Editorial Shame on democracy

গণতন্ত্রের লজ্জা

সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial Shame on democracy

মোদীর মুখে গুজরাট আস্থা রাখলেও প্রত্যাখ্যান করেছে দিল্লি ও হিমাচল। কয়েকদিনের ব্যবধানে গুজরাট ও হিমাচল প্রদে‍‌শের বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে। দিল্লিতে হয়েছে পৌর কর্পোরেশন নির্বাচন। গুজরাটে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হলেও দিল্লি ও হিমাচল প্রদে‍শ বিজেপি’র হাত ছাড়া হয়ে‍‌ গেছে। হিমাচলে বিজেপি-কে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। আর দিল্লিতে বিজেপি-কে হটিয়ে কর্পোরেশন দখল কসরেছে আম আদমি পার্টি। তিন জায়গাতেই ক্ষমতা পুনর্দখলে বিজেপি চেষ্টার কসুর করেনি। প্রচারে খরচ করেছে অঢেল অর্থ। আর সংবাধমাধ্যম বিজেপি’র মু্খপত্রের মতোই কাজ করেছে। এতদসত্ত্বে‍‌ও দিল্লি বা হিমাচলে মানুষকে কবজা করা যায়নি। দিল্লি ও হিমাচলে এমন পরাজয় শাসক হিন্দুত্ববাদীদের কাছে বড় সড় ধাক্কা। বিশেষ করে দিল্লিতে ১৫ বছর ধরে কর্পোরেশন দখলে রাখার পর এবার হাতছাড়া হওয়াটা বিপর্যয়ের শামিল। সবচেয়ে বড় কথা গুজরাট ও হিমাচলের মতো দিল্লিতেও প্রচারে শাসকদলের প্রধান মুখ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। অর্থাৎ পৌর নির্বাচনেও বিজেপি ভোট চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীকে সামনে রেখে। যেন জিতলে মোদীই পরিচালনা করবেন দিল্লি কর্পোরেশন।

 


আসলে ২০২৪ সা‍লের লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে বিজেপি কোনোরকম ঝুঁকি নিতে চায়নি। ক্ষমতাসীন অবস্থা থেকে ক্ষমতাহীন হলে তার যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে সেটা আগামী লোকসভায় মোদীকে কয়েক ধাপ পিছিয়ে দেবে। দলে যেহেতু মোদীই একমাত্র জনপ্রিয় নেতা তাঁকেই সর্বত্র কুমির ছানার মতো হাজির করা হয় ভোট পাবার লোভে। দিল্লিতেও তাই হয়েছে। কিন্তু মোদী ম্যাজিক যে সর্বত্র সব সময় কাজ করে না দি‍‌ল্লি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। দিল্লি দেশের রাজধানী। দেশ শাসন হয় দিল্লি থেকে।

 

 দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। তেমনি লেফটেন্যান্ট গভর্নরের মাধ্যমে দিল্লি সরকার ও কর্পোরেশনে ছড়ি ঘোরায় কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাভাবিকভাবে দিল্লিতে প্রবল দাপট শাসক দলের। মানুষ সবকিছুকে উপেক্ষা করে পৌর ক্ষমতা থেকে বিজেপি-কে উৎখাত করে দেখিয়ে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা অপরাজেয় নয়। তারা চাইলেই সবকিছুর দখল নিতে পারে না। মানুষ চাইলে তাদের বিতাড়িত করতে পারে।

 

 


টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও বিজেপি জয় সম্পর্কে নি‍‌শ্চিত ছিল না। তাই নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে কিছুটা এগিয়ে থাকার চেষ্টা করেছিল। প্রথমত, এবছরই দিল্লির তিনটি পৌরসংস্থা যুক্ত করে একটি কর্পোরেশন তৈ‍‌তি করে। দ্বিতীয়ত, প্রচারের প্রধান মুখ করে প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ১৭জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, ছ’জন মুখ্যমন্ত্রী, দলের শীর্ষ নেতা-সাংসদ-বিধাকরা ঝাঁপিয়েছিল প্রচারে। কিন্তু কাজ হয়নি। সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বিভাজন করে সুযোগ নেবার চেষ্টাও কম হয়নি। সেটাই কাজে আসেনি। সত্য এটাই মানুষ বিজেপি-কে চায়নি।

 


মানুষ না চাইলে কি হবে ক্ষমতার লোভে উন্মাদ এই দলটি ক্ষমতার জন্য পারে না এমন কাজ কমই আছে। চূড়ান্ত অসততা, নীতিহীনতার আশ্রয় নিয়ে জোর করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের নজির অনেক আছে। মানুষ ওদের প্রত্যাখ্যান করলেও টাকার জোরে অসৎ জনপ্রতিনিধিদের ওরা কবজা করে। কোটি কোটি দিয়ে গোরু-ছাগলের মতো কেনে কাউন্সিলর, বিধায়কদের। এবার আগাম জানিয়ে দিয়েছে। ভোটে হারলেও মেয়র তাদেরই হবে। অর্থাৎ বিপুল টাকায় কাউন্সিলর কিনবে মোদীর দল। তারপর দখল করবে দিল্লি পৌরসভা। একটা দল যে নীতিগত, আদর্শগত, মূল্যবোধগতভাবে কতটা দেউলিয়া মোদী-শাহরা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দুনিয়াকে দেখাচ্ছেন। গণতন্ত্রের লজ্জা।

Comments :0

Login to leave a comment