প্রবীর দাস- স্বরূপনগর
ইছামতি নদীর জলে প্লাবিত হয়েছিল তরনীপুর সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। এবার যমুনার জলে প্লাবিত গ্রামকে গ্রাম। স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টির জলে জলস্তর বেড়েছে ৩-৪ ফুট। ফলে কোমড় সমান জলের তলায় জমি জিরেন ভিটে মাটি। চারঘাট, তেঁপুল মির্জাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত সহ সগুনা গ্রাম পঞ্চায়েতের আংশিক অংশ জুড়ে ইছামতি, যমুনা নদীর ধার বরাবর কৃষি নির্ভর এলাকার কয়েক হাজার বিঘা জমির আমন ধান, উচ্ছে বেগুন, পটল, কাঁকরোল জলের তলায়। চারঘাট থেকে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াতে ৮টি অটো রুট আছে। অধিকাংশ রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় বর্তমানে ২টি রুট দিয়ে অটো চলাচল করলেও আশঙ্কা যে ভাবে চূর্ণি নদীর জল ইছামতি নদীতে ঢুকছে এবং নদীয়ার কল্যাণী ঘোষপাড়া দিয়ে যমুনা নদীতে এসে মিশছে আশঙ্কা ২০০০ সালের সেই ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি ফিরে আসবে না তো? শুক্রবার এমনই আশঙ্কার কথা শোনালেন সিপিআই(এম) নেতা দেবাশীষ দত্ত। পাশাপাশি তিনি এও জানান বাংলাদেশ থেকে সোনাই নদী হয়ে জল ঢুকছে গোবিন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তরনীপুর কলোনী, নিশ্চিন্তপুর,পান্তাপাড়ায়। সেখানেও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক। চাপান্দার বিলের জলে ঢুকে স্বরূপনগর বাদুড়িয়া সীমান্তের কাহার পাড়া, দাসপাড়া জলমগ্ন। স্থানীয় চারঘাট বেসিক স্কুলে খোলা হয়েছে ত্রাণ শিবির। সেখানে আশ্রয় নিয়ে আছেন কাহার পাড়া দাসপাড়ার বাসিন্দারা।
টানা ১৫ দিন ধরে শ'য়ে শ'য়ে মানুষ জলবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন দিয়ারা গ্রামে। পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয় নি। মিলেছে শুধু প্রশাসনিক আশ্বাস। বলছেন জলবন্দি মানুষ। তাদের আরও অভিযোগ, ইছামতি যমুনা সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। আমাদের টাকা পয়সা চাল ডালের দরকার নেই। টিপির ঘাট উড়িয়ে দিয়ে সংস্কার করুক। ওই টিপির ঘাটের জন্য ফি বছর বৃষ্টির জলে জমি বাড়ি ফসল সব ডুবে যায়। বিপর্যস্ত হয় জনজীবন। শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যমুনা নদীর জলের চাপে প্লাবিত চারঘাটের দিয়ারা গ্রাম সহ একাধিক গ্রাম। ত্রান পাচ্ছেন না। অভিযোগ করলেন স্থানীয়রা।
প্রতিবেশী বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া স্বরূপনগর নদীমাতৃক ব্লক। এই ব্লকের পূর্ব সীমান্তে সোনাই নদী। মাঝ বরাবর বয়ে চলেছে ইছামতি নদী। ঠিক তার উল্টোদিকে চারঘাটের বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে যমুনা নদী। খরা মৌসুমে যমুনা সুতোর মতো মনে হলেও বর্ষার মৌসুমে প্রবল আকার ধারণ করে প্রতি বছরই। যমুনা নদী সংস্কারের অভাবে জল ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলিকে ভাসিয়ে দেয়। ভোগান্তির শিকার হয়ে পড়েন স্থানীয়রা। এ বছরও তার অন্যথা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল ইতিমধ্যে দিয়ারা গ্রামে ৭ শতাধিক পরিবার জলবন্দী হয়ে আছেন। এলাকা জলমগ্ন হওয়ার ফলে বিষাক্ত সাপ থেকে শুরু করে পোকামাকড়ের উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যেই স্বরূপনগরে দুজনের সাপের কামড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। অসহায়তার শিকার হয়ে পড়েছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জলবন্দী অবস্থায় ১৫দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও এলাকায় পৌঁছায়নি ত্রাণ সামগ্রী। এমনটাই অভিযোগ স্থানীয়দের। এই ব্যাপারে চারঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ‘‘এলাকা পরিদর্শন করার পর তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে লোকাল প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। যতটুকু ত্রান সামগ্রী পাওয়া গেছে সেটা স্থানীয়দের মধ্যে প্রদান করা হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।’’
বিষয়টি ব্লক প্রশাসনের দৃষ্টি গোচরে আনলে বিডিও জানান, ‘‘প্রথমত আমরা ইছামতির দুই কূলে কোন অবস্থাতেই যাতে বাঁধ না ভাঙে তার প্রতি দৃষ্টি রাখছি। তার সাথে প্রাথমিকভাবে সবার কাছে আমরা ত্রাণ পৌঁছতে না পারলেও আমরা বিষয়টির উপর নজর রেখেছি।’’ প্রত্যেকেই ত্রাণ পাবে বলে তিনি আশ্বাষ দেন। তিনি আরও জানান, মেডিকেল টিম থেকে শুরু করে পানীয় জলেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে ইতিমধ্যে।
Comments :0