রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাম্প্রতিক রিপোর্টে মিলেছে এমন তথ্য।
রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮-২০২০ সালে গর্ভাবস্থায় মায়েদের মৃত্যু ঠেকানোর নিরিখে ভারতের প্রথম পাঁচটি রাজ্য হল কেরালা, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাডু। সবথেকে পিছিয়ে থাকা পাঁচটি রাজ্য হলো ওডিশা, ছত্তিশগড়, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং অসম।
পিছিয়ে থাকা পাঁচ রাজ্যেই সরকারে রয়েছে বিজেপি। তার মধ্যে কেবল ওডিশায় সরকার গড়েছে সম্প্রতি। বাকি রাজ্যগুলিতে দীর্ঘদিন সরকারে আসীন তারাই।
রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি ১ লক্ষ শিশু জন্মের নিরিখে কেরালায় ১৯ জন মা প্রাণ হারান। তামিলনাডুর ক্ষেত্রে সংখ্যাটা হল ৫৪। অপরদিকে ওডিশার ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ১১৯ এবং অসমের ক্ষেত্রে সেটি হল ১৯৫। ২০১৮-২০ সালের মধ্যে ভারতের গড় হল ৯৭।
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে বলা হয়েছে, ‘‘গর্ভাবস্থায় মায়েদের মৃত্যু ঠেকানোর ক্ষেত্রে পথ দেখাচ্ছে কেরালা।’’
রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেবলমাত্র ২০২০ সালে জন্ম দিতে গিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ লক্ষ গর্ভবতী। এর মধ্যে আমেরিকার মতো দেশ রয়েছে, যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে এই হার বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্বে প্রতি ২ মিনিটে একজন করে মহিলা শিশু জন্ম দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন বলে রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা ‘হু’।
আন্তর্জাতিক মহলের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালে গর্ভাবস্থায় মায়েদের মৃত্যুর হার বা মেটার্নাল মর্টালিটি রেট (এমএমআর) ছিল ৩৩৯। অর্থাৎ, সেই সময় গোটা বিশ্বে ১ লক্ষ শিশু জন্মের সময়ে প্রাণ হারাতেন ৩৩৯ জন মহিলা। ২০২০ সালে সেই হার অল্প কিছুটা কমে হয়েছে ২২৩। কিন্তু গত ২০ বছরে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই হার কমাতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৬ সালের পরে এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোনও উন্নতি ঘটেনি।
এই রিপোর্টটি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে রাষ্ট্রসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থার গবেষক জেনি ক্রেসওয়েলের। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রসবকালীন মৃত্যুর হারে হ্রাস এক জায়গায় থেমে যাওয়া মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে এই হারকে ২২৩ থেকে ৭০’র নিচে নিয়ে যাওয়া। সেই লক্ষ্যপূরণে অনেকটা পথ হাঁটতে হবে আমাদের।’’
প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে আমেরিকার এমএমআর হল ২৩, যা শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০০০ এবং ২০২০ সালের মধ্যে আমেরিকায় এমএমআর বেড়েছে ৭৮ শতাংশের কাছে।
আমেরিকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করে কমনওয়েলথ ফান্ড। সেই সংস্থার এক গবেষক মুনিরা গুঞ্জা সংবাদমাধ্যমে জানাচ্ছেন, ‘‘আমেরিকায় এই হার বৃদ্ধির পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে। বহু আমেরিকানের স্বাস্থ্যবীমা করানোর সামর্থ্য নেই। এই দেশে চিকিৎসা একটি মহার্ঘ পণ্য। তার ফলে বহু মানুষ গর্ভবতী হওয়ার পরেও চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না অর্থের অভাবে। একইসঙ্গে আমেরিকার হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রশিক্ষিত ধাত্রীর অভাব রয়েছে। তারফলেও বাড়ছে গর্ভবতী মহিলাদের মৃত্যুর সংখ্যা।’’
মুনিরা গুঞ্জার কথায়, ‘‘শিল্পোন্নত দেশগুলির মধ্যে আমেরিকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা ছাড়াই বাঁচার চেষ্টা করেন। এটা ভয়াবহ। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবিদ্বেষ। তারফলে শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের তুলনায় আফ্রিকান আমেরিকানদের প্রসবকালীন মৃত্যুর হার তিনগুণ বেশি। শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বেতন কাঠামোয় বৈষম্যের পাশাপাশি চিকিৎসক দেখাতে গিয়েও সরাসরি বৈষম্য এবং বিদ্বেষের শিকার তাঁরা।’’
Comments :0