ARIADAHA PROTEST

দুষ্কৃতীরাজ চলবে না আড়িয়াদহে, মিছিল থানায়, ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যেও

রাজ্য

বৃহস্পতিবার বেলঘড়িয়া থানায় বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং সিপিআই(এমএল)’র বিক্ষোভ।

বন্ধ করতে হবে অসামাজিক কাজ। দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়া চলবে না। কামারহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের আড়িয়াদহের ঘটনার প্রতিবাদে এই দাবিতে বেলঘড়িয়া থানায় হলো ডেপুটেশন। এই এলাকারই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য ঘিরেও তৈরি হয়েছে ক্ষোভ।
বৃহস্পতিবার কামারহাটি অঞ্চলে বামফ্রন্ট এবং জাতীয় কংগ্রেস ও সিপিআই(এমএল) যৌথভাবে ডেপুটেশন এবং বিক্ষোভ দেখায়। তিনটি মিছিল আসে বেলঘড়িয়া থানায়। তৃণমূলের কর্মী জয়ন্ত সিং এবং তার দলবলের অত্যাচার বেরিয়ে পড়ায় ধিক্কার সর্বত্র। পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। ১ জুলাই মা ও ছেলের ওপর অত্যাচারের ঘটনা সামনে আসায় তীব্র হয়েছে ক্ষোভ। বেরিয়ে পড়েছে সাড়ে তিন বছর আগে স্থানীয় একটি ক্লাবে নির্মম অত্যাচারের ভিডিও।
এদিনই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে উপনির্বাচন চলাকালীন ইচ্ছাকৃতভাবে এই ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে এবং সংবাদ মাধ্যমের প্রচার করা হয়েছে। মমতা ব্যানার্জির দাবি, ঘটনার সময় নাকি আডিয়াদহ এবং তালতলা ক্লাব অঞ্চলে সাংসদ ছিলেন অধুনা তৃণমূল ছেড়ে ফের বিজেপি-তে যোগ দেওয়া অর্জুন সিং। যিনি ছিলেন বারাকপুরের সাংসদ। 
স্থানীয়রা মনে করাচ্ছেন যে ওই অঞ্চলগুলি দমদম লোকসভা কেন্দ্রে পড়ে। সেখানে সাংসদ ছিলেন ও আছেন তৃণমূলের সৌগত রায়। সাংসদ সৌগত রায় এবং বিধায়ক মদন মিত্রের সঙ্গে জয়ন্ত সিংয়ের ঘনিষ্ঠতার চলমান প্রামাণ্যচিত্র প্রকাশ হয়ে গেছে। মুখরক্ষা করতে তাঁরা এখন জয়ন্ত সিংয়ের সঙ্গে দূরত্ব দেখাতে ব্যস্ত। মদন মিত্র যখন বলছেন, তাঁর নিজেরই ভয় করছে কারণ তাঁকেও ওই দুষ্কৃতীরা যখন তখন  আক্রমণ করতে পারে! 
আবার পরের দিনই, বুধবার, সাংসদ সৌগত রায় বলেন, জয়ন্ত সিং-কে জেল থেকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা না করলে, তাঁকে গুলি করা হবে বলে ভোর রাতে দু’বার হুমকি দিয়ে ফোন এসেছে। বৃহস্পতিবার মদন মিত্রও দাবি করেন, তাঁকেও নাকি হুমকি দিয়ে ফোন করা হয়েছে।
আবার কামারহাটি পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সুবীর বসু সংবাদ মাধ্যমে বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, জয়ন্ত সিং এবং তার একসময়কার সাগরের অরিত্র ঘোষ ওরফে বুম্বা যৌথভাবে মধ্যরাতে তার বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। বাড়িতে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। সেই সময়ে তৃণমূলের ওপরের স্তরো অভিযোগ করেও বিচার পাননি।
ভোটলুটের জন্য এই দুষ্কৃতী বাহিনীকেই কাজে লাগিয়েছে তৃণমূল। কীর্তিকলাপ একের পর এক ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সব মিলিয়ে তৃণমূলের অবস্থা এখন ল্যাজেগোবরে। এদিকে নাবালকের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের অভিযোগে বৃহস্পতিবারও জয়ন্ত সিংয়ের এক সাগরেদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
পুকুরের একটি অংশ ভরাট করে এবং অন্যের জমি দখল করে জয়ন্ত সিং-র প্রাসাদোপম বাড়ি, একটি বাড়িতে ছয়মাস আগে ভোর তিনটের সময় তার সাগরেদের হামলা, ক্লাবে যুবক-যুবতীকে তুলে নিয়ে গিয়ে অত্যাচারের ভিডিও সংবাদ মাধ্যমের প্রচার হয়ে গিয়েছে। জয়ন্ত সিংয়ের প্রাসাদোপম বাড়ির বিষয়ে বৃহস্পতিবার মুখ খোলেন আড়িয়াদহের দুজন বাসিন্দা। তাঁরা অভিযোগ করেন যে, তাঁদের কিছুটা  জমি বেদখল করে জয়ন্ত সিং প্রাসাদ বানিয়েছে।
তিন বছর আগে তালতলা ক্লাবে চ্যাংদোলা করে লাঠির বাড়ি মারার যে ভিডিও প্রকাশ হয়েছে, সে সম্পর্কে রাজ্য সরকারের উপদেষ্টা আলাপন ব্যানার্জি বলেন, নির্যাতন কোনও মহিলার উপরে হয়নি। পুলিশ অনুসন্ধান করে জেনেছে, আসলে নির্যাতিত একজন পুরুষ। সরকারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবারের বিবৃতিতে এও বলা হয়েছে যে, জয়ন্ত সিং একজন দাগী এবং তাকে ২০১৬’র পর থেকে পুলিশ পাঁচবার গ্রেপ্তার করেছে। 
ঘটনা হলো বুধবার বারাকপুর কমিশনারেট জানিয়েছিল যুবতীর ওপরও মারধর হয়েছিল কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সরকারের তরফে আগেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হলো। আড়িয়াদহ এবং সংলগ্ন অঞ্চলের মানুষ যদিও স্পষ্টই বলছেন, তৃণমূলের মদত ছিল বলেই সব জেনেও চুপ করে ছিল পুলিশ। জনমতের চাপে এখন নামতে বাধ্য হয়েছে। তিন বছর আগের অত্যাচার পুলিশকে জানতে হচ্ছে সদ্য বেরিয়ে পড়া ভিডিও দেখে, এই যুক্তি বিশ্বাসযোগ্য নয়।

Comments :0

Login to leave a comment