অনিল কুণ্ডু - সোনারপুর
অবশেষে ধরা পড়ল সোনারপুরের জামালউদ্দিন সর্দার(ওরফে) জামাল। শুক্রবার রাতে বারইপুর পুলিশ জেলার স্পেশল অপরেশন গ্রুপ ভাঙ্গরের চন্দনেশ্বর থানা ও সোনারপুর বর্ডার এলাকা থেকে জামালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার তাকে বারুইপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হবে।
সালিশি সভার নামে গ্রামবাসীদের উপর নির্মম অত্যাচার, মহিলাদের নির্যাতন, জমি দখল, প্রতারণাকরে থেমে থাকেনি অত্যাচারী তৃণমূল কর্মী জামালউদ্দিন সর্দার ওরফে জামাল। তার নিজের পরিবারের সদস্যদেরও সে রেহাত করেনি। মহিলার উপর পাশবিক নির্মম অত্যাচারের ঘটনা প্রকাশ হতেই এবার একের পর এক তার কীর্তিকলাপ সামনে আসছে। শুক্রবার গুণধর জামাল সর্দারের নিজের ছোট ভাই কামাল সর্দার বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন। তাঁকেও ধর্ষণের মিথ্যা মামলায় জেল খাটিয়েছে জামাল সর্দার।
কামাল সর্দারের কথায়, ২০২০ সালে গ্রামে গন্ডগোল হয়েছিল। ওই ঘটনায় জামাল সর্দার জানিয়েছিল ৫০ জনের নামে মামলা হয়েছে। তাঁদেরকে ছাড়ানোর জন্য গ্রামবাসীদের কাছ থেকে টাকা তোলে জামাল। পরে গ্রামের বাসিন্দারা জানতে পারেন থানায় ৭ জনের নামে অভিযোগ হয়েছিল। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় ঘটনার দুই দিন পর তাঁকে জেলে ঢুকিয়েছিল জামাল সর্দার। প্রতিবাদ করার অপরাধে জামাল তার তৃতীয় স্ত্রীকে দিয়ে সোনারপুর থানায় ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করিয়েছিল। ওই অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ২৭ দিন জেল খাটতে হয়েছে।
সোনারপুরের প্রতাপনগর অঞ্চলের সাঙ্গুর মল্লিক পাড়ার বাসিন্দা তৃণমূল কর্মী এই জামালউদ্দিন সর্দার নিজের দাপট, প্রভাব এতোটাই বিস্তার করেছিল যে নিজেকে মানুষের কাছে ত্রাস হিসাবে তুলে ধরেছিল। যাতে মানুষ ভয়ে তার বিরুদ্ধে না যেতে পারে। সে কারণেই তার নির্মম অত্যাচার, মহিলাদের উপর পাশবিক অত্যাচার, জমি দখল, তোলাবাজি নিয়ে এতোদিন কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস দেখাতে পারেনি। এমনকি সে কোন রেহাত করেনি নিজের গর্ভধারিনী মায়ের পেটের ছোট ভাইকেও। অর্থাৎ এর মধ্যে দিয়ে অঞ্চলের মানুষের কাছে এই বার্তাই দিতে চেয়েছে তার অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ যাতে মুখ খোলার সাহস না পায়। তাহলে তাদেরও সে শাস্তি দিতে কোন কসুল করবে না। এমনটাই জানিয়েছেন এদিন স্থানীয় বাসিন্দারাও। তার এই কাজে নিজস্ব গ্যাং তৈরি করেছিল সে।
মহিলাকে শিকল দিয়ে বেঁধে মারধর, অত্যাচারের ঘটনার অভিযোগ প্রকাশ্য আসার পরই গা ঢাকা দিয়েছে অত্যাচারী তৃণমূল কর্মী এলাকার ত্রাস জামাল সর্দার। এই ঘটনায় সোনারপুর থানার পুলিশ ইতিমধ্যে মুজিদ খাঁ ও অরবিন্দ সর্দার নামে তার দুই শাকরেদকে গ্রেপ্তার করেছে। ১৫ জুলাই পরিবার নিয়ে চম্পট দিয়েছে। তার তালাবন্ধ বাড়িতে ঢোকার ঝুঁকি এখনো নিতে পারেনি সোনারপুর থানার পুলিশ। বাড়িতে তল্লাশির জন্য সার্চ ওয়ারেন্টের আর্জি জানানো হয়েছে বারুইপুর আদালতে। পলাতক জামাল সর্দারের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি, তোলাবাজি, খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করার নির্দেশ দিয়েছেন বারুইপুর আদালতের বিচারক। এদিন রাতে মূল অভিযুক্ত জামাল সর্দারকে পুলিশ গ্রেপ্তার ররেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, প্রাসাদোপম বাড়িতে সালিশি সভা ডেকে অত্যাচার, মহিলাদের উপর নির্যাতন এসব তো চলতোই। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, জমি দখল, তোলাবাজির অভিযোগ তো আছেই। সোনারপুরের প্রতাপনগর অঞ্চলের এই ত্রাসের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা শুক্রবার অভিযোগ করে বলেন, গত ৪ বছরে ৪ বার গ্রেপ্তার হয়েছিল জমি হাঙ্গড় এই জামাল সর্দার। বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ঘটনায় সিবিআই তাকে গ্রেপ্তার করায় ৫৬ দিন জেলে ছিল সে। এছাড়াও ৩ বার এলাকায় মারামারি, হিংসা, সন্ত্রাসের ঘটনায় তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। তাঁরা আরো জানান, বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী হিংসা, মারধরের ঘটনায় হারাধন অধিকারী নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছিলেন। এই খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত জামাল সর্দার দুই মাস পর জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিল।
jamal Sardar
তিনদিন পর গ্রেপ্তার তৃণমূলের জামাল
×
Comments :0