Cyclone Dana

‘দানা’র আশঙ্কায় উপকূলীয় মানুষজন

রাজ্য জেলা

বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে ডানা ওডিশ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ মধ্যবর্তী উপকূলে আঘাত হানতে পারে। দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রে জানা গেছে, উত্তর আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন পূর্ব-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্তের যৌথ প্রভাবে সোমবার সকাল নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়ে গেছে। এটি পশ্চিম থেকে উত্তর-পশ্চিমের দিকে সরতে সরতে তা ঘনীভূত হবে। ঘনীভবন শেষে মঙ্গলবার নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার কথা। নিম্নচাপটি আরও শক্তি বৃদ্ধি করে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার তা ঘূর্ণিঝড়ের জন্ম দিতে পারে। 
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপ পরিস্থিতির কারণে ২০ থেকে ২৩ অক্টোবর আন্দামান সাগর এবং সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ঝোড়ো আবহাওয়া থাকবে। হাওয়ার গতি হতে পারে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়ে গেলে বৃহস্পতিবার উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। ঝড়ের দমকা হাওয়ার বেগ হতে পারে ১৩৫ কিলোমিটারে পৌঁছে যেতে পারে। ওই সময়ে সমুদ্র উত্তাল থাকবে। ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর মধ্য ও দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে এবং ২৬ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত উত্তর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে মৎস্যজীবীদের যেতে নিষেধ করেছে হাওয়া অফিস। ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত গভীর সমুদ্রে মৎসজীবীদের যেতে বারণ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, হাওড়া দুই ২৪ পরগনা প্রবল থেকে প্রবলতম ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এই সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ঘূর্ণিঝড় দানা’র মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই নিয়ে ফেলেছেন বলে জানান জেলাশাসক পূর্ণেন্দুশেখর মাজি। তিনি জানান, ‘‘প্রশাসনিক পর্যায়ে কয়েক প্রস্তু আলোচনা সেরে ফেলা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ২৫ টি ব্লকের সমস্ত আধিকারিকদের সঙ্গেও মিটিং সেরে ফেলেছেন। কন্ট্রোল রুম খোল হয়েছে এবং পাশাপাশি জেলার যে কটি মাল্টিপারপাস সেল্টার গুলি আছে সেই সেইগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী মজুদ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জেলাশাসক আরও জানান দুর্যোগের আগেই যে সমস্ত মানুষ নদী বা সমুদ্র উপকূবর্তী অঞ্চলে বাস করছেন, তাদের নিরাপদ স্থানে চলে আসার আবেদন করা হয়েছে।’’
প্রায় ২ লক্ষের কাছাকাছি মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা হবে বুধবার মঙ্গলবার তিনি একথাও বলেছেন। পাশাপাশি উপকূল এবং সমুদ্র সৈকত অঞ্চলগুলোতে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে মাইকিং প্রচারের মাধ্যমে মানুষজনকে সতর্ক করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ফেরিঘাট গুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি সতর্ক করা হয়েছে যে সমস্ত মৎস্য শিকারী ট্রলার,লঞ্চ, ছোটা ডিঙি নৌকা নিয়ে সমুদ্রে মৎস্য শিকারে বেরিয়েছে তাদের অতি অবশ্যই মঙ্গলবারের মধ্যে ফিরে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছেন। কাঁথি মৎস্য দপ্তর থেকে একটি বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়ে গেছে। দীঘা ফিসারম্যান অ্যান্ড ফিস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস জানান, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশ মেনে প্রায় সমস্ত ট্রলার এবং লঞ্চ ফিরে এসেছে। বাকিরা রাতের মধ্যেই ফিরে আসবে। এদিকে এনডিআরএফ দল উপকূলে পৌঁছে গেছে। ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত সমুদ্রে মৎস্য শিকার, কিংবা দীঘা, মন্দারমনিতে পর্যটকদের সমুদ্রের নামা নিষেধ করা হয়েছে। হোটেলগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। দীঘা,মন্দারমনি, তাজপুর, শৌলা, শংকরপুর, জুনপুট, পেটুয়া বন্দরসহ সমস্ত জায়গায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে বেশিরভাগ মৎস্য খটিগুলো এবং উপকূলীয় অঞ্চলে দরিদ্র মানুষের বসবাস। তাদের বাড়িঘর কাঁচা মাটির, পুরনো মাটির বাড়ি। কোথাও ছিটে বেড়া, বাঁশের বেড়া, কোথাও ত্রিপল খাটানো। ফলে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র ঝাপটায় সর্বস্ব খাওয়ানোর আশঙ্কা করছেন তারা। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সমুদ্র এবং নদী জল ফেঁপে উঠবে। ফলে জল প্লাবনে নদীবাঁধ ভাঙবে। সমুদ্রে পাড় ভাঙবে। মানুষের ফসল এবং সবজি,পুকুরের মাছ , ভেড়ির মাছের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। 
আগামী ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত এবং ২৫ অক্টোবর শুক্রবার ভোর রাতে পূর্ব মধ্য এবং দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হওয়া নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে আছড়ে পড়বে উড়িশ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপর এমনই জানা গেছে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে। ল্যান্ড ফলের সময় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিবেগে তাণ্ডব চালাবে দানা। উপকূলীয় অঞ্চল এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক কালে ফনী, ইয়াস ,আমফানে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিরসম্মুখীন হয়েছেন। সরকারি স্বজনপোষণের ও অভিযোগ উঠেছিল ভর্তুকি পাওয়ার ক্ষেত্রে। দানা ঘূর্ণিঝড় যদি আসে সেই আশঙ্কায় উপকূলীয় মানুষ জন।  
 

Comments :0

Login to leave a comment