CPIM State Secretary Md-Salim

বোমা-বন্দুক দিয়ে আর রোখা যাবে না গ্রামের মানুষকে সাংবাদিক সম্মেলনে সেলিম

রাজ্য

MD Salim Press Conference

গ্রাম জাগছে, বোমা-বন্দুক দিয়ে গ্রামের মানুষকে আর রোখা যাবে না। নভেম্বর মাস জুড়ে গ্রামবাংলায় পদযাত্রার অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটি এই ইতিবাচক ঘটনাকে লক্ষ্য করেছে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের দুই দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকের শেষে পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, গ্রামে গ্রামে আন্দোলন-সংগ্রামের পর্যালোচনা করে রাজ্য কমিটি অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। আন্দোলনের এই ধারাকে আমরা ডিসেম্বর মাসেও অব্যা হত রাখব এবং আরও নিবিড় করে তোলা হবে। রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলা পদযাত্রা থেকে এবার ঘরে ঘরে উঠোনে পৌঁছে যেতে হবে, বৈঠকি সভা করতে হবে। সেই সঙ্গে গণসংগ্রহও চলবে। স্থানীয় বিষয় নিয়ে আন্দোলন সংগঠিত করা হবে এবং কৃষক, খেতমজুর, মৎস্যজীবী, বিড়ি শ্রমিক ইত্যাদি অংশের গরিব মানুষের প্রতি বঞ্চনার বিষয়গুলি নিয়ে ক্ষেত্রভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। 


   কিন্তু জেলায় জেলায় যেভাবে তৃণমূল নেতাদের ঘরে বোমা ও আগ্নেয়াস্ত্রের মজুত দেখা যাচ্ছে তাতে কী গ্রামের মানুষ এর প্রতিরোধ করতে পারবেন? সাংবাদিকদের এই প্রশ্ন শুনে সেলিম জোরের সঙ্গে বলেন, অবশ্যই, গ্রামের মানুষই পারবেন। যারা কাস্তে কিংবা হাতুড়ি হাতে উৎপাদনের কাজ করে থাকেন তাঁরাই হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে হক আদায়ের সাহস দেখাতে পারেন। শহরের কলমজীবীদের কেউ কেউ তাতে সমর্থন দিতে পারেন, কিন্তু লড়াইয়ের সাহস এই গরিব শ্রমজীবীরাই দেখাতে পারেন। 

 

আমাদের দেশের মিডিয়া মূলত শহর কেন্দ্রীক তাই তারা গ্রামের মানুষের লড়াই দেখতে পায় না। মিডিয়া কেবল তখনই সংবাদে গ্রামের মানুষের লড়াইকে প্রচার করতে বাধ্য হয় যখন তাঁরা গ্রাম থেকে এসে রাজধানী ঘিরে ফেলেন। বাংলার গ্রাম যেভাবে জাগছে তাতে তৃণমূল এবং বিজেপি বুঝে গেছে যে পুলিশ দিয়ে আর মানুষকে ঠেকানো যাবে না, তাই বোমা বন্দুক জড়ো করছে। সেই পারুইয়ের ঘটনার থেকে তৃণমূল এবং বিজেপি মিলে রাজ্যে দুষ্কৃতীদের গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কিন্তু বোমা বন্দুক শেষ কথা বলে না। লাল ঝান্ডা হাতে মানুষ জাগলেই বোমার আওয়াজ মিলিয়ে যাবে। 
  তিনি বলেছেন, তৃণমূলের সন্ত্রাসের ধার এবং ভার কমছে। গুড় বাতাসার কথা বলা নেতারা কেউ জেলে, কেউ এখন গলার স্বর নামিয়ে কথা বলছে। মমতা ব্যানার্জি নিজে বিজেপি’র পেটেন্ট নেওয়া ধর্মীয় বুজরুকির রাজনীতির আশ্রয় নিয়েছেন। আগে হিজাব পরেছিলেন এখন পুজো দেখিয়ে মানুষের ভেঙে যাওয়া বিশ্বাস ফেরানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু যেভাবে ফেঁসেছেন তাতে ওসব টনিকে কাজ হবে না। বিচারপতিরাই বলছেন যে ঢাকি সহ বিসর্জন দিয়ে দেবেন।

 


  একদিকে মানুষের দুর্দশা অন্যদিকে শাসকের দুর্নীতি, এই নিয়ে মানুষের ক্ষোভ উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, গ্রামের কৃষক ধানের দাম পাচ্ছেন না, রেশন কার্ড থাকলেও রেশন পাচ্ছেন না, দুয়ারে সরকারের নাটক চললেও কাস্ট সার্টিফিকেট হাতে পাচ্ছেন না, রাস্তা, স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র সবকিছু ভেঙে পড়েছে। ৫ লক্ষ কোটি টাকার দেনা নিয়ে সরকার চুপচাপ কর্মহীন হয়ে বসে আছে, মুখ্যমন্ত্রী নিজেই নবান্নে প্রায় থাকছেন না। একশো দিনের কাজ করা সত্ত্বেও রাজ্যের মানুষ মজুরি পাবেন না কেন? মুখ্যমন্ত্রী পুজোয় ব্যস্ত থাকতে পারেন, পুজোর আগে গ্রামের মানুষকে প্রাপ্য মজুরির ব্যবস্থা করতে পারেন না। ইসলামে আছে ঘাম শুকোনোর আগে মজুরি দিতে হয়, মুখ্যমন্ত্রী সেসব ভুলে আজমীঢ় শরীফে ছুটছেন। একশো দিনের কাজ নিয়ে দুর্নীতি হলে কেন্দ্র তদন্ত করে রিপোর্ট প্রকাশ করুক, রাজ্য প্রাপ্যের জন্য শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক। কিন্তু যারা কাজ করেছে তারা টাকা পাবে না কেন? 

