গল্প
বাবাই-এর মামদিদি
সৌরীশ মিশ্র
নতুনপাতা
পুজোর ছুটিতে মামার বাড়িতে গতকাল এসেছে বাবাই। প্রতি বছরই আসে সে পুজোর ঠিক পরপরই। পুজোটা বাবা-মা'র কাছে কাটিয়ে চলে আসে সে মামার বাড়ি। ক'টা দিন কাটিয়ে যায় এখানে। দারুণ মজা হয়।
বাবাই-এর মামার বাড়িতে লোক বলতে ওর মামা, মামিমা আর বাবাই-এর মামাতো দিদি মাম।
বাবাই-এর চেয়ে মাম বয়সে বেশ অনেকটাই বড়। ও এখন এম এ করছে। আর, বাবাই-এর ক্লাস ফাইভ সবে।
মাম বাবাইকে ভালোবাসে খুব। বাবাই যে ভাই-বোনদের মধ্যে সবচাইতে ছোটো। বাবাই-ও ওর মামদিদিকে কম ভালোবাসে না। বাবাই তো মামদিদি বলতে একপ্রকার অজ্ঞান। সবসময় যেন চোখে হারায় বাবাই মামার বাড়িতে থাকলে ওর মামদিদিকে।
ঘুম থেকে এইমাত্র উঠল বাবাই। বিছানা ছেড়ে উঠে পায়ে পায়ে এল সে বাড়ির বসার ঘরে। ঠিক তখনই, ঐ ঘরের দেওয়ালে টাঙ্গানো বড় ঘড়িটা ঢং ঢং করে সাতবার বেজে জানান দিয়ে দিল সকাল সাতটা বাজল।
"কি রে ঘুম হোলো? একটা কুম্ভকর্ণ হয়েছিস। কি ঘুম, কি ঘুম!"
বাবাই দেখল ঐ ঘরের কোণের একটা চেয়ারে বসে মামদিদি একটা টাওয়েল দিয়ে মুখের ঘাম মুছছে। পরনে তার ট্র্যাকস্যুট। বাবাই বুঝতে পারল, মর্নিং ওয়াক সেড়ে ফিরেছে মামদিদি। যবে থেকে বোঝার বয়স হয়েছে, তবে থেকেই মর্নিং ওয়াক করে আসতে দেখছে বাবাই মামদিদিকে।
"তোমার মর্নিং ওয়াক হয়ে গেল?" চোখ কচলাতে কচলাতে বলে বাবাই।
"হ্যাঁ। কতো ডাকলাম যাওয়ার সময় তোকে! ডাকাডাকি করে না পেরে একবার আলতো করে ঠেলাও দিলাম। তাও তোকে ঘুম থেকে তুলতেই পারলাম না! পুরো কুম্ভকর্ণ হয়েছিস একটা।"
মামদিদির কথা গায়ে মাখে না বাবাই। মামদিদি যে আদর করেই মাঝেমধ্যে ওকে কুম্ভকর্ণ-টর্ণ বলে তা বেশ বোঝে ও। তাছাড়া, ভুল যে খুব বলে তাও তো নয়। ও তো সত্যিই ঘুমোতে খুবই ভালোবাসে।
বাবাই-এর ঘুমের ঘোর এখনো কাটেনি। সে একটা সোফায় বসতে যায়। ইচ্ছা, ঐ ইয়া লম্বা, নরম গদি আটা সোফাটায় টানটান হয়ে আরো একটু ঘুমিয়ে নেয়।
"কি রে, ফের ঘুমোনোর তাল করছিস, না কি! যা, যা, চটপট ফ্রেশ হয়ে নে। তোর জন্য গরম কচুরি এনেছি। সাথে জিলাপি।"
বাবাই-এর ভালোই ঘুম ঘুম পাচ্ছিল এতক্ষণ। কিন্তু অবাক কাণ্ড, মামদিদি কচুরি আর জিলাপি এনেছে শুনতেই বাবাই খেয়াল করল, ওর আর মোটেই এক্কেবারে ঘুম পাচ্ছে না। ঘুম যেন কোথায় পালিয়ে গেছে মুহূর্তের মধ্যে। বাবাই-এর এও এতক্ষণে চোখে পড়ে, ওর মামদিদি যে চেয়ারটায় বসে, তার একটু দূরে বাঁদিকে যে কাঁচের টেবিলটা, সেটাতে একটা ক্যারিব্যাগ রাখা।
"কচুরি, জিলাপি এনেছো?"
"হ্যাঁ রে। দেখলাম, শতরূপা-তে কচুরি ভাজছে। আর দেখেই তোর মুখটা ভেসে উঠল চোখের সামনে। কচুরি-জিলাপি তো তোর ফেভারিট। আর এ অঞ্চলে শতরূপা-র মতোন কচুরি-জিলাপি কেউ করে না। ওদের কচুরি-জিলাপির কি দারুণ টেস্ট, তুই তো ভালোই জানিস। তোকে তো আগেও খাইয়েছি।"
"হ্যাঁ তো।" জিভে জল চলে আসে বাবাই-এর। কোনোমতে নিজেকে সামলে সে বলে, "তুমি একটু ওয়েট করো মামদিদি, আমি ফ্রেশ হয়ে এক্ষুনি আসছি।" বলেই প্রায় দৌড়ই লাগায় বাবাই বাথরুমের দিকে।
ছোট্ট ভাইটা খুশি হয়েছে দেখে মামেরও ভাল লাগে খুব।
Comments :0