অশান্তির রেশ বজায় রয়েছে ফুরফুরা শরিফে। বুধবার পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয় ফুরফুরা শরিফের তালতলা এলাকা। দিন গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলেও এলাকার শান্ত হয়নি পরিস্থিতি। সকাল থেকেই পুলিশের ছোঁড়া পরপর কাঁদানে গ্যাসের শেলে দমবন্ধ হয়ে পড়ে এলাকার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ফুরফুরার মতন শান্ত জায়গাকে অশান্ত করে তুলছে তৃণমূল কংগ্রেস। পুলিশের মদতে তাণ্ডব চালানো হচ্ছে। পুলিশের অত্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য পথ অবরোধ করেন এলাকার মানুষ। আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকির বাড়ি এই এলাকায়। তিনিও পুলিশের ভূমিকায় প্রতিবাদ জানান।
পুলিশের বক্তব্য, পরিস্থিতির জেরে আহত হয়েছেন অ্যাডিশনাল এসপি লাল্টু হালদার সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী। আহত আইএসএফ’র কর্মী সমর্থকরাও। এই তীব্র অশান্ত পরিবেশের মধ্যেই ফুরফুরা পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। এসডিও শ্রীরামপুর সম্রাট চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে বোর্ড গঠন সম্পন্ন হয়। ফুরফুরা শরিফ পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েছেন রাজিয়া সুলতানা, উপপ্রধান মৃগাঙ্ক মোহন মাল।
ঘটনা সূত্রপাত হয় ভোট গণনার দিন থেকেই। তীব্র ডামাডোলের মধ্যে ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই বার করে দেওয়া হয় বামফ্রন্ট এবং আইএসএফের সমর্থকদের। আইএসএফ সমর্থকদের অভিযোগ, বাম-আইএসএফ জোট ২৯টি আসনের মধ্যে ২২টি আসনে এগিয়েছিল। কিন্তু ভোট গণনার শেষ হওয়ার আগেই এজেন্টদের বার করে দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটের ফলাফলে তা সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়ে দেখা যায় সেখানে বাম-আইএসএফ জোট পেয়েছে মাত্র পাঁচটি আসন, বাকি ২৪টি আসনে জয়লাভ করেছে তৃণমূল। এরপরে পুরো বিষয়টি কোর্টে বিচারাধীন হয়।
এই বিষয়ে ফুরফুরার পিরজাদা কাশেম সিদ্দিকি বলেন, ফুরফুরায় জিতেছে আইএসএফ। জোর করে তৃণমূলকে জয়ী দেখানো হচ্ছে। আমরা আদালতে গেছি। সেখানে বিচারাধীন আছে। কী করে বোর্ড গঠন হবে। আর ফুরফুরার লোকেরা তা করতে দেবে কেন?
জাঙ্গিপাড়ার সিপিআইএম নেতা সুদীপ্ত সরকার জানান, ভোটের দিন ঝামেলা হওয়ার পর ভোট গণনার দিন ২২ টি আসনে এগিয়ে থাকলেও সিপিআইএম’র প্রার্থীদের গণনা কেন্দ্র থেকে বার করে দেওয়া হয়। এরপর দেখা যায় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ফলাফলে সব উলটে গেছে। ২৪টি আসন পায় তৃণমূল, বাম ও আইএসেফ জোট পায় ৫ টি আসন। তারপরে গণনা কেন্দ্রের পাশ থেকে ব্যালট পেপার উদ্ধার হয়। এই বিষয়ে দুটি পৃথক মামলা করা হয় কলকাতা হাইকোর্টে। বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া পুরোটাই বিচারাধীন রয়েছে। হাইকোর্টের বিচারাধীন কপি বিডিও, এসপি, ডিএম সকল স্তরে পাঠানো হয়। এরপরে অনৈতিকভাবে বোর্ড গঠনের চেষ্টা করে তৃণমূল। যার কারণে অগ্নিগ্ধ হয়ে ওঠে ফুরফুরা শরীফ এলাকা।
এই বিষয়ে নওসাদ সিদ্দিকি বলেন, পুলিশ পীরজাদাদের গায়ে হাত দিচ্ছে। বিধায়কের বাড়ি ভাঙচুর করছে। তাই অনির্দিষ্টকালের জন্য এলাকায় অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছে এলাকার মানুষজন। পুলিশ নিজে বোমা মারছে।
আমি পুলিশ কে বলেছি কিছুদিন আগে আমার ভাইপো নওশাদ সিদ্দিকীর বাড়ি রাতের অন্ধকারে ঘিরে তাকে তুলে নিয়ে গেলেন।সে জেল খাটলো। তার পরও কি আপনাদের শখ মিটলো না।দরবারের উপর পুলিশের হামলা এই প্রথম।
ফুরফুরার ঘটনা নিয়ে হুগলি জেলা গ্রামীন পুলিশ সুপার আমনদীপ জানিয়েছেন, আজকে ফুরফুরায় ঘটনায় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছে।
Comments :0