অনিন্দিতা দত্ত-শিলিগুড়ি
শিলিগুড়ির নার্সিংহোমের আবাসনের শৌচালয় থেকে মিলল নার্সের ঝুলন্ত দেহ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দেহ পাচার করার চেষ্টা চলছিল। আত্মহত্যা বলে চালানোরও চেষ্টা চলছে। মৃত যুবতীর পরিবার থানায় লিখিতভাবে খুনে অভিযোগ দায়ের করেছে।
শুক্রবার রাতে শিলিগুড়ির ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের মিলনপল্লী এলাকায় ওই নার্সিংহোমের আবাসনে নার্সের দেহ মেলে। জানা গেছে, মৃত নার্স দার্জিলিঙের বাসিন্দা। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিলিগুড়ির একটি নার্সিংহোমে কর্মরত ছিলেন। আচমকাই রাতে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়।
পরিবারের বক্তব্য, তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেননি। তাঁকে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় মৃত নার্সের পরিবারের পক্ষে থানায় লিখিতভাবে খুনের একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পরিবার বলেছে মৃতের দেহে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনার পরে পুলিশে খবর দেবার পরিবর্তে নার্সিংহোম আবাসনের তরফে নার্সের মৃতদেহ লোপাটের চেষ্টা হয়। তাঁরাই আটকে দেন। রাতের অন্ধকারে গোপনে অ্যাম্বুলেন্স এনে আবাসন থেকে নার্সের মৃতদেহ সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছিল। এলাকাবাসীদের নজরে আসতেই শুরু হয় বিক্ষোভ। যার জেরে দেহ পাচার করা যায়নি।
পুলিশের ভাষ্য, শনিবার সন্ধ্যার পরে ওই নার্স ঘর থেকে বেরিয়ে যান। বাথরুমে ঢুকে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন। অনেক ডাকাডাকির পরেও কোন সাড়া শব্দ মেলেনি। এরপর বাথরুমের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করা হলেও দরজা খোলেনি নার্স। সেই সময় তাঁর মোবাইল ফোনের সুইচ বন্ধ করা ছিল। এরপর একরকম জোরে ধাক্কা দিয়ে বাথরুমের দরজা খোলা হয়। বাথরুমের দরজা খুলে নার্সকে তোয়ালে পেঁচানো অবস্থায় শাওয়ারে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখা যায়।
বাসিন্দারা বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। স্থানীয়দের আবাসনের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। উত্তেজিত বাসিন্দাদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। পরে পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে পাঠায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আবাসনে কোন সিসি টিভি ক্যামেরা নেই। যাঁরা থাকছেন তাঁদের সঠিক তথ্য আবাসনের রেজিস্টারে নেই।
এদিকে মেয়ের আত্মহত্যার খবর পেয়ে রাতেই দার্জিলিঙ থেকে শিলিগুড়ি উদ্দেশ্যে রওনা দেন নার্সের পরিবারের সদস্যরা। শনিবার সকালে দার্জিলিঙ থেকে শিলিগুড়িতে জেলা হাসপাতালে পৌঁছে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা।
সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘নিশ্চিতভাবে এই নার্সের মৃত্যুর ঘটনার পেছনেও গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।’’ আবাসন কর্তৃপক্ষের তরফে ঘটনাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টার তীব্র নিন্দা করেন তিনি। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে আরো সক্রিয় হবার দাবি জানান।
২৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলী কাউন্সিলরের বক্তব্য, সিসি টিভি আছে কিনা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হবে। আবাসিক বাড়িটি কিভাবে ব্যবহার হচ্ছে তার তথ্য নেই।
প্রকৃত তদন্ত এবং অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে শনিবার সন্ধ্যায় সিপিআই(এম) ৪ নম্বর এরিয়া কমিটির পক্ষে শিলিগুড়ি থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়।
Comments :0