প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন গোটা পৃথিবী নাকি তাঁর সরকারের বাজেটের দিকে তাকিয়ে আছে। একদিন পর সংসদে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে বাজেট পেশ করলেন গোটা পৃথিবী কি খুঁজে স্পষ্ট না হলেও দেশের কৃষক, শ্রমিক, নুন আনতে পান্তা ফুরোলে গরিব খেটে খাওয়া মানুষ তাদের অনুকূলে কিছু খুঁজে পাননি। অর্থাৎ দেশের ২-০শতাংশেরও বেশি মানুষ স্পষ্ট দেখছেন দুনিয়াকে তাক লাগানো মোদী সরকারের বাজেটে তাদের জন্য নতুন কিছুই জোটেনি। উলটো আগের বাজেটে যতটুকু মিলেছিল এবার সেটাও অনেকটা ছাঁটাই হয়ে গেছে। বন্ধু কর্পোরেট মহলের পূরণ করে জনকল্যাণকর যাবতীয় প্রকল্পে বরাদ্দ ঢেলে ছাঁটাই করা হয়েছে। নির্মমভাবে হ্রাস করা হয়েছে সরকারি ভরতুকি। আগামী বছরটা যে এদেশের গরিব সাধারণ মানুষের পক্ষে দুর্বিষহ হয়ে উঠতে চলেছে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। অতএব হয় পেটে গামছা বেঁধে অনাচার সইতে হবে নইলে প্রতিবাদে মুখর হয়ে এই দুরাচারীদের উচিত সাজা দিতে হবে।
দাবি করা হয়েছে, ভারত নাকি কোভিড জনিত অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলে উন্নয়নের পুরনো গতি ফিরে পেয়েছে। প্রমাণ, জিডিপি-র পরিমাণ কোভিড পূর্ব অবস্থায় ফিরেছে তিন বছর পর। কিন্তু বাকি তথ্য চাপা পড়ে আছে প্রচারের আস্ফালনে। কোভিড পর্বে যত মানুষ কাজ খুইয়েছেন তারা সবাই কাজ ফিরে পেয়েছেন কিনা তথ্য নেই। যারা পেয়েছেন তারা পুরানো মজুরি পাচ্ছেন কি, নেই সেই তথ্যও। গত কয়েক বছরে যে হারে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে চলেছে তার জেরে জীবনযাপনের দৈনন্দিন ব্যয় যতটা বেড়েছে তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মানুষের আয় বেড়েছে কি? তারও কোন উত্তর নেই। তথ্যহীন, উত্তরহীন বাগাড়ম্বরে ভরা বাজেট আসলে একটি মিথ্যা ও কল্পিত দাবির প্রতিমা, যেখানে সত্যের কোনো অধিষ্ঠান নেই।
এটা এমন একটা বাজেট যেখানে অর্থনীতির বাস্তব ছবিটাই নেই। ফলে সমস্যা মোকাবিলা ও প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপের বালাই নেই। বাজেটের নামে দিশাহীন কিছু সংখ্যার মারপ্যাঁচ দেখিয়ে ছেলে ভোলানর চেষ্টা হয়েছে। দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ আজও কৃষি, কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে গ্রামীণ ভারতে বাস করেন। বাজেট যদি সত্যি সত্যি দেশের মানুষের কথা ভেবে হয় তবে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাবার কথা এখানে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সবচেয়ে বঞ্চিত হলো কৃষি ক্ষেত্র। বরাদ্দ বাড়ার বদলে কমে গেল অনেকটা বরাদ্দ কমেছে প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মাননিধি, প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা, রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনাসহ কৃষির সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে বরাদ্দ ছাঁটাই করা হয়েছে। সারে ভরতুকি ছাঁটাই হয়েছে ২২শতাংশ। খাদ্যে ভরতুকি ছাঁটাই হয়েছে ৩১শতাংশ। জ্বালানিতে ভরতুকি ছাঁটাই হয়েছে ৭৫শতাংশ। তেল, রান্নার গ্যাসে কার্যত ভরতুকি তুলে দেবার ব্যবস্থা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি প্রচারিত উজ্জ্বলা প্রকল্পেও এবার ভরতুকি মিলবে না।
দেশজুড়ে যখন বেকারির হাহাকার, গ্রামে কর্মহীনতার যখন ভয়াবহ অবস্থা তখন রেগা প্রকল্পেও বরাদ্দ ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছে ৩৩শতাংশ। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, রুজি-রোজগার বৃদ্ধির কোনো ব্যবস্থা নেই।
মোদী জমানায় প্রতিটি বাজেটেই কর্পোরেট স্বার্থকে সামনে রেখে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে বন্দুক তাক করা হয়েছে। এবার আক্রমণের বহর ও তীব্রতা অনেক বেশি। হিন্দুত্বের পিটুলি গিলিয়ে সাধারণ মানুষকে বেহুঁশ করে রেখে তাদের সর্বস্ব হরণ করার এ এক উচ্চমার্গে পরিকল্পিত প্রয়াস। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই হবে। মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষের সর্বনাশ করে কর্পোরেট সেবা বরদাস্ত করা যায় না।
Comments :0