সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির আবেদন করলো সিবিআই। শিয়ালদহ আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, আর জি কর হাসপাতালে কতর্ব্যরত চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনা বিরলতম। সিবিআইয়ের আইনজীবী দাবি করেন যে নির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতেই সঞ্জয় রায়কে অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
সিবিআইয়ের দাবি ফরেন্সিক যেই রিপোর্ট তাদের কাছে আছে তাতে দেখা যাচ্ছে নির্যাতিতার দেহে যেই লালারস পাওয়া গিয়েছে তা সঞ্জয়ের, এমন কি সঞ্জয় রায়ের জামা জুতোয় পাওয়া গিয়েছে নির্যাতিতার রক্ত।
গত ৯ আগস্ট আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক তরুণীর খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় উত্তাল হয় রাজ্য। গ্রেপ্তার হন কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়। হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই কলকাতা পুলিশের কাছ থেকে মামলার তদন্তভার নেয়। উল্লেখ্য এই একই মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ রায়কে। তিনি জামিন পেয়েছেন এই মামলায়। প্রমান লোপাটের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া টালা থানার ওসিও জামিন পেয়েছেন।
কলকাতা পুলিশ প্রথম থেকেই দাবি করে এসেছে সঞ্জয় রায় একমাত্র অভিযুক্ত। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং পারিপার্শিক তথ্য বলছে এই ঘটনার সাথে আরও অনেকে যুক্ত ছিল। সিবিআইও কলকাতা পুলিশের মতো দাবি করেছে সঞ্জয় একমাত্র দোষী। কিন্তু অভিযুক্ত সঞ্জয় বার বার আদালতে বলেছে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এখানেই প্রশ্ন উঠছে তাহলে কি কলকাতা পুলিশের মতো কাউকে আড়াল করতে চাইছে সিবিআই। সিবিআই এবং কলকাতা পুলিশের যুক্তি মানছেন না নির্যাতীতার পরিবার। তারা ফেত নতুন করে তদন্তের দাবি জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।
সিএফএসএল’র রিপোর্টকে পরিকল্পিতভাবে কেন এড়িয়ে গেছে সিবিআই, তা নিয়ে রীতিমত শোরগোল। আর জি করের চারতলার সেমিনার রুম আদৌ ঘটনাস্থল কিনা তা নিয়ে শুধু প্রশ্ন তোলা নয়, সেখানে কোন ধস্তাধস্তির ঘটনার প্রমাণও মেলেনি বলে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবোটারির দিল্লির সদর দপ্তর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তারপরেও সিবিআই কেন এই গুরুতর পর্যবেক্ষণকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করলো না, তা নিয়ে ধাঁধায় সংশ্লিষ্ট মহল। আরও সন্দেহ দানা বেঁধেছে সিবিআই’র তদন্ত প্রক্রিয়াতেও।
দিল্লি থেকে আসা সিএফএসএল’র আধিকারিকরা গত ১৪ আগস্ট সরেজমিনে আর জি করের চারতলার সেমিনার রুম পর্যবেক্ষণ করে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে। তারপর সরকারিভাবে রিপোর্ট দেয় সেপ্টেম্বরে। গত ১২ সেপ্টেম্বর সিবিআই’র কাছে সেই রিপোর্ট পাঠায়। তার আগে যদিও ১৪ আগস্টের পরে সরেজমিনে তদন্ত শেষে মৌখিকভাবেও চারতলার সেমিনার রুম আদৌও ‘প্লেস অব অকারেন্স’ কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তারা।
একইসঙ্গে তদন্তের প্রাথমিক পর্বে, জেরাতেও সিবিআই’র কাছে এমন ইঙ্গিত আসে। তার ভিত্তিতে আগস্টের শেষের দিকে কয়েক দফায় আর জি করে গিয়ে চারতলার পাশাপাশি আটতলাও ঘুরে দেখে, তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে সিবিআই।
আটতলার অর্থোপেডিক ওটির পাশের একটি রুমেও গিয়েছিল তদন্তকারী আধিকারিকরা। পরবর্তীতে সেই রুমটি সিল করে দেওয়া হয়। আটতলার অর্থোপেডিক রুমের কাজকর্ম এখনও বন্ধ আছে। কেন?
একাধিকবার সিবিআই’র তদন্তকারীরা বেশ কয়েকবার আটতলায় যান। কিছু নমুনা সংগ্রহও করে। আটতলা থেকে লিফটে করে চারতলায় ওঠানামা করেন তদন্তকারী আধিকারিকরা, বেশ কয়েকবার। তদন্তের এই বিশেষ পর্যায়ে আটতলা কেন তদন্তকারী আধিকারিকদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল? আটতলায় রয়েছে অর্থোপেডিকের অপারেশন থিয়েটার। আটতলা থেকে লিফটে চারতলায় সেমিনার রুমে যাওয়া যায়, সিসিটিভি’র নজর এড়িয়ে। চারতলার সেমিনার রুমের ঘটনাস্থলের সঙ্গে ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের আটতলা বা অন্য কোনও ফ্লোরের কোনও যোগসূত্র কি রয়েছে এই ঘটনাক্রমে? এই আটতলার ওটি সন্দীপ ঘোষের ওটি বলেই পরিচিত ছিল হাসপাতালে। তিনি এখানেই অপারেশন করতেন।
সেই রাতে আর জি করের ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের চারতলার সেমিনার রুমে ঠিক কী হয়েছিল? আদৌ সব কিছু সেখানেই ঘটেছিল? সেটা কী শ্যাডো পিও (প্লেস অব অকারেন্স)? সেখান কত জন হাজির ছিল? এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে গোটা রাজ্য জুড়ে বিচারের দাবিতে পথে নামা মানুষের মধ্যে।
CBI RG KAR
আদালতে সঞ্জয়ের ফাঁসি চাইল সিবিআই, দায় এড়াতে কিনা উঠল প্রশ্ন
×
Comments :0