সৌরভ গোস্বামী
চতুর্থী হয়ে গেলেও জমেনি পুজোর বাজার। গত রবিবার ছুটির দিনেও শহরের জমজমাট বাজারগুলোতেও ক্রেতার তেমন ভিড় চোখে পড়েনি। গড়িয়াহাট থেকে হাতিবাগান- সর্বত্রই চিত্রটা প্রায় একই।
মূল্যবৃদ্ধির সাথে আয় কমে যাওয়ার কারণেই এই অবস্থা, মত অনেকের। যার প্রভাব পড়ছে পুজোর বাজারে। ফলে কিছু বড় দোকানে ক্রেতা চোখেও পড়লেও ফুটপাথের বাজার কার্যত ফাঁকা।
ধর্মতলার এক ফুটপাথে পোশাকের দোকানদার ইমতিয়াজ আখতার বললেন, ‘‘অন্যবার পুজোর মাসখানেক আগে থেকেই বেচাকেনা শুরু হয়ে যায়। এ বছর প্রথম দিকে বৃষ্টির জন্য লোক আসেনি এবং এখনও বিক্রিবাটা আশানুরূপ হচ্ছে না। গত বছরের স্টকই এখনও বিক্রি হয়নি’’। একই কথা বলছেন ধুলিয়ান থেকে এসে মেট্রো গলিতে জুতোর দোকান চালানো দোকানদার জিতেন্দ্র কুমার। নিউ মার্কেট, শ্রীরাম অর্কেডের ফুটজুড়ে বসে থাকা হকারদের পসরাকে কেন্দ্র করে ভিড়ের ছবিও অনেকাই ফ্যাকাশে। যে রাস্তা ধরে সিমপার্ক মলের দিকে যেতে লাগত প্রায় ১৫ মিনিটি, তা ৫ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে।
গয়না বিক্রেতা মহম্মদ আমিন বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। যার প্রভাব পড়ছে পুজোর বাজারে।’’ বহরমপুরের বাসিন্দা, নিউ মার্কেট চত্বরের এক শপিং মলের কর্মী বাদশা দাশ বলেন, ‘‘অন্য বছর এই সময় পোশাক, জুতোর দোকানে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। রবিবারও ফাঁকা মল।’’ গ্র্যান্ড হোটেলের নিচের বিক্রেতা নাজিম সরফরাজ বলেন, ‘‘এ বছর পুজোর বাজারে মন্দা। ভেবেছিলাম, শেষের দিকে বাজার জমবে। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ দোকানেই বেচাকেনা খুব কম।"
গ্র্যান্ড হোটেলের পাশের গলি থেকে লিন্ডসে স্ট্রিট পর্যন্ত রাস্তায় আগে হাঁটা যেত না পুজোর আগে। পথ জুড়ে শুধু মানুষের কালো মাথা। ইমিটেশন থেকে শুরু করে প্রসাধনী বিভিন্ন জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। সেই রাস্তা দিব্যি ফাঁকা। উদিত কুমার মন্ডল নামে ইমিটিশন ব্যবসায়ীর বক্তব্য, ‘কোভিডের সময়ে অনেক মানুষের চাকরি চলে গেছে। ফুটপাথ থেকেই তাঁরাই কেনাকাটা করেন। কিন্তু এবারে সেই ধরনের মানুষের সংখ্যাটাও অনেক কম। দশটা দোকান ঘুরে দর দাম করে জিনিস কেনার যে মজা, অনলাইনের ডিসকাউন্ট আর শপিং মলের যুগে সেই আনন্দ আর নেই।’
নিউ মার্কেটে শাড়ির দোকান রয়েছে ইফতিকার ইজাজের। পুজোর বাজার কেমন চলছে জিজ্ঞেস করতে জানালেন, ‘আগে এই এক মাস পুজোর বাজারে আমাদের প্রায় ছ’মাসের লাভ হত। এখন তো লাভ দূর, কেনা দামেও খদ্দের মিলছে না’
এবার তাঁরা ভেবেছিলেন বুঝি কোভিডের আগের মতোই কেনাকাটার ধুম দেখা যাবে, পুজোর বাজার আগের মতোই জমবে। কিন্তু তা হল কই? সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ চতুর্থীতেও জমল না বাজার। এছাড়াও করোনার কারণে অনেকেরই কেনাকাটার ধরন পাল্টেছেন অনেকেই এখন অনলাইন শপিংয়ে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছেন। বাড়ি বসেই অনলাইনে জামা কাপড় বুক করে দিলে সেটা সহজেই বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে। বাইরে বেরোনোর, ঘুরে ঘুরে কেনার কোনও ঝামেলা নেই।
অন্যদিকে আবার অর্থনৈতিক সমস্যাও মধ্যে রয়েছে। রাজ্যে শিল্প নেই, ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হচ্ছে হাজার হাজার শ্রম শক্তিকে। রয়েছে কাজ চলে যাওয়া, মাইনে কম ইত্যাদির কারণে অনেকেই এবার তেমন কেনাকাটা করছেন না। তবে হ্যাঁ এটা ঠিক যে, গত দুই বছর যেমন একদমই সেই অর্থে ব্যবসা হয়নি, বাজার ফাঁকা ছিল সেই তুলনায় এবার খানিকটা হলেও মানুষ বাজারে আসছেন।
গরিয়াহাটের কসমেটিক্সের দোকানগুলো দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে হাতে গুনে দু একটা দোকানে ভিড় রয়েছে। এমনকি ফুটের দোকানগুলোতেও তেমন ভীড় নেই। ক্রেতার অপেক্ষায় হা পিত্যেশ করে বসে আছেন বেশির ভাগ ব্যবসায়ী। ব্যবসা কেমন চলছে জিজ্ঞেস করায় মোমো বিক্রেতা অর্পন চট্টোপাধ্যায় জানালেন, ‘ব্যবসা যদি চলত আপনি এই সময় আমাদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন না। কোভিডের আগে এই সময় গড়িয়াহাটের ফুটপাথে দাঁড়ানো যেত না। প্রচুর মাল তুলে রেখেছি, কিন্ত মার্কেট একদম ডাউন। আগে সকাল থেকে নাওয়া খাওয়ার সময় পেতাম না ক্রেতার চাপে। আর এখন নিজেই নিজের মোমো খাচ্ছি, ঘুরে বেড়াচ্ছি।’
গ্রাফিক্স: মনীষ দেব
Comments :0