Strike KMC Workers

হুমকি উড়িয়ে সারা রাজ্যেই ধর্মঘটে সামিল পৌরকর্মীরা

কলকাতা

Strike KMC Workers ‘বুকে ব্যাজ পরে ধর্মঘটের দাবিকে সমর্থন জানাচ্ছেন জঞ্জাল নিষ্কাশন বিভাগের শ্রমিকরা’


 

ছিল নজিরবিহীন হুমকি। সরকারের তরফে কার্যত যুদ্ধও ঘোষণা করা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তারপরেও শুক্রবার রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা অনড় রইলেন নিজেদের দাবি আদায়ের লড়াইয়ে। তারফলে এদিন রাজ্যের সমস্ত পৌরসভা এবং কর্পোরেশন স্তব্ধ রইল সকাল থেকেই। যদিও আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীরা জরুরি পরিষেবাগুলিকে ধর্মঘটের আওতা থেকে বাদ দিয়েছিলেন। সেখানে কর্মরত শ্রমিক কর্মচারীরা ধর্মঘটের সমর্থনে বুকে ব্যাজ পরেই জানালেন সহমর্মিতা। 


সারা রাজ্যের ১২৩টি পৌরসভা এবং কলকাতা, শিলিগুড়ি, আসানসোলের মতো ৭টি কর্পোরেশনেই এদিন সর্বাত্মক কর্মচারী ধর্মঘট হয়। কর্মচারী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ জানাচ্ছেন, অধিকাংশ জায়গায় ১০০ শতাংশ শ্রমিক কর্মচারী ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন। ধর্মঘটের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছেন অস্থায়ী এবং চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক কর্মচারীরাও। 
এরাজ্যের পুরকর্মীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন অল বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল ওয়ার্কমেন্স ফেডারেশন। ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ জানাচ্ছেন, ধর্মঘট বানচাল করতে মঙ্গলবার একটি নির্দেশ জারি করে রাজ্য। ধর্মঘটে অংশ নিলে শোকজ এবং ‘ডায়াস নান’র হুমকিও দিয়েছিল রাজ্য সরকার। এই নির্দেশিকা হাতিয়ার করে তৃণমূল পরিচালিত কর্পোরেশন এবং পৌরসভাগুলির চেয়ারম্যান এবং মেয়ররা সংস্থা ভিত্তিক নির্দেশিকা জারি করে। সেখানে সরাসরি ধর্মঘটের বিরোধীতা করা হয়। 


কর্মচারী নেতৃবৃন্দ জানাচ্ছেন, এই নির্দেশিকা গুলির পালটা প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিবিড় প্রচারের মাধ্যমে কর্মচারীদের জানানো হয়, সরকার তার নিয়মে নির্দেশিকা জারি করেছে। কিন্তু ধর্মঘট করাও কর্মচারীদের অধিকার। পৌরকর্মীরা এক্ষেত্রে মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস রুলসকে হাতিয়ার করেন। সেই রুলস অনুযায়ী, ১৪ দিন আগে নোটিশ দিয়ে কর্মচারীরা ধর্মঘট করতে পারেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিসপিউট্‌স অ্যাক্টেও ১৪ দিন আগে নোটিশ দিয়ে ধর্মঘটে যাওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে কর্মচারীদের। সেই নিয়ম মেনেই ১৪ দিন আগে সমস্ত কর্পোরেশন এবং পুরসভা কর্তৃপক্ষকে ধর্মঘটের নোটিশ দেওয়া হয়। ফলতঃ এই ধর্মঘট কোনও ভাবেই অবৈধ নয়। 
এই পালটা লড়াইয়ের মেজাজ চোখে পড়েছে শুক্রবার সারাদিন জুড়ে। ফেডারেশন নেতৃবৃন্দ জানাচ্ছেন, তাহেরপুর এবং ঝালদা বাদে এরাজ্যের সমস্ত কর্পোরেশন এবং পৌরসভা চালাচ্ছে তৃণমূল। পৌরসভা এবং কর্পোরেশনগুলির চেয়ারম্যান এবং মেয়ররা শাসকদলের স্থানীয় নেতা। তাঁরা নিজেদের সংগঠনকে ব্যবহার করে সমস্ত রকম ভাবে ধর্মঘট বানচাল করার চেষ্টা করেন। কয়েক জায়গায় স্থানীয় থানার আইসি পদমর্যাদার অফিসারদেরও ব্যবহার করা হয়। তাঁদের দিয়ে ফেডারেশন নেতৃত্বের উপর চাপ সৃষ্টির কৌশল নেয় তৃণমূল। কিন্তু তারপরেও নিজেদের দাবিতে অনড় থাকেন সাধারণ কর্মচারী এবং শ্রমিকরা। 


শুক্রবারের ধর্মঘটে ডিএ’র পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক এবং অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ীকরণের দাবিও উঠে আসে। তারফলে অস্থায়ী কর্মচারীরাও এদিনের ধর্মঘটকে পুরোপুরি সমর্থন জানান। ২০১১ সালের পর প্রথমবার ধর্মঘটের সমর্থনে পৌরসভা এবং কর্পোরেশনগুলির গেটে পিকেটিং করেন আন্দোলনকারীরা, যা একপ্রকার নজিরবিহীন। 
এদিন ধর্মঘট শেষে আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে অল বেঙ্গল মিউনিসিপ্যাল ওয়ার্কমেন্স ফেডারেশন। বিবৃতিতে ফেডারেশনের সভাপতি দীপক মিত্র এবং সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত সিংহ রায় ধর্মঘট সফল করার জন্য শ্রমিক কর্মচারীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। 
এপ্রসঙ্গে দীপক মিত্র বলেন, জঞ্জাল নিষ্কাশন, শ্মশান, বিদ্যুৎ, আলোক বিভাগ এবং অ্যাম্বুলেন্স, স্বাস্থ্য’র মতো জরুরি বিভাগগুলিকে ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। এছাড়া সমস্ত বিভাগে সর্বাত্মক ধর্মঘট হয়েছে। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা বুকে ব্যাজ পরে কাজ করেছেন এদিন।
 

Comments :0

Login to leave a comment