Great Bengal Bakery

গায়ের জোরে বেকারির গেটে ভেঙে পাঁচিল তুলে দিল শাসক দলের বাহিনী

রাজ্য কলকাতা

গায়ের জোরে বেকারির গেটে পাঁচিল তুলে দিল শাসক দলের বাহিনী। চাপ দিয়ে বেকারির গেটে পাঁচিল তুলে দিল শাসক দলের বাহিনী। ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতায়। ৪, প্রিন্স আনওয়ার শাহ রোড। 

৬৫ বছর আগে প্রদীপ সাহার বাবা প্রয়াত রামবিলাস সাহা ‘গ্রেট বেঙ্গল বেকারি’ তৈরি করেন। বিস্কুট, রুটি তৈরি হতো সেখানে। প্রথম দিকে ভাড়া ঘরে চলতে থাকে এই বেকারি। পরবর্তী সময় বাড়ির মালিকানা ভাগ হলে একটা অংশ কিনে নেন প্রদীপ সাহা। বাকি অংশে তিনি ভাড়া ছিলেন। প্রদীপ সাহার কথায়, ‘‘আমার বাবা যখন ব্যাবসা শুরু করেন তখন প্রথম দিকে ভাড়া ছিলেন। তারপর বাড়ি মালিকদের সম্পত্তি ভাগ হলে একটা অংশ বাবা কিনে নেন। বাকিটা ভাড়া দিতে হতো।’’

রামবিলাস সাহা মারা যাওয়ার পর প্রদীপ সাহা ব্যাবসা দেখতেন। কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে তাঁর ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে জায়গা ছাড়ার জন্য। কিন্তু তিনি জায়গা না ছাড়ায় সোমবার গায়ের জোরে বেকারি বন্ধ করে দেয় শাসক দলের গুণ্ডা বাহিনী। সূত্রের খবর বাড়িটির ওপর নজর পড়েছে শাসক দলের সিন্ডিকেট বাহিনীর। তবে এই প্রথম নয়। বেকারি তোলা নিয়ে ৬০ বছর মামলা চলেছে আলিপুর আদালতে। প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘৬০ বছর ধরে আইনি লড়াই চলেছে আদালতে। ২০১৬ সালে আলিপুর আদালত মামলা খারিজ করে দেয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ভাড়া ছাড়ার জন্য বার বার চাপ দেওয়া হচ্ছিল বলে আদালত থেকে ইনজাঙ্কশনের ওর্ডার বার করি। ১৫ মার্চ পর্যন্ত ওই ওর্ডার কার্যকর ছিল। কিন্তু ১৩ মার্চ আমাদের বার করে দিয়ে পাঁচিল তুলে দেওয়া হয় বেকারির গেটে।’’

ঠিক কি ঘটনা ঘটে সোমবার?

বেকারি মালিকের কথায় স্থানীয় একজন প্রমোটারের নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জন ছেলে এসে জোড় করে তাঁকে এবং শ্রমিকদের কারখানার বাইরে বার করে দেয়। তারপর ভাটিতে এবং কারখানার গেটে পাঁচিল তুলে দেয় তারা। সোমবার শুধু নয়। গত নভেম্বর মাসেও বেকারি বন্ধ করার চেষ্টা করা হয়। প্রদীপ সাহা জানিয়েছেন গত ২১ নভেম্বর তাঁর বেকারিতে ঢুকে জায়গার দখল নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কারখানার চারটি সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে দেওয়া হয়। সেই সময় চারু মার্কেট থানা, ডিসি সাউথকে ঘটনাটি জানানো হলেও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। এবারও তিনি পুলিশে বিষয়টি জানিয়েছেন কিন্তু কোন কাজ হয়নি এখনও পর্যন্ত।

হঠাৎ করে বেকারি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সমস্যায় পড়েছেন মালিক থেকে শ্রমিক সকলেই। প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘৪০ জন শ্রমিক বেকারিতে কাজ করতেন। তাঁদের সংসার আমাদের সংসার চলতো এই বেকারি থেকে। এখন জোড় করে বেকারি বন্ধ করে দেওয়ায় অর্থীক সংঙ্কটের মুখে পড়তে হয়েছে এতো গুলো পরিবারকে।’’  

বেকারিতে যা টাকা, ময়দা, চিনি ছিল তা সব সোমবার দিন অভিযুক্তরা নিয়ে চলে গিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। 

গণশক্তি ডিজিটালের পক্ষ থেকে যখন প্রদীপ সাহার সাথে যোগাযোগ করা হয় তখন তিনি আলিপুর আদালতে। তিনি বলেন, ‘‘এখন আলিপুর আদালতে রয়েছি। আমরা কোন বেআইনি কাজ করিনি। ৬০ বছর মামলা চলার পর আদালত মামলা খারিজ করে দিয়েছিল।’’ আইনি পথে লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন ‘গ্রেট বেঙ্গল বেকারি’র প্রদীপ সাহা।

যেই এলাকায় ঘটনা ঘটেছে সেটি মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের বিধানসভা কেন্দ্র টালিগঞ্জ। মাঝে মধ্যে ওই এলাকায় বাড়ি, জমি দখল করে ফ্ল্যাট বানানোর ঘটনা সামনে এসেছে। এই বেকারি তুলে দিয়ে বাড়ি ভেঙে প্রমোটিঙ করার পরিকল্পনা শাসক দলের সিন্ডিকেট বাহিনী নিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। 

Comments :0

Login to leave a comment