কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূয়সী প্রশংসা করে পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডি’র ‘অতি সক্রিয়তা’র জন্য যার দিকে আঙ্গুল তোলা হয়েছিল এবার সেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ-কেই জামাই আদরে আপ্যা য়ন করা হলো নবান্নের ১৪ তলায়। হলো একান্তে দু’জনার মধ্যে সলাপরামর্শও। অবশ্য আলাপচারিতার বিসয়বস্তু নিয়ে দু’জনের কেউই মুখ খোলেননি। তবে রাজ্যের সমস্যা বা দাবি নিয়ে যে কোনও আলোচনা হয়নি তা একরকম নিশ্চিত।
কারণ, তেমনটা হলে সঙ্গে ফাইলপত্র সহযোগে সরকারি আধিকারিকদের সেখানে দেখা যেত। বাস্তবে তেমনটা হয়নি। তাই অনুমান করা যেতেই পারে এই নিরালা আলাপচারিতায় রাজনৈতিক বোঝাপড়াই ছিল অগ্রাধিকারে। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শাসক তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে সীমাহীন চুরি-দুর্নীতির আগল যেভাবে খুলছে, দলে দলে নেতাদের ঠিকানা যেভাবে জেলে স্থানান্তরিত হচ্ছে তাতে জনমানসে তৃণমূল সম্পর্কে ঘেন্নায় মানুষ ছিঃছিঃ করতে শুরু করেছে। আদালতের নির্দেশে এবং নজরদারিতে যেহেতু বেশিরভাগ দুর্নীতির তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই এবং ইডি তাই চূড়ান্ত বেকায়দায় রাজ্যের শাসক দল। নানা কৌশলে চেষ্টা করেও চুরির সব তথ্য আড়াল করা যাচ্ছে না।
তাই নির্দেশের পুনর্বিবেচনার আবেদন, সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে ডাবল বেঞ্চ, হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট গিয়ে কোটি কোটি সরকারি টাকা বরবাদ করে সময় নষ্ট করার বা ন্যায় বিচার ও সঠিক তদন্ত ভেস্তে দেবার প্রাণপণ চেষ্টা চলছে।
বাইরে জনসমক্ষে এই প্রক্রিয়া চললে তাতে কাজের কাজ যে বিশেষ হবে না সেটা তৃণমূল জানে। তাই বাঁচার একমাত্র রাস্তা কেন্দ্রীয় সরকার তথা আরএসএস-বিজেপি’র সঙ্গে গোপন সমঝোতা। পারস্পরিক স্বার্থে উভয়পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া। এটা অবশ্য নতুন নয়, অতীতে একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটেছে। যখনই তৃণমূল বিপদে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও না কোনও অজুহাতে দিল্লি ছুটে যান এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে রুদ্ধদ্বার বৈঠক সেরে ফিরে আসেন। তারপর দেখা যায় সিবিআই-ইডি ঝিমিয়ে পড়ে। কয়েক মাস আগে দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সেটিং করে এসেছেন। তারপর রাজ্য বিধানসভায় প্রধানমন্ত্রীকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন তার দলের নেতাদের চুরি-দুর্নীতির তদন্তে সিবিআই-ইডি তদন্ত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছুই জানেন না। সবটা নাকি প্রধানমন্ত্রীর অগোচরে করাচ্ছে বিজেপি নেতারা। ঘুরিয়ে আঙুল তুলেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দিকে।
অতীতে এই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে শোনা গেছে বাজপেয়ী ভালো, আদবানি খারাপ। পরে আদবানি ভালো হয়ে মোদী খারাপ হয়েছেন। আরও পরে মোদী ভালো হলেন খারাপ অমিত শাহ। এখন দেখা যাচ্ছে অমিত শাহও ভালো হয়ে গেছেন। তাহলে খারাপ কে? এখনো স্পষ্ট নয়।
তৃণমূলের রন্ধ্রে রন্ধ্রে চুরি-দুর্নীতি যেভাবে স্থায়ী বাসা বেঁধেছে সেখান থেকে বের করা অসম্ভব। গত প্রায় এক যুগ ধরে এমন কোনও সরকারি প্রকল্প হয়নি যেখান থেকে তৃণমূলীরা চুরি করেনি। গোটা রাজ্যে কোনও কোনও তৃণমূল নেতার দেখা মিলবে না যে চুরি করে সম্পত্তির পাহাড় জমায়নি। রাজ্যের মানুষের সামনে তৃণমূলের আসল চেহারাটা যত পরিষ্কার হচ্ছে ততই ভয় বাড়ছে পিসি-ভাইপোর। ক্ষমতায় টিকে থাকা ক্রমাগত কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে যাচ্ছে। এদিকে রাজ্যজুড়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাস্তার আন্দোলনের দখল বামপন্থীদের হাতে। বামপন্থীদের শক্তি কেন বাড়ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ অমিত শাহ-র। এই অবস্থায় উভয়ের স্বার্থেই বামপন্থীদের ঠেকাতে কাছাকাছি আসতেই হবে। যেমন হয়েছিল বামফ্রন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার সময়। নবান্নের আপ্যায়ন তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত।
Comments :0