দিল্লিতে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২৬ নভেম্বর। এ বছর পূর্ণ হচ্ছে তার পাঁচ বছর। কৃষকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবছর ওই দিনের দেশের ৫০০ জেলায় জেলাশাসকের দপ্তর ঘেরাও করবে সংযুক্ত কিসান মোর্চা।
শুক্রবার বর্ধমানে প্রাদেশিক কৃষক সভার সম্মেলন ঘিরে আয়োজিত সমাবেশে এই ঘোষণা করেছেন দেশের কৃষক আন্দোলনের নেতা হান্নান মোল্লা।
হান্নান মোল্লা বলেছেন, ‘‘খরচের দেড়গুন ফসলের সরকারি দাম এবং কৃষিঋণ মকুবের দাবিতেই হবে আন্দোলন। সমস্ত অংশকে এক করে গণজাগরণ করার পরিকল্পনা সংযুক্ত কিসান মোর্চার। এই আন্দোলন ভাঙার যত ষড়যন্ত্র আছে পরাজিত করতে হবে। আমরা কৃষক। ধর্ম, জাত নির্বিশেষে পরিচয় একটাই আমরা কৃষক।’’ তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি-আরএসএস চাইছে ধর্ম, জাত, ভাষা, অঞ্চলের নামে ভাগ করতে। এরা সংবিধান মানে না, সাংবিধানিক অধিকার মানে না। সরকারকে প্রশ্ন করার অধিকার দিয়েছে সংবিধান। সেই সংবিধানকে ধ্বংস করতে নেমেছে। এরা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়। এই শক্তিকে পরাজিত করতে হবে।’’
হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘ওরা আরএসএস’র শতবর্ষ পালন করছে। জাত-ধর্মের নামে ভাগ করার কাজ করছে। আরএসএস ব্রিটিশের দালালি করেছে। আর এরাই দেশপ্রেমের জ্ঞান দিচ্ছে। আমাদের দেশদ্রোহী বলছে। বিভেদের এই ষড়যন্ত্র মানুষের কাছে ফাঁস করতে হবে। ফ্যাসিবাদ দেশের জনতার ঐক্য, ধর্মনিরপেক্ষতাকে শেষ করবে। ফসলের দাম, মজুরির আন্দোলনকে শেষ করে দেবে। আজ তাকে হারানোর লড়াই। রাজ্য সম্মেলনে সেই লড়াইয়ের শপথ নিতে হবে।’’
হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘ঋণের বোঝায় জর্জরিত কৃষক। মোদী নিজের প্রভু আদানিকে এলআইসি’র টাকা দিচ্ছেন। কর্পোরেটের ১৪ লক্ষ টাকার ঋণ মকুব করেছে মোদী সরকার। অথচ কৃষকের ঋণ মকুবের বেলায় বলছে টাকা নেই।’’
হান্নান মোল্লা এদিন দিল্লির ঐতিহাসিক লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা বিশদে জানিয়েছেন। বলেছেন প্রায় পাঁচশো কৃষক সংগঠনকে নিয়ে সংযুক্ত কিসান মোর্চা গড়ার কথা। তিনি বলেছেন, ‘‘একা একা লড়াই হবে পারবে না। তাই বিভিন্ন কৃষক সংগঠনকে একজোট করেছি।’’
তিনি বলেন, ‘‘মোদীর মতো মিথ্যাবাদী, কৃষকের দুশমন, বিশ্বাসঘাতক, সাধারণ মানুষের শত্রু কোনও প্রধানমন্ত্রী দেখিনি।
দিল্লিতে আমাদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। ৫ ফুটের দেওয়াল তুলে দিয়েছিল কৃষকদের আটকাতে।আমাদের একফোঁটা জল ও দেয়নি। ঠান্ডায় বসেছিলাম, কোনো ব্যবস্থা করেনি আর এখন আমাদের বলেছে চীনের দালাল, পাকিস্তানের দালাল। আর মোদী কী? নিজে তো আদানির দালাল।’’
তিনি বলেন, ‘‘মিথ্যা প্রচার সত্ত্বেও ৩৮৪ দিন বসে ছিলাম। মোদী হঠাৎ এসে বললেন তিনটি কালা কানুন বাতিল করছি। এত বড় জয় কৃষকের কখনও হয়নি। শ্রমিক, কৃষক, মহিলা সবাই একযোগে লড়াই করেছে। ৭৩২ কৃষক শহীদ হলেও চলল লড়াই। তখন চিঠি দিয়ে বলেছিলেন আলোচনা হবে। তাই সাময়িকভাবে আন্দোলন স্থগিত রেখেছিলাম। কিন্তু আজ পাঁচ বছর হয়ে গেল একবারও কথা বলার সময় পাননি। ফলে আন্দোলন চলবে।’’
রাজ্যের মমতা ব্যানার্জি সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এখানে নাকি কেউ আত্মহত্যা করে না। কত বড় মিথ্যা কথা। ২৫২ জনের তালিকা পাঠিয়ে ছিলাম। বলছে পারিবারিক কারণে আত্মহত্যা। কৃষকের কাছে আমাদেরই সঠিক তথ্য দিতে হবে।’’
Farmers surround 500 district magistrates, on November 26
২৬ নভেম্বর দেশের ৫০০ জেলাশাসকের দপ্তর ঘিরছেন কৃষকরা
সভায় বক্তব্য রাখছেন হান্নান মোল্লা
×
Comments :0