DOCTORS DAY / NATUNPATA / RABINDRANATH

রবিকথা নতুনপাতা / মানব শরীর

ছোটদের বিভাগ

DOCTORS DAY  NATUNPATA  RABINDRANATH

মণ্ডা মিঠাই

মানব শরীর 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

জোড়াসঁকোর ঠাকুর পরিবারের অন্দরমহলের বৈঠকখানায় ঝোলানো একটা পূর্ণাবয়ব মানব স্কেলিটন। গাঢ় অন্ধকারে গা ছমছম করে। এক অজানা ভয়ে হিম হয়ে যায় সারাটা দেহ। তবুও ভয়ডর নেই সদ্য যুবক রবীন্দ্রনাথের। গৃহশিক্ষক একজন মেডিকেল কলেজে পড়া ছাত্র। তার কাছে জানার অন্ত নেই অল্প বয়সী যুবকের। ওই বয়সেই মুখস্থ মানবদেহের সব হাড়গোড়ের নাম। এমন কি দেহের মধ্যে হাতে পায়ে যে কটা ছোট্ট ছোট্ট হাড় আছে সেটাও তার কণ্ঠস্থ। যুবক মনে সদাই জাগে মানবদেহের রহস্য। দেহটাকে জানলে পরে তবেই না বাইরের জগৎটাকে চেনা যাবে! কৌতূহলে ভর করে বায়না জানানো হল গৃহশিক্ষককে । একবার অ্যানাটমির ডিসেকশন হলটা দেখতে যাবে। কেমন করে শব ব্যবচ্ছেদ করে ডাক্তারি ছাত্র-ছাত্রীরা সেটা দেখা তার ঐকান্তিক ইচ্ছে। কিছুটা ইতস্তত করেও গৃহশিক্ষক নিয়ে গেলেন অ্যানাটমির ডিসেকশন হলে ছাত্রের অপার কৌতূহল মেটানোর জন্যে। কলকাতা মেডিকেল কলেজের অ্যানাটমির ডিসেকশন হলে দাঁড়িয়ে যুবক রবীন্দ্রনাথ তো হতবাক! মুখে কথা সরছে না। অবাক চোখে দেখতে লাগলেন ছাত্রছাত্রীদের শব ব্যবচ্ছেদ করার পদ্ধতিগুলো। বাড়ি ফিরে এলেন মনের আনন্দে। ওই বয়সে পড়ে ফেললেন অ্যানাটমি, ফিজিওলজির সব বইগুলো। জ্ঞানের সমৃদ্ধতায় ভরে উঠলো মনপ্রাণ ।
 
 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বয়স তখন ৩১ বছর। ‘সাধনা” পত্রিকায় জীবনের শক্তি বিষয়ক একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি লিখেছেন, 'আমাদের হৃৎপিণ্ড চারটি কোটরে বিভক্ত, তাহার মধ্যে দুইটি কোটরে শরীরের রক্ত আসিয়া প্রবেশ করিতেছে এবং অপর দুইটি অংশে স্যাকরার হাপরের মতো সংকুচিত হইয়া শরীরের সর্বত্র রক্ত প্রবাহিত করিতেছে। ... . সুস্থ শরীরে বয়স্ক লোকের হৃৎপিণ্ড মিনিটে ৭৫/৭৬ বার সংকুচিত হয়। হিসাব করিয়া দেখা গিয়াছে রক্ত সঞ্চালন ক্রিয়ায় হৃৎপিণ্ড চব্বিশ ঘন্টায় যে শক্তি ব্যয় করে সেই শক্তি দ্বারা তিন হাজার মণের অধিক (২২০ টন) ভার এক ফুট উর্দ্ধে তুলা যাইত।' আর একটি অংশে উল্লেখ করেছেন, "বিশ্রামকালে চব্বিশ ঘণ্টায় প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের ফুসফুসের মধ্য দিয়া ছয় লক্ষ ছিয়াশি হাজার বর্গইঞ্চি পরিমাণ বায়ু প্রবাহিত হয় এবং পরিশ্রমকালে সেই বায়ুর পরিমাণ পনেরো লক্ষ আটষট্টি হাজার তিনশো নব্বই বর্গ ইঞ্চি পর্যন্ত বাড়িতে পারে।'
 
সাধনা পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় ‘মানব শরীর’ নামে।

Comments :0

Login to leave a comment