Editorial

খাদ্য সঙ্কট

সম্পাদকীয় বিভাগ

রুশ ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি যে গুরুতর ধাক্কা খেয়েছে সেটা কমবেশি সকলেরই জানা। এটাও অজানা নয় যে এই যুদ্ধের ফলে আন্তর্জাতিক খাদ্যের বাজারে জোগান সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ফলে খাদ্যের দাম অনেকটা বেড়ে গেছে ঠিকই পাশাপাশি অনেক খাদ্য ঘাটতি দেশের পক্ষে প্রয়োজনীয় খাদ্য জোগাড় করাই অসম্ভব হয়ে উঠেছে। আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমী দুনিয়া এবং তাদের সহযোগীরা এর দায় পুরোপুরি রাশিয়ার উপর চাপিয়ে দিয়ে রাশিয়াকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা করছে। তারা বলতে চাইছে খাদ্যের আন্তর্জাতিক বাজার বেসামাল হবার মূল কারণ ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের সর্বশেষ বৈঠকেও রাশিয়াকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আমেরিকা বিশ্বের সকল দেশকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে। আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়ার উপর চাপ সৃষ্টি করতে যাতে ইউক্রেন থেকে সাগরের উপর দিয়ে ইউক্রেনের গম রপ্তানি বাধাপ্রাপ্ত না হয়।
বিশ্বের বাজারে সর্বাধিক গম রপ্তানি করে ইউক্রেন ও রা‍শিয়া। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে কয়েক দফায় কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আমেরিকা ও ইউরোপ। ফলে রাশিয়া থেকে গম রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। একমাত্র ইউক্রেনের গমই বি‍‌শ্বের বাজারে যেতে পারে। যুদ্ধ শুরুর পর এই রপ্তানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তখন বিশ্ব বাজারে খাদ্যের দাম হুহু করে বাড়তে শুরু করে। এই অবস্থায় কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের গম বোঝাই জাহাজ নিরাপদে যাতায়াতের জন্য চুক্তি হয় রাশিয়ার। নিজের দেশের গম রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হলেও ঘাটতির দেশে খাদ্যের জোগান বাড়াতে এবং খাদ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে রাশিয়া চুক্তিতে সম্মত হয়। বিগত প্রায় এক বছর ধরে নিরাপদে ইউক্রেনের গম রপ্তানি সম্ভব হলেও সম্প্রতি রাশিয়া সেই চুক্তি থেকে সরে আসে। ফলে ফের আন্তর্জাতিক খাদ্যের বাজারে সঙ্কট তৈরি হয়। খাদ্যের দাম আবার বাড়তে শুরু করে।
আপাতদৃষ্টিতে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ মনে হলেও যুদ্ধটা আসলে কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে। আমেরিকাও তার সহযোগী ইউরোপের দেশগুলির। ইউক্রেনকে দাবার বোড়ের মতো সামনে রেখে আড়াল থেকে যুদ্ধ করছে আমেরিকা। লক্ষ্য রা‍‌শিয়াকে দুর্বল ও কোণঠাসা করে সমগ্র ইউরোপ এবং মধ্য ও পশ্চিম এ‍‌শিয়ায় আধিপত্য বিস্তার। সমস্ত রকমের যুদ্ধাস্ত্র, গোলা-বারুদ আসছে আমেরিকা, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশ থেকে। সাহায্য আসছে বিপুল অর্থ। যুদ্ধের যাবতীয় খরচ বহন করছে পশ্চিমী দুনিয়া। আমেরিকার দেওয়া অস্ত্রে এখন ইউক্রেন রুশ অধিকৃত অঞ্চলেই হামলা চালাচ্ছে না, রাশিয়ার অভ্যন্তরেও পর পর আক্রমণ শুরু করেছে। এই অবস্থায় রাশিয়া ইউক্রেনের গম রপ্তানির চুক্তি থেকে সরে এসেছে।
ইউক্রেনের গম রপ্তানি বন্ধের পাশাপাশি গোদের উপর বিষ ফোঁড়ার মতো ভারতও চাল রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে এবং গম রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে জোগান সঙ্কট আরও বেড়ে খাদ্য মূল্য আরও বেড়ে গেছে। গত কয়েক বছর ভারতে পর্যাপ্ত খাদ্য উৎ পাদন হলেও বিস্তর রপ্তানিও হয়েছে। করোনা পর্বে বিনামূল্যে বা কম মূল্যে খাদ্য বণ্টনও হয়েছে। ফলে সরকারি মজুত ভাণ্ডার কমে গেছে। পাশাপাশি খাদ্যের উচ্চ মূল্য বৃদ্ধি স্থায়ী রূপ পেয়ে যাচ্ছে। এদিকে সামনে কয়েক রাজ্যে নির্বাচন তারপর লোকসভা নির্বাচন। উচ্চ খাদ্যমূল্য মোদী সরকারের গদি উল্টানোর আশঙ্কা থাকায় সরকার দেশে খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে চাল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে আমেরিকাসহ অন্য অনেক দেশ ভারতের উপর ক্ষুব্ধ হলেও ভারতকে সঙ্গে রাখার তাগিদে নীরব থাকছে। আক্রমণ কেন্দ্রীভূত করছে রাশিয়ার দিকে।

Comments :0

Login to leave a comment