গল্প | নতুনপাতা
খুশির চাঁদ
কৃশানু ভট্টাচার্য্য
হঠাৎ করেই ক্লাসরুমের মধ্যে অসুস্থ বোধ করতে লাগলো রেজাউল। সপ্তম শ্রেণী ক বিভাগ। স্কুলের বাছাই করা ভালো ছেলেরা সব সময় এই ক বিভাগের ঘরে। কাজেই শোরগোল পড়ে গেল সারা স্কুলেই। মাস্টারমশাইদের যত্নে একটু সুস্থ হওয়ার পর রেজাউলের কাছ থেকে জানা গেল ওর রোজা চলছে।
সহপাঠীদের তীব্র পীড়াপীড়েতেও রেজাউলের মুখে এক টুকরো খাবার বুঝতে পারল না কেউ। টিফিনের পরের পিরিয়ড এলেন সনাতন ভট্টাচার্য্য। গোটা স্কুলে সংস্কৃতের এই মাস্টার মশাইকে সকলে খুব ভয় পায় । শব্দরূপ, ধাতুরূপ নিয়ে গোটা ক্লাসটা কেই তিনি রীতিমতো আতঙ্কে রাখেন। অবশ্য রেজাউল তাঁর খুব প্রিয় ছাত্র। কারণ এমন কোন দিন নেই যেদিন রেজাউল এর কাছ থেকে তিনি তার প্রশ্নের চাহিদামত উত্তর জানতে পারেন নি।
ক্লাসে এসেই সনাতন জিজ্ঞেস করলেন, সেহরিতে কি খেয়েছিলিস? আগের রাতে মা রান্না করে রেখেছিলেন সেহেরি। সূর্য ওঠার আগে সেই খাবার খেয়ে আবার একটা ঘুম। রমজান মাসে এটাই ওদের অভ্যাস। এর আগে কখনো রেজাউল রোজা রাখেনি। এবার বাড়ির বড়দের সঙ্গে সেও সামিল হয়েছে খানিকটা উৎসাহে আর খানিকটা নতুন কিছু জানার জন্য। ছোট্ট শরীর সংযমের এই কঠিন পর্বটাকে নিতে পারেনি বলেই যত বিপত্তি। মাস্টার মশাই বললেন, এই সময়টা শরীর একটু খারাপ লাগলে দু একদিন স্কুলে না আসলেও হবে। বন্ধুদের কাছ থেকে পড়াটা একটু জেনে নিতে হবে। ক্লাসে অন্য ছেলেদের সকলের চোখে একটা অদ্ভুত রকমের কৌতূহল। পড়া দিয়ে পড়া না পেলে অগ্নিশর্মা হয়ে যান তার এই হেন আচরণ!
সনাতন বললেন, এই মাসটা ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে একটা ত্যাগের মাস। সবার বিশ্বাস এই মাসেই কোরআনের মূল সূত্রগুলো জানতে পেরেছিলেন হযরত মুহাম্মদ। আর সেই কারণেই তীব্র গরমের এই মাসটাতেই উপবাস এবং উৎসবের প্রস্তুতি।
সব সময় একটু বেশি প্রশ্ন করা কার্তিক বলে উঠলো, উপবাস তো আমাদের পুজোর সময়ও হয়। কালীপুজোর রাতে আমার মা সারা রাত্তির পূজো না শেষ হওয়া পর্যন্ত কিছু খান না। এই উপবাস কি সেইরকম? সনাতন জবাব দিলেন, অনেকটা তাই। পৃথিবীর যে ধর্মেই যাওনা কেন, সব ধর্মেই আছে ত্যাগের কথা, আছে ভালোবাসার কথা, আর রয়েছে উৎসবের আনন্দ।
মাসের বাকি দিনগুলো কাটলো যেমন তেমন করেই। রেজাউলের মধ্যে দু একদিন স্কুলে আসেনি ,বাকি দিনগুলোতে এসেছিল সে রকম কোনো বিপত্তি আর হয়নি। মাস শেষ হতেই এল উৎসব। ঈদ উৎসব- সামনে যদিও পরীক্ষা তবুও অনেকেই গেল রেজাউলদের বাড়ি- গত রাতে রেজাউল দেখেছে ঈদের চাঁদ। গোটা মহল্লায় শুধু খুশি আর আনন্দ। আর সেই আনন্দে সামিল হয়ে আলিঙ্গনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে।
Comments :0