KMC CALENDAR HOLIDAY 2023

ছুটি বাড়িয়ে টাকা বাঁচাচ্ছে ফতুর কলকাতা কর্পোরেশন

রাজ্য কলকাতা

kmc kolkata municipal corporation calendar holiday ছুটি বাড়ানোর মাধ্যমে অস্থায়ী কর্মচারীদের মাসিক আয়ে টান পড়তে চলেছে।

২০২৩ সালে ৯৩টি ক্যালেন্ডার হলিডে পেতে চলেছেন কলকাতা কর্পোরেশনের কর্মচারীরা। এখানেই শেষ নয়, ১৫টি ক্যাজুয়াল লিভ, ২০টি মেডিক্যাল লিভ এবং আরও ৩৩টি আর্নড লিভ জুড়লে ছুটির সংখ্যা দাঁড়াবে ১৬১! দিনের সংখ্যায় যা ৫ মাস ১১দিন। 

কর্মচারীরা যদিও এই বাড়তি ছুটি চাইছেন না। এরফলে নাগরিক পরিষেবায় বিঘ্ন হবে, তাঁদেরও কাজের চাপ বাড়বে, বলছেন কর্মচারী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।

২০১১ সালে মমতা ব্যানার্জির দেওয়া অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল রাজ্যের ‘ওয়ার্ক কালচার’ বা কাজের পরিবেশ ফেরানো। ২০০৭-০৮ সাল থেকে তিনি বারবার দাবি করে এসেছেন, রাজ্যের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে সমস্ত সরকারি দপ্তর ঘুঘুর বাসায় পরিণত হয়েছে। তাঁর অভিযোগ ছিল, সরকারি কর্মচারিরা দিনের পর দিন দপ্তরে আসেন না, তাঁরা বছর ভর ছুটিতে থাকেন। তাই সাধারণ মানুষ নাগরিক পরিষেবা পান না। ২০১১ সালে তৃণমূলের সরকার প্রতিষ্ঠা হলে এই সবটারও পরিবর্তন হবে। 

সেই সময় মমতা ব্যানার্জিকে ভিত্তিহীন কথা বলেছিলেন তা সরকারি তথ্য থেকেই স্পষ্ট। ২০১০ সালের কলকাতা কর্পোরেশনের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ‘ক্যালেন্ডার হলিডে’র সংখ্যা ছিল ৭২টি। এই ৭২ দিন ছুটির মধ্যে শারদোৎসব সহ সমস্ত উৎসবের দিনগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১১ সালের পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে বাড়তে থাকে ছুটির সংখ্যা। 

কলকাতা কর্পোরেশন সূত্রে খবর, অবাধ ছুটির মাধ্যমে মূলত এক ঢিলে দুই পাখি মারার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত বোর্ড। প্রথমত, এই মুহূর্তে কলকাতা কর্পোরেশনে স্থায়ী কর্মচারীর তুলনায় অস্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা বেশি। ক্যালেন্ডার হলিডের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া মানেই অস্থায়ী কর্মচরীদের দৈনিক মজুরি কাটা যাওয়া। কর্পোরেশনের একজন অস্থায়ী কর্মচারীর দৈনিক মজুরি হল ৩১৩ টাকা। ২১ দিন বেশি ছুটি থাকা মানে একজন অস্থায়ী কর্মচারীকে বছরে মোট ৬৫৭৩ টাকা কম মজুরি দিতে হচ্ছে কর্পোরেশনকে। বর্তমানে কলকাতা কর্পোরেশনে অস্থায়ী কর্মচারীর সংখ্যা ১৮হাজারের বেশি। গড় হিসেব ধরলে ঢালাও ছুটির ফলে কলকাতা কর্পোরেশনের ‘সাশ্রয়ের’ পরিমাণ দাঁড়াবে বার্ষিক ১১ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকারও বেশি! 

