প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়
বাংলা ছবি নিয়ে যে ইদানীং বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সমকালীন সামাজিক নানা সমস্যা, সম্পর্কের জটিলতা, আন্তর্জাতিক বেশ কিছু বিষয়ও এখনকার বাংলা ছবিতে এসে পড়েছে। তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে একেবারে সাদামাটা বিষয় নিয়ে ছবি। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবন ছুঁয়ে রয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন, ছবিগুলি মানুষকে স্পর্শ করতে পারছে। কারো বা মত, বেশিরভাগ ছবিই খুব একটা বেশিদিন চলছে না। যার প্রমাণ থাকছে প্রেক্ষাগৃহগুলিতে। তবে এই সবকে ছাপিয়ে আজকের সিনেমা বাজারে এসে পড়েছে বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্ররা। সেই সব গোয়েন্দারাই নাকি বাজার মাত করে রাখছেন। সিনেমা জগতের কেউ কেউ আপাতত গোয়েন্দা ছবিতেই ভরসা রাখছেন। তবে একনাগাড়ে চলতে থাকলে, খুনের ঘটনায় গোয়েন্দাদের ক্লান্তি না থাক, দর্শকদের মধ্যে ক্লান্তি আসতে বাধ্য।
বিশ্বখ্যাত গোয়েন্দা শার্লক হোমসকে একটু ছুঁয়ে যাওয়া যাক। হোমসের ব্যাপ্তি সম্পর্কে নতুন কোনও কথা বলার নেই। সব কাহিনিই গোয়েন্দা পাঠকদের বহুবার পড়া। অনেক চলচ্চিত্র হয়েছে। বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন অভিনেতাদের নিয়ে। একটা তথ্যে কয়েক বছর আগের হিসাবে দেখা যাচ্ছে আজ পর্যন্ত ১২৫ জনেরও বেশি নামী হলিউডি অভিনেতা শার্লক হোমসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আশ্চর্যের যে প্রায় প্রত্যেকেই সফল!
অবশ্য বিদেশি চলচ্চিত্র সমালোকদের ভিন্ন মতও রয়েছে। তাঁদের মতে, আর্থার কোনান ডয়েলের হোমসকে নিয়ে অসাধারণ কাহিনিগুলোই জনপ্রিয়তার কারণ। বাংলার গোয়েন্দাদের জনপ্রিয়তাও কিন্তু কম নয়। প্রতিটি ঘরের মানুষই চেনেন ব্যোমকেশ, কিরীটী, ফেলুদাকে। তাই বাংলা ছবিতে কয়েক দশক আগেও ঘুরে ফিরে এসেছে কিরীটী বা ব্যোমকেশ। যদিও যতটা বেশি এসেছে ব্যোমকেশ ততটা আসেনি কিরীটী। আর সবার থেকে বাংলার আবালবৃদ্ধবনিতার কাছে অত্যধিক পরিচিত ফেলুদা মানে প্রদোষ মিত্তির। এই জনপ্রিয়তার পিছনে আসল হাতটি ছিল স্রষ্টার, অর্থাৎ সত্যজিৎ রায়ের।
সত্যজিৎ রায় প্রয়াত হবার পর সেই দায়িত্ব হাতে তুলে নেন তার সুযোগ্য পুত্র সন্দীপ রায়। প্রথম বার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় তারপর সব্যসাচী চক্রবর্তী। দু’বার ফেলুদার চরিত্রে অভিনেতার পরিবর্তন হয়েছে, তবে খামতি নেই জনপ্রিয়তায়।
হোমস বা ব্যোমকেশের সিনেমাও তাই। অভিনেতা পরিবর্তন হলেও জনপ্রিয়তায় ঘাটতি পড়েনি।
পর পর কয়েকটি গোয়েন্দা ছবি ‘হিট’ হয়েছে, মানে চলেছে। এরই মধ্যে আবার গোয়েন্দা ছবি আসত চলেছে। স্টুডিও’তে গেলে এই একই বার্তা শোনা যাবে। কিন্তু হঠাৎ করে গোয়েন্দা ছবি পছন্দ করছেন কেন দর্শকরা? তারও কোনও রহস্য আছে কী?
কয়েকজন পরিচালক ও দর্শক সব ধরনের দর্শক গোয়েন্দা ছবি দেখেন। এখানে দর্শরা তেমন ভাবে ভাগ হয়ে যান না। পরিবারের সবাই এই সব ছবি উপভোগ করতে পারেন। অন্যান্য ছবির ক্ষেত্রে তা হয় না। আপনা থেকেই দর্শক ভাগ হয়ে যায়। স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবির কয়েকজন পরিচালকও বললেন যে তাঁরা গোয়েন্দা গল্প নিয়ে ছবি করতে চাইছেন।
তবে এরই মধ্যে বাংলা ছবিতে অন্য ধরনেরও ‘এক্সপেরিমেন্ট’ চলছে। আবার আসতে চলেছে ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ।’ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত সেই বিখ্যাত ছবি। তবে কনসেপ্ট সম্পূর্ণ আলাদা। শুটিং চলছে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যের চরিত্রের অভিনেতাও থাকছেন। গোয়েন্দা ছবির জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এই ধরণের নতুন ভাবনার ছবি আলাদা বাজার রয়েছে। আর কয়েক মাস পরেই তার প্রমাণ হয়ত মিলে যাবে।
Comments :0