Calcutta High Court

শাহজাহানকে গ্রেপ্তারে স্থগিতাদেশ নেই, জানিয়ে দিলেন প্রধান বিচারপতি

রাজ্য

শাসকদলের মাফিয়া নেতা, তথাকথিত সন্দেশখালির ‘ত্রাস’ শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের ওপর আদালতের কোনও স্থগিতাদেশ নেই। সোমবার খুব স্পষ্ট করে একথা জানিয়ে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। এরফলে প্রমাণিত হলো ‘আদালতের স্থগিতাদেশ’ থাকায় পুলিশ নাকি শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না বলে যে মিথ্যাচার রবিবার তৃণমূল নেতা অভিষেক ব্যানার্জি করছিলেন তার কোনও বাস্তবতা নেই। 
৫২দিন ধরে ফেরার শেখ শাহজাহান। জনমানসে ও সংবাদমাধ্যমে এনিয়ে বিস্তর প্রশ্ন ওঠায় তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক গত কয়েকদিন ধরেই সাফাই দিচ্ছিলেন, পুলিশ শাহজাহানকে ধরতে পারছে না আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে। মহেশতলায় দলীয় এক সভায় তিনি বলেন, শাহজাহানকে পুলিশ ধরছে না কেন এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু পুলিশ কীভাবে তাকে গ্রেপ্তার করবে? আদালত পুলিশের হাত-পা বেঁধে রেখেছে। ওর (শাহজাহান) গ্রেপ্তারের ওপর আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় পুলিশ কিছু করতে পারছে না। সোমবার এই মিথ্যাচারের বিরোধিতা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম এই প্রসঙ্গে তাঁর নির্দেশে বলেন, শাহজাহানের গ্রেপ্তারির ওপর আদালতের কোনও স্থগিতাদেশ নেই। পুলিশ চাইলেই তাকে গ্রেপ্তার করতে পারে। সন্দেশখালি মামলায় আদালত পুলিশ এবং সিবিআই’কে নিয়ে যে সিট গঠন করেছিল তার ওপর স্থগিতাদেশ রয়েছে। কিন্তু গ্রেপ্তারির ওপর কোনও স্থগিতদেশ আদালত দেয়নি। ফলে পুলিশ তার কাজ ইচ্ছা করলেই করতে পারে। 
প্রসঙ্গত, অভিষেক ব্যানার্জি যখন প্রচার করছিলেন আদালতের স্থগিতাদেশের ওপর স্থগিতাদেশ থাকায় শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারছে না পুলিশ, তখন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার সাংবাদিকদের কাছে বলছিলেন, শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে কেন। তাকে গ্রেপ্তার করবে ইডি। রাজীব কুমারের এই বক্তব্যের পরই অভিষেক ব্যানার্জি এই গ্রেপ্তারির ব্যাপারে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার শুরু করেছিলেন। রেশন দুর্নীতি মামলায় সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় শাহজাহানের বাড়িতে ইডি আধিকারিকরা তল্লাশি করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর ৫৩ দিন কেটে গিয়েছে শাহজাহান এখনও অধরা। 
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিসন বেঞ্চ এদিন নির্দেশ দিয়েছে এই মামলায় শাহজাহানকে যুক্ত করতে হবে। আদালত হাইকোর্টের রেজিস্টারকে নির্দেশ দিয়েছে মামলায় শাহজাহান যুক্ত করার বিষয়টি দুটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাতে হবে। এদিন ডিভিসন বেঞ্চ বলেছে, এই মামলার সঙ্গে রাজ্য পুলিশ, সিবিআই এবং ইডি’কে যুক্ত করতে হবে। এদিন আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আদালত কোনও নির্দেশ দেয়নি। আদালত পুলিশকে বলেনি গ্রেপ্তার করা যাবে না। পুলিশ চাইলেই শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করতে পারে।
  কলকাতা হাইকোর্টে যখন এই মামলা চলছে তখনই সন্দেশখালি থানায় শাহজাহানের বিরুদ্ধে আরও একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সেই এফআইআরে শাহজাহান ছাড়া শিবু হাজরা, উত্তম সর্দার সহ আট জনের নাম আছে। এদিন কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির এজলাসে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে দায়ের হওয়া তিনটি মামলার শুনানির শুরুতেই আদালত নিযুক্ত আদালতবান্ধব আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার করে একজন সাংসদ বলছেন আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় সন্দেশখালির ঘটনায় যুক্ত শেখ শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারছে না। শাহজাহানের গ্রেপ্তারের অন্তরায় হয়ে আছে আদালত। আইনজীবী চট্টোপাধ্যায় বিস্তারিতভাবে এই প্রচার আদালতের গোচরে আনার পরই প্রধান বিচারপতি তাঁর নির্দেশের মধ্যে জানান, শাহজাহানকে গ্রেপ্তারের ওপর আদালতের কোনও স্থগিতাদেশ নেই। এদিন মামলার শুনানির সময় আদালতকে জানানো হয়, সন্দেশখালির মানুষ সেখানে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ জানাতে পারেন না। পুলিশ কোনও অভিযোগ গ্রহণ করে না। জমিহারা মানুষ বা নির্যাতিত মহিলারা থানায় অভিযোগ জানাতে পারেন না। এই অভিযোগ পরিপ্রেক্ষিতে ডিভিসন বেঞ্চ বলেছে, সন্দেশখালির অভিযোগকারীরা জেলার আইনি সহায়তা কেন্দ্রে অভিযোগ জানাতে পারেন। রাজ্য আইনি সহায়তা কেন্দ্র এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। 
এই শুনানির সময় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতকে জানান, গত চার বছরে সন্দেশখালি থানায় ৪১টি এফআইআর হয়েছে। তার মধ্যে দুটি’র ক্ষেত্রে চার্জশিট হয়েছে। রাজ্যের তরফে দেওয়া এই পরিসংখ্যান দেখে ডিভিসন বেঞ্চ বিস্ময় প্রকাশ করে। ৪১ এফআইআরে মাত্র দুটি চার্জশিট জমা হয়েছে। এদিনই সন্দেশখালির মানুষ সেখানকার দুটি খুনের ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। এই দুটি খুনের পরই মৃতদেহ পাওয়া যায়নি বলে তাঁরা জানিয়েছেন। সুকান্ত মণ্ডল নামে একজনের মৃতদেহ পাওয়া যায়নি। তাঁকে নিখোঁজ বলে জানানো হয়। দেবদাস মণ্ডল নামে একজনের মাথারখুলি এবং শরীরের হাড় নদীর পাড়ে পাওয়া গিয়েছিল। এই দুটি খুনের ঘটনায় ন্যাজট থানায় শাহজাহানের নামে এফআইআর হয়েছিল। পুলিশ যখন চার্জশিট দিয়েছে তখন চার্জশিট থেকে শাহজাহানের নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এদিন ডিভিসন বেঞ্চ আদালত বান্ধব আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কাছ থেকে সন্দেশখালির ঘটনা নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দেবার কথা বলেছে। মামলাটি পুনরায় ৪মার্চ শুনানির জন্য রাখা হয়েছে। 
এদিকে, এদিন তৃণমূলের পক্ষ থেকে এদিন জানানো হয়, শেখ শাহজাহান ৭ দিনের মধ্যে গ্রেপ্তার হবে।

Comments :0

Login to leave a comment