Editorial

বোঝাপড়ার ভিত্তিতে দাঙ্গার ছক

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial

রামনবমী কি কোনও ধর্মীয় উদ্‌যাপনের দিন নাকি রাজনীতির পেশি শক্তি আস্ফালনের দিন, এই গুরুতর প্রশ্নটি জোরালোভাবে তোলার সময় এসেছে এবং তার জবাব দেবার দায় বর্তাচ্ছে তথাকথিত রামভক্ত সশস্ত্র গেরুয়াধারী দুবৃতদের এবং অবশ্যই সরকারের উপর। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে তৃণমূলের রাজত্ব কায়েম হবার পর থেকে এরাজ্যে প্রতিবছর রামনবমীতে গেরুয়া বাহিনীর উন্মত্ত হা‍‌তে রামের জয়ধ্বনি দিয়ে তাণ্ডব নৃত্য করে গেরুয়া বাহিনী। এটা নাকি হিন্দুত্ববাদীদের ধর্মাচরণ ও রাম বন্দনার পদ্ধতি। এটা যদি ধর্মাচরণের নমুনা হয় তাহলে কোনও সভ্য গণতান্ত্রিক সমাজে এদের জায়গা হতে পারে না।


কোনও সত্যিকারের ধার্মিক বা ধর্মবিশ্বাসী ধর্মের নামে এমন সশস্ত্র মিছিলের তাণ্ডব নৃত্যে অংশ নেন না। এটা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির পৃষ্ঠপোষিত কর্মসূচি। সঙ্ঘ পরিবারের পরিকল্পনায় আগে থেকে ছক কষে রামনবমীর মিছিলের আয়োজন করা হয়। লক্ষ্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করে দাঙ্গ বাঁধানো। তাই সশস্ত্র, আক্রমণাত্মক ও হিংসাত্মক এই মিছিল নিয়ে যাওয়া হয় মুসলিম প্রধান এলাকাতে যাতে বিরোধী, সংঘাত ও সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে উঠে। তাহলে সেই বার্তা ঝড়ের গতিতে সর্বত্র ছড়িয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের উর্বর জমি তৈরি করা যাবে। বিজেপি সেই জমিতে চাষ করে রাজনৈতিক ফায়দা তুলবে।
প্রতিবছরের মতো এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হাওড়াসহ রাজ্যের প্রায় সব জেলায় একাধিক জায়গায় আরএসএস-বিজেপি’র তৈরি পরিকল্পনা ও ছক অনুযায়ী গেরুয়া বাহিনী রাস্তায় নেমেছিল সশস্ত্র মিছিল নিয়ে। দাঙ্গাবাজদের থেকে এদের আলাদা করে চেনার উপায় নেই। মৌখিক ও শারীরিক ভাষা বুঝিয়ে দেয় এরা দুষ্কৃতী ছাড়া আর কিছুই নয়।


দুষ্কৃতীরা দুষ্কর্ম করবে, হিংসা ছড়াবে, দাগী অপরাধীদের মতো কাজ করবে সেটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক শক্তি যখন তাদের পেছনে আছে তখন তাদের দুষ্কর্ম হবে পূর্ব পরিকল্পিত এবং বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অবাক হতে হয় এত কিছু জানা ও বোঝার পরও এর মোকাবিলায় তৃণমূল সরকারের অদ্ভুত নিস্পৃহতা। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যতেই পরিষ্কার গোটা পরিকল্পনাটাই পুলিশ জানত। কিন্তু সময় মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়নি; উত্তেজনা ছড়াবার এবং গোলমাল করার সুযোগ দিয়েছে। অনুমতি না থাকা সত্ত্বেও মুসলিম এলাকায় গেরুয়া বাহিনীকে সশস্ত্র মিছিলে বাধা দেওয়া হয়নি। ঘটনা ঘটে যাবার পর মুখ্যমন্ত্রী তড়পাচ্ছেন, কাউকে ছেড়ে কথা বলবেন না। কিন্তু আগে থেকে জানা সত্ত্বেও ঘটনা ঘটতে দেওয়া হলো কেন মুখ্যমন্ত্রী তার জবাব দেননি। রহস্য এখানেই।


আরএসএস-‍‌বিজেপি’র ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতির সওয়ারি তৃণমূলও। ধর্মীয় বিভাজন করে বিজেপি চায় হিন্দু ভোট এককাট্টা করে নিজেদের থলিতে ভরতে। আর তৃণমূল চায় সব সংখ্যালঘু ভোট তাদের ঘরে আসুক। তাই মুখে হম্বিতম্বি করলেও তৃণমূল চেয়েছিল সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি হোক। তাই পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করেনি। সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের তৃণমূলের সমর্থন দ্রুত কমার আশঙ্কায় তৃণমূল এই দোলাচলের খেলায় নামে। আবার রাজ্য রাজনীতিতে বামপন্থীদের উত্থানের পূর্বাভাস দেখে এবং বাম-কংগ্রেস জোটের ইতিবাচক প্রবণতা দেখে উদ্বেগ বেড়েছে বিজেপি-তৃণমূল উভয়ের মধ্যেই। তাই ফের তৃণমূল-বি‍‌জেপি’র লড়াইকে সামনে এনে রাজ্যজুড়ে তৃণমূল-বিজেপি বি‍‌রোধী বিকাশমান আন্দোলনকে আড়াল করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ব্যবহার করার চেষ্টা হয়েছে রামনবমীতে।

Comments :0

Login to leave a comment