দুই নম্বর পাখিটি কী? কর্পোরেশনের কর্মচারীদের দাবি, ২০১১ সাল থেকেই ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ধর্মঘটের দিন জীবন বাজি ধরে হলেও কর্মস্থলে হাজির হতে হয় তাঁদের। এরফলে কর্মাচরী মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। সেই ক্ষোভের ক্ষতে প্রলেপ লাগাতেও এই বিপুল পরিমাণ ছুটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, কলকাতা কর্পোরেশনের কর্মচারীরা সপ্তাহে ১দিন, রবিবার ছুটি পেয়ে থাকেন। রাজ্য সরকারী কর্মচারীরা শনিবার এবং রবিবার- দুইদিনই ছুটি পান। সেই হিসাব ধরলে রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ছুটির সংখ্যা আরও ৫২ দিন বাড়বে! তাঁদের ক্যালেন্ডার হলিডের সংখ্যাই গিয়ে দাঁড়াবে ১৪৫-এ। কলকাতা কর্পোরেশনের ক্ষেত্রেই শ্রমদিবস নষ্টের পরিমাণ যদি এই হয়, তাহলে রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে সেটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। 

বেশি ছুটি পাওয়া নিয়ে কর্পোরেশনের কর্মচারীরা কি জানাচ্ছেন? তাঁদের সাফ বক্তব্য, এরফলে একদিকে কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও বড়সড় গাফিলতি থেকে যাচ্ছে। যেমন ধরা যাক, কলকাতা কর্পোরেশনের একজন সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ঠিক করলেন, আগামী সাতদিনে তিনি তাঁর বরো’র নিকাশির একটি নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করবেন। কিন্তু বহুক্ষেত্রেই এই বাড়তি ছুটির ফলে কাজের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ছে। তার ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অপরদিকে কাজ বকেয়া থাকার ফলে আপদকালীন পরিষেবার ক্ষেত্রে বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। যা দিনের শেষে সেই কর্মাচরী কিংবা আধিকারিককেই সামলাতে হবে। 

কর্মচারীদের তরফে কেএমসি ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড অ্যালায়েড সার্ভিসেস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মানস সিনহা বলেছেন, ‘‘কলকাতা কর্পোরেশন সাধারণ কর্মচারীদের প্রাপ্য সম্মান দেয় না। কর্মচারীদের মাইনে এবং পেনশন ঘিরে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় কর্পোরেশন ভাবছে বেশি করে ছুটি দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ রাখা যাবে। কিন্তু অতিরিক্ত ছুটির ফলে যে কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে তা কর্মচারীরা বুঝতে পারছেন। তাঁরা এই পরিমাণ ছুটি দেওয়াকে সমর্থন করেন না।’’ 

পেনশন এবং বেতন আটকে থাকায় স্পষ্ট তহবিল তলানিতে নিয়ে গিয়েছে তৃণমূলের পৌরবোর্ড। মেয়র ফিরহার হাকিম নিজেও বলেছেন যে হাতে পয়সা নেই।

এ প্রসঙ্গে কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, কলকাতা কর্পোরেশনের মূল কাজ সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়া। সেখানে এত বিপুল পরিমাণ ছুটি থাকবে কেন? বর্তমান কর্পোরেশন গোটাটাই বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে চলছে। এরা কর্মচারীদের ন্যায্য দাবিদাওয়া মেটাতে পারছে না। তাই ঘুষের মতো বাড়তি ছুটি দেওয়া হচ্ছে। একইসঙ্গে তৃণমূল বোর্ডের কাজকর্মে স্পষ্ট, তাঁরা অস্থায়ী কর্মচারীদের কোনওরকম দায়িত্ব নিতে রাজি নয়। এককথায় চূড়ান্ত অপদার্থ একটা প্রশাসনের প্রতিচ্ছবি ধরা পড়েছে এর মাধ্যমে। 

Comments :0

Login to leave a comment