General elections 2024

বিজেপি-তোষণ! সিএএ নিয়ে এবার আপত্তি নেই মমতারও

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

 

নিজের হাতে মোদীকে পটল-চিংড়ি রান্না করে খাওয়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিএএ-কে সমর্থন জানিয়ে রাখলেন মমতা ব্যানার্জিও। 
গত রবিবার বনগাঁর সভায় সিএএ-কে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিলেন দলের দু’নম্বর অভিষেক ব্যানার্জি। সেই বনগাঁতেই সোমবার সভা করেন মমতা ব্যানার্জি। ভাইপোর সুরে সুর মিলিয়ে মমতা ব্যানার্জি এদিন বলেছেন, ‘‘নিঃশর্ত করলে সিএএ নিয়ে আমার কোনও আপত্তি নেই।’’  রাজ্য সরকারকে দিয়ে সিএএ কার্যকর করার পক্ষে পর্যন্ত সওয়াল করেন মমতা ব্যানার্জি। 
চলতি লোকসভা নির্বাচনের জন্য গত ৩১ মার্চ কৃষ্ণনগর থেকে প্রচার শুরু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর থেকে রাজ্য ঘুরে ভোটের প্রচার করে বেড়াচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি। এত দিন প্রতিটি সভাতেই সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করতে শোনা যেত মুখ্যমন্ত্রীকে। ভোটার, কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড থেকে শুরু করে এত দিন ভোট দিয়ে পঞ্চায়েত সদস্য থেকে সাংসদ নির্বাচিত করার পর কেন নতুন করে নাগরিক হতে হবে, সেই প্রশ্নও তুলতেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন সুর বদল করে মমতা ব্যানার্জি বনগাঁর সভায় বলেছেন, ‘‘মতুয়াদের প্রতি এতই যদি ভালোবাসা, তাহলে কেন তাদের নিঃশর্ত অধিকার দিচ্ছ না? কেন আপনি (মোদী) গোপনে এমপাওয়ার্ড গ্রুপ তৈরি করেছেন? কেন বলছেন ফরম ফিলাপ করে বাবা, মায়ের সার্টিফিকেট বাংলাদেশ থেকে নিয়ে এসো!’’ এরপরই ভাইপোর সুরে মমতা ব্যানার্জি বলেন,  ‘‘সিএএ আমরা মানি না। নিঃশর্ত করলে করুক, আমার কোনও আপত্তি নেই।’’ 
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (২০১৯) নিয়ে মমতা ব্যানার্জি আর যে কোনও আপত্তি রাখছেন না, তা এদিন বনগাঁর সভা থেকে তিনি স্পষ্ট করেছেন। তিনি চাইছেন, সিএএ কার্যকর করার ক্ষমতা রাজ্য সরকারের হাতে ছেড়ে দিক কেন্দ্রীয় সরকার। যে আইন ও পরবর্তীকালে তৈরি করা বিধিতে মুসলিম ছাড়া সবাইকে নাগরিকত্ব দেওয়ার বিধান দেওয়া আছে, তা নিয়ে এখন আর কোনও আপত্তি নেই মুখ্যমন্ত্রীর। বনগাঁর সভা থেকে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ‘‘নিঃশর্ত অধিকার দিন। আপনার (মোদী) করার কী দরকার আছে? আগে তো নাগরিকত্ব রাজ্য সরকার দিত। জেলার ডিএম’রা দিয়ে দিত।’’ মমতা ব্যানার্জি জেলাশাসকদের হাত দিয়ে কার্যকরী করতে চাইছেন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে। 
সিএএ নিয়ে সঙ্ঘ পরিবারের কাছে বার্তা দেওয়ার সঙ্গে এদিন প্রধানমন্ত্রীর দিকেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে মমতা ব্যানার্জি সখ্যর হাত বাড়িয়েছেন। দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের উপর সঙ্ঘ পরিবারের হস্তক্ষেপ নিয়ে বারাকপুরের সভায় বক্তব্য রাখছিলেন মমতা ব্যানার্জি। সেই বক্তব্যেই নরেন্দ্র মোদীর জন্য নিজের হাতে রান্না করা খাবার পরিবেশন করার কথা উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণে। ‘‘কেউ পটল-চিংড়ি ভালোবাসে। কেউ ঝিঙে-চিংড়ি ভালোবাসে। কেউ আবার চিংড়ির মালাইকারি ভালোবাসে। মোদীবাবু, একটু খেয়ে দেখুন স্বাদটা কেমন। কথা দিচ্ছি, কাউকে দিয়ে রান্না করাবো না। আমি নিজে করব। আমি ছোটোবেলা থেকে রান্না করতে ভালোবাসি। আমি রান্না জানি। আপনি আমাকে ধোকলা খেতে বললে আমি খাবো।’’ বলেছেন মমতা ব্যানার্জি। 
