Hunger

ক্ষুধার দেশ

সম্পাদকীয় বিভাগ

‘বিশ্বগুরুর’ ৫৬ ইঞ্চির দাপটে বিশ্বে ভারতের সম্মান-মর্যাদা কতটা বেড়েছে বা শক্তি-ক্ষমতা কতটা বেড়েছে তার কোনও তথ্য বা পরিসংখ্যান কোনও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রকাশ করেনি। তবে রাষ্ট্রসঙ্ঘের অধীন খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) তাদের সর্বশেষ বিশ্ব ক্ষুধা সূচক প্রকাশ করে স্পষ্ট করে দিয়েছে মোদী জমানায় ভারতে খাদ্য সঙ্কট ক্রমাগত ঘণীভূত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় দেশবাসীর মুখে খাদ্যের জোগানে, উচ্চতার নিরিখে শিশুর ওজন, বয়সের নিরিক্ষে ‍‌শিশুর উচ্চতা ইত্যাদি প্রশ্নে ভারত দ্রুত পিছিয়ে পড়ছে। ২০২২ সালের জন্য যে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক প্রকাশিত হয়েছে তাতে ভারতের স্থান হয়েছে তলানিতে। ‘বিশ্বগুরুর’ দেশ উন্নত দেশ তো দূরের কথা, বিকাশমান দেশগুলির ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলিও ভারতকে বহু পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে মোদীর ভারতের স্থান হয়েছে মোট ১২১টি দেশের মধ্যে ১০৭তম স্থানে। হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী মোদী-শাহরা গর্ব করতে পারেন এই ভেবে যে দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র আফগানিস্তানের দু’ধাপ আগে আছে ভারত। মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত শ্রীলঙ্কার ৬৪তম, নেপাল ৮১তম, বাংলাদেশ ৮৪তম। যে পাকিস্তানকে এত তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয় সেই পাকিস্তান ক্ষুধা সূচকে মোদীর ভারত থেকে ৮ ধাপ এগিয়ে। মোদীরা আরও গর্বের সঙ্গে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক হিংসা ও বিভেদ ছড়াতে পারেন এই ভেবে যে দেশের নাগরিকদের মুখে খাবার তুলে দেবার যোগ্যতায় বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ আফ্রিকার রোয়ান্ডা, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া, কঙ্গো, সুদান প্রভৃতি দে‍‌শের আগে আছে। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদীরা আমেরিকা, ইউরোপ, এমনকি চীনের সঙ্গেও অন্ন সংস্থানে প্রতিযোগিতায় নেই। তারা লড়াই করছে ইথিওপিয়া, সুদানের মতো দেশগুলির সঙ্গে। দেশবাসীর মুখে খাবার তুলে দেবার যোগ্যতা যাদের নেই তারা দেশবাসীর ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলে কোন অধিকারে। আসলে অপদার্থতাই এই হিন্দুত্ববাদীদের একমাত্র যোগ্যতা।
মোদীর ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ হতে পারে, মোদী প্রিয় বন্ধু বিশ্বের দ্বিতীয় ধনকুবের হতে পারে। কিন্তু ক্ষুধা সূচকে সামনে আসতে পারে না। অথচ চীন জায়গা করে নিয়েছে ১ থেকে ১৭তম স্থানের মধ্যে। কে কোন স্থান পাবে তা নির্ভর করে দেশের সরকারের নীতির ওপর। দে‍‌শের জনগণকে কোন চোখে দেখে সেই দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। মোদী সরকারের নজর জনগণের দিকে নেই। তারা দেশের নাগরিককে ভোটার হিসাবে মান্যতা দেয়। মানুষ হিসাবে নয়। তাই নাগরিকদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, রুজি রোজাগার, সচ্ছল জীবনে তাদের আগ্রহ নেই। তাদের মূল আগ্রহ বড়লোকদের সেবা করা, তাদের আয় ও সম্পদ দুরন্তগতিতে বাড়ানো। তাই মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে দেশে শত শত বিলিওনিয়রের জন্ম হয়েছে। মোদী বন্ধু আদানি একজন পাতি ব্যবসায়ী থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী হয়েছেন। আর দেশে দরিদ্রের সংখ্যা বেড়েছে। ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দরিদ্রের বাসভূমি।
 

Comments :0

Login to leave a comment