Demonetisation

নোট বাতিল অর্থনীতিকে ধ্বংসই করেছে, অভিযোগ বিরোধীদের

জাতীয়

Demonetisation

নোট বাতিলের ছয় বছর নিয়ে মুখ লুকোচ্ছেন মোদী। নোট বাতিল নিয়ে একেবারেই যেন নীরব হয়ে গেছেন মোদী। ছয় বছর আগে ৮নভেম্বর রাতে আচমকাই নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেন মোদী। বিনামেঘে বজ্রপাতের মতোই ঘোষণা নেমে আসে। ‘মিত্রো’ বলে নির্বাচনী ভাষণের ঢঙে বলেই নোট বাতিলের উদ্দেশ্যও ফলাও করে জানিয়ে দিয়েছিলেন মোদী। কালো টাকা উদ্ধার, স্বচ্ছ লেনদনের লক্ষ্যে অর্থনীতিতে নগদ লেনদেন কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানো, সন্ত্রাসবাদীদের অর্থের জোগান বন্ধ করা মূলত এইরকম চার দফা লক্ষ্যে নোট বাতিল ঘোষণা ছিল মোদীর। কোন লক্ষ্যই পূরণ হয়নি। উলটে নোট বাতিলে ধ্বংস হয়ে গেছে দেশের ছোট শিল্প ব্যবসা বাণিজ্য। দেশে কালো টাকার রমরমা বেড়েছে। নগদ লেনদেনের নির্ভরতাও বেড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, নোট বাতিলে কি অর্থনীতির কোন সুবিধা হয়েছে? মুখ খোলেননি মোদী। মোদীর নীরবতায় সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁরা বলছেন, নোট বাতিল হলো অর্থনীতির হত্যাকান্ড। বড় কেলেঙ্কারি, যা একটা ফৌজদারি অপরাধ। নোট বাতিল নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিরোধীরা। মোদী ছয় বছর আগে ৫০০ ও ১হাজার টাকার নোট বাতিলে সময় প্রচারে জানিয়েছিলেন, বড় নোটেই কালো টাকা মজুত হয়। তাই বড় অঙ্কের নোট বাতিলে শুধু কালো টাকা মজুতদারের সমস্যা হবে। কালো টাকা অর্থনীতি থেকে সাফ হয়ে যাবে। আজ মোদীর নোট বাতিলের দাওয়াই একটা বড় উপহাস ছাড়া কিছু নয় বলে জানাচ্ছেন বিরোধীরা। এদিন সিপিআই(এম) নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, নোট বাতিলের ছয় বছরে মোদীর ঔদ্ধত্যে হত্যা করা হয়েছে দেশের অর্থনীতিকে। নোট বাতিল এক চরম অরাজকতা সৃষ্টি করেছে দেশের অর্থনীতিতে। নগদ লেনদেন বেড়ে হয়েছে ৩০.৮৮লক্ষ কোটি টাকা। তিনি বলেন, দেশের একটি নিকৃষ্টতম জুমলা এই নোট বাতিল। দেশের মানুষকে টানা ৫০ দিন এই ভোগান্তি সহ্য করতে হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমরা সেই দিন বলেছিলাম, নোট বাতিলের মতো একটা অপরাধ করার পর কেন্দ্রের সরকার নিজেই নিজের প্রচারের ড্রাম পেটাচ্ছে। তারা এনিয়ে কোন ভালো পরামর্শ,মানুষের শুভ ইচ্ছার কোন মূল্য দেয়নি। মোদী চরম ঔদ্ধত্যে খুন হয়েছে অর্থনীতি। এদিন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ জয়তী ঘোষ নোট বাতিল প্রসঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, মোদী সরকার নোট বাতিলে যেসব উদ্দেশ্যের কথা বলেছিলেন তার একটাও কার্যকর হয়নি। এটা কোন অবাক হওয়ার ঘটনা নয়। তিনি বলেন, নোট বাতিলে যে যুক্তি রাখা হয়েছিল (নগদ অর্থে কালো টাকা মজুতের) তা ঠিক নয়, যে ভাবে তা প্রয়োগ (নগদ জোগান বন্ধ করায় হিসাবে রাখা হয়নি দেশের বেশির ভাগ ছোট ক্ষুদ্র শিল্প ব্যবসা বাণিজ্য নগদে চলে তাদের সমস্যা) করা হয়েছিল, তার ঘোষণা (কোন