বিজেপি’র প্রধানমন্ত্রীদের ঘরে তৈরি রান্না করা খাবার খাওয়ানো মমতা ব্যানার্জির কাছে নতুন কোনও বিষয় নয়। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে কালীঘাটের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে মায়ের হাতে তৈরি মালপোয়া খাইয়ে ছিলেন মমতা ব্যানার্জি। ফলে মোদীর জন্য নিজের হাতে চিংড়ি মাছের পদ তৈরি করে মমতা ব্যানার্জির খাওয়ানোর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই।
কিন্তু ভোটের প্রচারে একে অপরের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে নেমে নিজের হাতে রান্না করা খাবার খাওয়ানোতেই এদিন থামেননি মুখ্যমন্ত্রী। গত রবিবার ভাটপাড়ার সভায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উলটো ছবি উপহার দেওয়া নিয়েও মমতা ব্যানার্জি প্রধানমন্ত্রীর কোনও দোষ খুঁজে পাননি। বারাকপুরের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে শোনা গিয়েছে, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর তো কোনও দোষ ছিল না। দোষটা ছিল তাঁর, যিনি জানেন না, আর যাঁর কথা শুনে তিনি তাঁকে প্রার্থী করেছেন।’’ গত রবিবার প্রধানমন্ত্রীকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি উপহার দেন অর্জুন সিং-এর পুত্র বিজেপি বিধায়ক পবন সিং। প্রধানমন্ত্রীকে তুলে দেওয়ার সময় রবি ঠাকুরের ছবি উলটানো ছিল। মুহূর্তে সেই ছবি সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় তৃণমূল। কিন্তু এদিন সেই বারাকপুরে সভা করতে এসে ছবি বিতর্কে প্রধানমন্ত্রীকে রেহাই দিয়ে গেলেন মমতা ব্যানার্জি। 
প্রসঙ্গত, বনগাঁ ও বারাকপুর এই দুই লোকসভা আসনেই তৃণমূল ও বিজেপি’র প্রার্থীদের দলবদলের ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের বর্তমান তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিত দাস প্রথমে ছিলেন তৃণমূলের বিধায়ক। দল বদল করে গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র বিধায়ক হন। নির্বাচনের পর তিনি তৃণমূলে ফিরে আসেন। লোকসভা ভোটের জন্য বিধায়ক পদ বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিয়ে ফের দলের প্রার্থী হয়েছেন। বারাকপুরেও গত লোকসভায় তৃণমূল থেকে বিজেপি-তে গিয়ে সাংসদ হয়ে আবার বিধানসভা ভোটের পর তৃণমূলে ফিরে এসেছিলেন অর্জুন সিং। তাঁর ছেলে পবন সিং ভাটপাড়া কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক। গত ১১ মার্চ তৃণমূলের ব্রিগেড সভাতেও উপস্থিত ছিলেন বারাকপুরের সাংসদ। দলের সাংসদকে ফের নতুন করে দলে ফিরিয়ে আবার বারাকপুরে প্রার্থী করেছে বিজেপি। দুই দলের মধ্যে সাবলীল আসা-যাওয়ার মাঝেই মমতা ব্যানার্জি সিএএ নিয়ে মত বদলাতে শুরু করলেন।

 

Comments :0

Login to leave a comment