সারাদেশে একের পর এক ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটছে। করমণ্ডল এক্সপ্রেস, রাঙাপানিতে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, চক্রধরপুরে হাওড়া-মুম্বই মেল দুর্ঘটনা। বুধবারই রাঙাপানিতে মালগাড়ি লাইনচ্যুত হয়েছিল। পরপর দুর্ঘটনায় নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। রেল সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে রেল মন্ত্রককে। তবুও হুশ ফিরছে না রেলের। এর মধ্যেই হুগলির শিবাইচণ্ডী স্টেশনে কাছাকাছি চলে আসে বন্দে ভারত এবং একটি লোকাল ট্রেন! একই লাইনে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস এবং লোকাল ট্রেন ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। যদিও ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি গণশক্তি ডিজিটাল। তবে পূর্ব রেলের তরফে দাবি করা হয়েছে, অটোমেটিক সিগন্যাল জোনো এগুলো হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিয়ো ছড়িয়ে যাত্রীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা গেছে গত মঙ্গলবার সকালে হাওড়া ছেড়ে এনজিপি যাওয়ার সময় বন্দে ভারত ট্রেনটি দাঁড়িয়ে পরে শিবাইচন্ডী স্টেশনে ঢোকার হোম সিগন্যালে। একই লাইনে চেরাগ্রামে ঢোকার আগে একটি লোকাল ট্রেনও ওই সময় হোম সিগন্যালে দাঁড়িয়ে ছিল। বন্দে ভারত ট্রেনটিকে শিবাইচন্ডী স্টেশনে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। পরে লোকাল ছেড়ে যাওয়ার পর বন্দে ভারত গন্তব্যে রওনা দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা ওই ঘটনাটিকে সঙ্গে সঙ্গে তাদের মুঠো ফোনে বন্দি করে নেন। এই ভিডিও সোশাল মিডিয়া ভাইরাল হয়।
বার বার রেল দুর্ঘটনা ঘটছে দেশে। রেলের গাফিলতির অভিযোগ তুলে রেল মন্ত্রীকে কাঠগোড়ায় তুলছে বিরোধীরা। রেলে নিয়োগ নেই। ট্রেনের চালকেরা অত্যাধিক কাজের চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। রেলের সুরক্ষা ব্যবস্থা অবহেলা রয়েছে বলে রেল মন্ত্রীকে দুষছেন রেল যাত্রী থেকে সধারণ মানুষও। যদিও বৃহস্পতিবার লোকসভায় রেল মন্ত্রী দাবি করেছেন বিজেপি সরকারের ১০ বছরে ৬৮ শতাংশ কমেছে রেল দুর্ঘটনা। মন্ত্রী দাবি এও করেছেন যে কংগ্রেস ইউপিএ সরকারের সময়, বার্ষিক গড় দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ১৭১। এখন ০.১৯ থেকে ০.০৩ এ নেমে এসেছে। এদিন লোকসভায় রেল সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে তত্য পরিসংখ্যান পেশ করে মন্ত্রী দাবি করেছেন ইউপিএ সরকারের সময় ৪ লক্ষ ১১ হাজার পদে নিয়োগ হয়েছিল। আর মোদী সরকারের ২০১৪ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ৫ লক্ষ ২ হাজার পদে নিয়োগ হয়েছে রেলে। আগামীদিনে আরও নিয়োগ হবে। তিনি আরও দাবি করেন, আগে সংগঠিতভাবে নিয়োগ হত না, এবার চাকরি প্রার্থীদের জন্য ক্যালেন্ডারও প্রকাশ করা হয়েছে। চাকরি প্রার্থীদের সুবিধার জন্য রেলের 'অ্যানুয়াল ক্যালেন্ডার' ঘোষণা করা হয়েছে এই দাবি করে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব দাবি করেছেন বছরে মোট ৪ বার শূন্যপদ ঘোষণা করা হবে। জানুয়ারি, এপ্রিল, জুলাই ও অক্টোবর মাসে হবে নিয়োগ। এবছর এখনও পর্যন্ত ৪০ হাজার ৫৬৫ শূন্যপদে নিয়োগের কথা ঘোষণা করা হয়েছে বলে এদিন লোকসভায় রেলমন্ত্রী দাবি করেছেন। এদিন রেলে নিয়োগের দাবি জানালেও এর আগে সরকারই সংসদে স্বীকার করেছে যে রেলে প্রচুর শূন্যপদ পড়ে রয়েছে। চালক এবং কর্মীরাও পরপর ঘটনায় বিশ্রাম না পাওয়ার অভিযোগে সরব হয়েছেন বহু ক্ষেত্রে। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন রেলে যদি নিয়োগ হয়েই থাকে তবে দিনের পর দিন একটানা কাজ করতে হচ্ছে কেন রেলের গার্ড ও চালকদের। রেল দুর্ঘটনা ঘটলে রেল কর্তৃপক্ষ গোটা ঘটনা ধামাচাপা দিতে রেল কর্মীদের উপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে।
বন্দে ভারত এবং একটি লোকাল ট্রেনের ঘটনা প্রসঙ্গকে স্বাভাবিক ঘটনা বলে জানান পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র। তিনি জানান,‘‘অটোমেটিক সিগন্যাল জোনে এগুলো হয়। তাদের কাছেও প্রায়দিন খবর আসে একই লাইনে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকার। এটা কোনো বিষয় না।’’
Comments :0