প্রস্তুতি ছাড়া মানুষকে সচেতন না করে ব্যাঙ্কের প্রস্তুতি না নিয়ে ঘোষণা করে দেওয়া) করা পুরোপুরি গলদে ভরা কর্মসূচি ছিল। যা ব্যর্থ হতে বাধ্য। মোদী নগদে বড় অঙ্কের নোটে কালো টাকা মজুত হয় জানিয়ে ৫০০ ও ১হাজার টাকার নোট বাতিলের যে কারণ দেখিয়েছেন তা ভিত্তিহীন বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, মোদী জানিয়েছেন নগদে দেশে পুরো সমান্তরাল কালো টাকার অর্থনীতি চলে এই তত্ব কোথাও প্রমান হয়নি। নানাভাবে কালো টাকার লেনদেন চলে। নোট বাতিলের পরও আজও দেশে চলছে কালো টাকার অর্থনীতি। কোথাও তার কারবার বন্ধ হয়নি। একদিকে যখন কালো টাকা রোধে বড় অঙ্কের নোট বাতিল হলো পরে দেখা গেল আরও বড় অঙ্কের নতুন নোট বাজারে ছাড়া হলো। ১হাজার তুলে দিয়ে ছাড়া হলো ২হাজার টাকার নোট, নতুন ৫০০টাকা ও ২০০ টাকার নোট ছাড়া হলো। দেখা গেল নোট বাতিলের পর বড় অঙ্কের নোট বেড়ে গেছে। বড় অঙ্কের নোট ২০২০ সালে ছিল মোট নগদের ৮৩.৪ শতাংশ ২০২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮৫.৭ শতাংশ। নগদ লেনদেন কমানোর লক্ষ্য থাকলেও নোট বাতিলের সময়ের থেকে আরও বেশি বেড়েছে নগদ লেনদেনের কারবার। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসাবে নোট বাতিলের সময় থেকে নগদে লেনদেন বেড়েছে ৭০ শতাংশ হারে। এমনকি ই-বাণিজ্যে ৯০ শতাংশ লেনদেন চলে নগদে। নোটবন্দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মহাকাব্যিক ব্যর্থতা’ বলে সোমবার কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তাঁর অভিযোগ, দেশের অর্থনীতির পতনের অন্যতম কারণও হলো নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত। তিনি বলেছেন, নোট বাতিলের সময় যুক্তি হিসাবে বলা হয়েছিল দেশকে কালো টাকা থেকে মুক্তি দেওয়াই লক্ষ্য। উলটে কালো টাকা মুক্তির বদলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংসের মুখে এবং কর্মসংস্থানের বেহাল দশা হয়েছে। নগদ লেনদেনও বেড়ে গিয়েছে বহু গুণ। ফলে অর্থনীতি ধসে যাওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে এখন ক্ষমা চাওয়া উচিত মোদীর। মোদীর অপরিকল্পিত নোট বাতিলে দেশের অর্থনীতিতে এক বিপর্যয় নেমে আসে। মোদী নোট বাতিলের পক্ষে যুক্তি দেন, ভারতকে নগদ লেনদেন নয়, ডিজিটাল লেনদেনের দেশ হিসাবে গড়ে তোলা হবে। বেসরকারি পেটিএম সহ বিভিন্ন ডিজিটাল পেমেন্ট কারবার সেসময় সরকারি দাক্ষিণ্যে ছাতার মতো গজিয়ে ওঠে। ছয় বছর পেরিয়ে ডিজিটাল লেনদেনের সরকারি প্রচার স্তিমিত হতেই দেখা যাচ্ছে, সেই নগদ লেনদেনেই ভরসা দেশের আমজনতার। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের তথ্যে জানাচ্ছে, ২০২১ সালের অক্টোবরে দেশে নগদে লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০.৮৮ লক্ষ কোটি টাকা। যে নগদ লেনদেনের পরিমাণ নোট বাতিলের দু’দিন আগে ৪ নভেম্বর ২০১৬ সালে ছিল ১৭.৭ লক্ষ কোটি টাকা। ৭১.৮৪ শতাংশ হারে নগদে লেনদেন বেড়েছে। টাকার অঙ্কে ছয় বছরে নগদ লেনদেন বেড়েছে ১২.৯৭ কোটি টাকা।

Comments :0

Login to leave a comment