Tribal Festival Badna Parab

বাঁদনা পরবের জৌলুস হারাচ্ছে খনি অঞ্চল

জেলা

ছবি- খনি অঞ্চলে আদিবাসীপাড়ায় বাঁদনা পরবে সাঁওতাল নৃত্য। ছবি- মলয়কান্তি মণ্ডল।

মলয়কান্তি মণ্ডল  রানিগঞ্জ

ম্রিয়মাণ এবার কয়লাঞ্চলের আদিবাসীদের বাঁদনা পরব। বাড়ির ছেলেরা পরবের দিনে ঘরে নেই। ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে বৈদ্যনাথ মুর্মু, সামেল মুর্মু, বুদি হাঁসদারা এখন পরিযায়ী শ্রমিক। সুদূর চেন্নাই থেকে বাঁদনা পরবে বাড়ি ফিরতে পারে নি। কয়লাখনি এলাকার বেশিরভাগ আদিবাসী মানুষের হাতে কাজ নেই। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। ইট ভাটা গুলিতে কাজ শুরু হয়নি। সংসারে অনটন। নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থা। দিনমজুরির কাজও জুটছে না। সিঁদুরে মেঘ দেখছেন আদিবাসীরা। যারা পরের জমিতে নিজের গতর খাটিয়ে অল্প চাষাবাদ করেছিলেন সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের ফলনও ভালো হয়নি। কপালে চিন্তার ভাঁজ। সারা বছর চলবে কি করে ? তাই এবার কয়লাঞ্চলের অধিকাংশ আদিবাসী পাড়ায় যেন হারিয়ে গিয়েছে বাঁদনা পরবের সেই চিরাচরিত উচ্ছ্বাসটুকু। রেবু মুর্মু জানান, ‘‘রাঢ বাংলা ও সাঁওতাল পরগণার নিজস্ব এক লৌকিক উৎসব হল বাঁদনা পরব। যা বাংলা তথা দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং প্রাচীনতম সংস্কৃতির নির্দশন। এর মধ্যে গ্রাম্য জীবনবাংলার ছবি ফুটে ওঠে। আদিবাসী ভাষায় এটি ‘‘সহরায়’’ উৎসব নামে পরিচিত।


বাঁশড়ার মঙ্গল হেমব্রমের কথায়, কয়লাঞ্চলের মূলবাসীদের এই পরবের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে চাষাবাদ ও পঞ্চায়েতের ১০০ দিনের কাজ ও দিনমজুরি। এখন কোনও কাজ নেই।  তাই নিয়মরক্ষার আচার - অনুষ্ঠানটুকু হচ্ছে। আনন্দ উৎসবে ভাঁটা পড়েছে। আদিবাসী পাড়াগুলিতে অল্প খরচে নিজেরাই সাজিয়ে তুলেছে। বাড়ির মেয়েরা নাচ, গানে শামিল হলেও তাদের মন খারাপ। বাড়ির পুরুষেরা বাইরে। চেন্নাই, তামিলনাড়ু, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশে কাজ করতে গিয়ে তাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক।
বামফ্রন্ট সরকার গ্রামের গরিব মানুষের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করেছিল। এখন পঞ্চায়েত তাদের পাশে নেই। সরকার আদিবাসীদের শংসাপত্র দেয়নি। আঙুলের ছাপ মিলছে না এই অজুহাতে রেশন থেকে নাম বাদ চলে যাচ্ছে। আদিবাসী ছাত্ররা মেধা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছে না। তৃণমূল সরকারের আমলে আদিবাসীদের জল জমি জঙ্গলের অধিকার বিপন্ন। রুটিরুজি আক্রান্ত। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। এই আর্থিক অনটনের মধ্যেও  নিজস্ব  আচার অনুষ্ঠান, জীবনযাপন, ভাষা, সংস্কৃতি ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে আদিবাসীরা। 
 

Comments :0

Login to leave a comment