 


  সেলিম বলেন, মুখ্যমন্ত্রী জানেন অমিত শাহ-মোদীর সঙ্গে বসলেই টাকা মিলবে। ওখানে আসল বিজেপি আছে যাদের সঙ্গে বিরোধ নেই, এখানে নকল বিজেপি’র সঙ্গে নকল ঝগড়া চলে টিভির পর্দায়। আমি তো মনে করি, বিজেপি’র সঙ্গে তৃণমূল জুড়ে গেলেই ঝামেলা মিটে যায়। একদলের লেফটেন্যান্টরা অন্যদলে তো যোগ আগেই দিয়েছে। দুই দল এর জন্য দরজা খুলেই রেখেছে। অতীত দেখিয়ে দিচ্ছে, সঙ্কট বাড়লেই ওরা এককাট্টা হয়ে যায়, তখন আরএসএস মমতা ব্যানার্জিকে ‘মা দুর্গা’ বলে, আর উনি আরএসএস’এর প্রশংসা করেন। 

 


কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মতোই রাজ্যের তৃণমূল সরকারও সামাজিক ও রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদগুলো বেসরকারি ব্যবসায়িক মুনাফার জন্য তুলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে সেলিম বলেছেন, পরিবহণ দপ্তরের গ্যারেজ, ডিপো থেকে শুরু করে বন দপ্তরের পার্ক সব ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। যে শুভেন্দু অধিকারী পরিবহণ দপ্তর হাতে নিয়ে এসব করা শুরু করেছিলেন তিনিই এখন বিজেপি’তে গিয়ে বিরোধিতার নাটক করছেন। এমনকি বামফ্রন্ট সরকারের আমলে পরিকল্পনা করে তৈরি করা আইটিআই, পলিটেকনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিও তৃণমূল ঘনিষ্ঠ এনজিও’কে ব্যবসায়িক কাজে তুলে দেওয়া হচ্ছে। স্কুল শিক্ষায় দুর্নীতি সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও একইভাবে ধংস করা হচ্ছে। সাধারণ গরিব মানুষকে শিক্ষা স্বাস্থ্যের জন্য বিপুল খরচে ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়তে হবে? 

 


  গুজরাটে নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, ভোটে জিতলেই সব পাপ স্খালন হয়ে যায় না। হিমাচল ও দিল্লির নির্বাচনের ফলে স্পষ্ট যে মানুষের প্রতিষ্ঠানবিরোধী মনোভাব রয়েছে। কিন্তু মোদী কর্পোরেট শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ধর্মীয় উন্মাদনা জাগিয়ে গুজরাটে সাময়িক রেহাই পেয়েছেন। পরেশ রাওয়ালের মন্তব্যেই তো প্রমাণিত যে ধর্মীয় ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে গুজরাটে। বাঙালি মানেই বাংলাদেশি! রোহিঙ্গা! পৃথিবীর বহু দেশের মানুষ মাছ খায়। উপকূলীয় গুজরাটের কচ্ছ থেকে গুজরাটি মাছের ব্যবসায়ীরা বাংলায় মাছ বেচে মুনাফা কামাতে পারবে, আর ভোটের বেলায় মাছ ভাজা খাওয়া নিয়ে ফতোয়া? ভাষা, ধর্ম, খাদ্য, পোশাক সহ বৈচিত্রের সংস্কৃতিকে ভেঙে হিন্দু হিন্দি হিন্দুস্থানের সংস্কৃতি চাপানোর চেষ্টা হলে মানুষ তা মেনে নেবে না। শুধু বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করে একটা দেশের জন্ম হয়েছে, বিজেপি যেন সেকথা মনে রাখে। 

 

 

 


  পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়ক ওস্তাদ রশিদ খানের গাড়িচালককে পুলিশের হেনস্তার প্রসঙ্গে সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে বলেন, ‘জুলুম চালাও’। আর বুদ্ধিজীবীদের বলেন, ‘আমার কাছে এস, আমি রক্ষা করব’। পুলিশ প্রতিদিন গরিব ভ্যান রিকশাচালক, সাইকেল আরোহী সহ সাধারণ মানুষের উপরে জুলুম করছে, টাকা তুলছে। এটা কি পুলিশ রাষ্ট্র না কি! 
  বামফ্রন্ট সরকারের পরিকল্পিত নগরোন্নয়নের ভাবনাকে ডুবিয়ে কলকাতার গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে ধ্বংসের জন্য তৃণমূল সরকারকে অভিযুক্ত করে সেলিম বলেছেন, শহরে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের জন্য মানুষের যাতায়াতে যাতে অসুবিধা না হয় তার জন্য বামফ্রন্ট সরকার সহজলভ্য ও নিরাপদ গণপরিবহণে জোর দিয়েছিল। বাইপাস তৈরির সময় মমতা ব্যানার্জিরা বাধা দিয়েছিলেন, আর সরকারে আসার শুভেন্দু অধিকারীকে সঙ্গে নিয়ে মমতা ব্যানার্জি রাষ্ট্রায়াত্ত পরিবহণকে শিকেয় তুলেছেন। বামফ্রন্ট সরকার ট্রাম লাইন কংক্রিটের করেছিল এইচআরবিসি’র আদায়ীকৃত টোলের টাকায়। আর মমতা ব্যানার্জি সরকারে এসে সিঙ্গুরে কারখানা ভেঙেছেন এইচআরবিসি’র টাকায়। শুভেন্দু অধিকারী ছিলেন তখন সেই মন্ত্রকের দায়িত্বে।

Comments :0

Login to leave a comment