারেন অভিযুক্ত, এটা তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার। এদিকে অভিযুক্ত চিকিৎসককে ফোন করা হলে তিনি বলেন, বিচার সবে শুরু হয়েছে, তার আগেই সামাজিক মাধ্যমে চাপ সৃষ্টির জন্য এসব করানো হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment