Calcutta HC

গত ৬ বছরে নিযুক্ত সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর রিপোর্ট চাইল হাইকোর্ট

কলকাতা রাজ্য

রাজ্যের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে গত ছয় বছর অর্থাৎ ২০১৬সাল থেকে এ পর্যন্ত যতজন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ হয়েছেন, তাঁদের সকলের রিপোর্ট চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু সরকারের কাছ থেকে এই রিপোর্ট তলব করেছেন। আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সমস্ত রিপোর্ট আদালতে জমা করতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু।


২০১৬সাল থেকে এ পর্যন্ত রাজ্যের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলগুলিতে দফায় দফায় ২৩ হাজার ৪৪৯ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিযুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নবম, দশম শ্রেণির শিক্ষক হিসাবে ১১হাজার ৪২৫জনের নিয়োগ হয়েছে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে সাড়ে পাঁচ হাজার শিক্ষক নিয়োগ হয়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে এই ছয় বছরে ৪হাজার ৪৮৭জন গ্রুপ-সি ও ২হাজার ৩৭জন গ্রুপ-ডি শিক্ষাকর্মী নিয়োগ হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের এদিনের নির্দেশের পরে এই সমস্ত চাকরিই নিয়োগপত্র যথাযথ প্রক্রিয়ায় হয়েছিল তা খতিয়ে দেখা হবে এবং কোর্টের নির্দেশে জেলা স্কুল পরিদর্শকরা খতিয়ে দেখার কাজ করবেন বলে আদালতের নির্দেশ। বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর অভিমত, ‘‘জেলা স্কুল পরিদর্শকরা নিয়োগে অনিয়ম বা জালিয়াতির দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না।’’
এদিন একটি মামলার শুনানি চলাকালীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগের রিপোর্ট তলব করেছেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু। মুর্শিদাবাদ জেলার একটি স্কুলে নিয়োগে জালিয়াতির বিষয় নিয়ে এদিন বিশ্বজিৎ বসুর এজলাসে শুনানি ছিল। মামলাটি রুজু করা হয়েছিল ওই স্কুলের প্রধানশিক্ষক এবং তাঁর পুত্রের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের নথি জাল করে প্রধান শিক্ষক তাঁর পুত্রকে নিজের স্কুলেই নিয়োগ করেছিলেন। গত তিন বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পুত্র বেতনও পেয়েছেন। অথচ জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে তাঁর নিয়োগের কোনও নথিই ছিল না। ঘটনাটি জানার পরেই বিস্মিত বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এদিন প্রশ্ন তোলেন, ‘‘নিয়োগপত্রে নাম না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে ওই ‘শিক্ষক’ এতদিন বেতন পেলেন!’’ এরপরেই বিচারপতির সংযোজন ছিল, ‘‘তবে তো এমন অনেক জালিয়াতিই হয়ে থাকতে পারে, যার খবর এখনও নেই রাজ্যের কাছে।’’
বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এরপরেই ২০১৬ সালের পর থেকে রাজ্যের সমস্ত মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগ যাচাই করার নির্দেশ দেন। এ ব্যাপারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা স্কুল পরিদর্শকদেরই। কারণ, তাঁদের হাত দিয়েই স্কুলের নিয়োগপত্র হাতে পান শিক্ষক বা স্কুলের গ্রুপ-সি, গ্রুপ-ডি’র মতো শিক্ষাকর্মীরা। 


রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগের তদন্তভার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে হাইকোর্ট দেওয়ার পরই একের এক নিয়োগের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসছে। শিক্ষক পদে এর আগে প্রথম পর্যায়ে ১৮৩জন ও পরে ৪০জন ভুয়ো চাকরি প্রার্থীর নাম সিবিআই হাইকোর্টকে জানিয়েছিল। হাইকোর্ট স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ভুয়ো চাকরি প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করার নির্দেশ দেয় স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। গত ৭ ডিসেম্বর কমিশন সেই ৪০জন ভুয়ো চাকরি প্রার্থীর নাম প্রকাশ করে। এর আগে আদালতের নির্দেশে ১৮৩ জন ভুয়ো চাকরি প্রার্থী যারা শিক্ষকের নামের তালিকায় ছিল তাদেরও নাম প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। সেই ভুয়ো ১৮৩ জনের মধ্যে ১০০ জন কোনও স্কুলেই যোগ দেননি বলে পরে কমিশন সূত্রে জানা গেছিল। 
 
 

Comments :0

Login to leave a comment