বর্তমানে মুঠো ফোন আমাদের জীবনযাত্রাকে করে দিয়েছে সহজ। প্রযুক্তির এই উৎকর্ষ সুফলের সঙ্গে রয়েছে কুফলও। দুনিয়া হাতের মুঠোয় নিয়ে চলা স্মার্টফোন অতিরিক্ত ব্যবহারে রয়েছে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। সেই সঙ্গে অনলাইন গেমস আসক্তিতে ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনছে শিশু-কিশোরদের জীবনে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন গেম এমন এক ধরনের উপাদান, যার মধ্যে আসক্তির সম্ভাবনা খুবই তীব্র। যার ক্ষতিকর দিক প্রতিরোধের জন্য মনোচিকিৎসক এবং কাউন্সেলিং করানো হচ্ছে আসক্তদের। এছাড়া পরিবারের দায়িত্বশীল আচরণ এবং সচেতনতা বৃদ্ধিও সমাধান হতে পারে।
সম্প্রতি একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১৩-১৭ বছর বয়সী শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি ভিডিও গেম, কম্পিউটার, ই-রিডার, স্মার্টফোনে এবং অন্যান্য স্ক্রিন-ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সপ্তাহে বহু সময় ব্যয় করে। শিশু-কিশোরদের মধ্যেও ক্রমশ প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।
প্রথম ভিডিও গেমসের আবিষ্কার হয় ১৯৪০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। পরে সত্তর-আশির দশকের মধ্যে এটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথম বাণিজ্যিকভাবে নির্মিত আর্কেড টাইপের ভিডিও গেমটির নাম ছিল কম্পিউটার স্পেস। এরপর বাজারে আসে আটারি কোম্পানির বিখ্যাত গেম পং। অধিকাংশ ভিডিও গেম যুদ্ধ, সংঘাত, রক্তপাত নিয়ে- যা শিশুদের মানসিক বিকাশের অন্তরায়। শুধু শহরে নয়, ভিডিও গেমসের দিকে ঝুঁকছে গ্রামের শিশু-কিশোররাও। সম্প্রতি বীরভূমে অনলাইন গেম খেলে লক্ষ লক্ষ টাকা দেনায় জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন সুমন ঘোষ(২৫) নামে এক যুবক। ঘটনাটি ঘটেছে পাড়ুই থানার কসবা পঞ্চায়েতের মালাগ্রামে। ৯ মাস আগে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। বেশ কয়েক মাস ধরে মোবাইল মারণ গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। খেলার মাধ্যমে টাকার লেনদেন চলত। মোবাইল গেম খেলতে গিয়ে বিপুল টাকা দেনা হয়ে যায় বাজারে তাঁর। সেইসঙ্গে পাওনা টাকার চাপ সহ্য না করতে পেরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তারপর আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনুযায়ী, সমগ্র বিশ্বে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে ভিডিও গেম খেলে থাকেন। অধিকাংশই অল্প বয়সি শিশু-কিশোর ও তরুণ-তরুণী। স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট গেমিং প্রতিবছর ১৯ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও ওই সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কয়েকগুণ বেড়েছে গেমের জনপ্রিয়তা। বিশ্বব্যাপী এখন প্রতি মাসে প্রায় ২২ কোটি ৭০ লক্ষ এবং প্রতিদিন প্রায় ৮ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ এই গেম খেলে থাকেন। সাধারণত মোবাইল সহজলভ্য হওয়ার কারণে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যান, মনস্টার হান্টার ওয়ার্ল্ড, ডাটা টু, ভাইস সিটি এবং হাঙ্গারগেমসহ নাম না জানা অসংখ্য গেমে। অনলাইন পাবজী গেম অনেক বেশি হিংস্র যার প্রভাব, বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব গেমে আসক্তির কারণে কিশোররা পারিবারিক-সামাজিক অবস্থান থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে। খেলার এক পর্যায়ে এসে তারা হিংস্র হয়ে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা মতে, ভিডিও গেমে আসক্তি এক ধরনের মানসিক রোগ। গেমগুলো খেলোয়াড়ের অবসাদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনলাইন গেমিংয়ে ভার্চুয়াল অস্ত্রের নানারকম ব্যবহার, দ্রুতগতিতে প্রতিপক্ষকে মেরে ফেলার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান, বোমা মেরে ত্রাস সৃষ্টি করে মজা দেখা ইত্যাদি সহিংস আচরণ শিশু-কিশোরদের মনে গেঁথে যাচ্ছে। এভাবেই বিশ্ব আজ অনলাইন গেমিংয়ের কালো থাবায় আক্রান্ত। শহর থেকে গ্রাম প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এ অপসংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছে।
শিশুদের আগে গল্প বা ছড়া শুনিয়ে খাবার খাওয়ানো ও কান্না থামানো হতো। এই কাজগুলোই এখন মোবাইলে গান চালিয়ে কিংবা কার্টুন দেখিয়ে করা হয়। এভাবে আস্তে আস্তে শিশুরাও স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়ে।
Online Game
অনলাইন গেমস: আসক্তির তীব্রতা বাড়াচ্ছে বিপদ

×
Comments :0