Editorial

৫৭ থেকে ৫৮

সম্পাদকীয় বিভাগ


৫৭ পেরিয়ে ৫৮ বছরে পদার্পণ করল শ্রমজীবী মানুষের মুখপত্র গণশক্তি। আর পাঁচটা সংবাদপত্রের ভিড়ে গণশক্তি আর একটি পত্রিকা নয়। গণশক্তি একেবারেই আলাদা, স্বতন্ত্র। মেহনতি মানুষের সংগ্রামী কণ্ঠস্বর ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয় যেসব পত্রিকায় তাদেরই অন্যতম গণশক্তি। মুনাফাকে পাখির চোখ করা কর্পোরেট মালিকানাধীন যেসব পত্রিকা পুঁজির শ্রম শোষণের রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে নিরপেক্ষতার মুখোশ পরে তাদের একেবারে বিপরীত মেরুতে অবস্থান গণশক্তির। তাই গণশক্তি নিজেকে নিরপেক্ষতার ভণ্ডামির মোড়কে আড়াল করে না, বরং স্পষ্টভাবে মেহনতি মানুষের পক্ষের বলে দাবি করে। গণশক্তি মুখোশের আড়ালে আত্মপরিচয় গোপন করে না, গর্বের সঙ্গে আত্মপরিচয় ঘোষণা করে। কার্লমার্কস ও ফ্রেডরিক এঙ্গেলস যেমন যেমন তাঁদের কালজয়ী কমিউনিস্ট পার্টির ‘ইশ্‌তেহার’ গ্রন্থের একেবারে শেষে যেমন ঘোষণা করেছিলেন, ‘আপন মতামত ও লক্ষ্য গোপন রাখতে কমিউনিস্টরা ঘৃণা বোধ করে।’ সেই পথ অনুসরণ করে গণশক্তি ও ঋজুতার সঙ্গে খোলাখুলি জানিয়ে দেয় ‘সমস্ত প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সবল উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে আগামীর শোষণ-বঞ্চনাহীন নতুন সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই‌য়ের বার্তাবাহকের কাজ করছে তারা।
এরাজ্য, কি গোটা দেশ, এমনকি সারা বিশ্বের যেখানেই শ্রমজীবী মানুষ তাদের অধিকারের লড়াই করছেন গণশক্তি তাদের লড়াইয়ে‌র কথা পৌঁছে দেয় পাঠকদের কাছে। গণশক্তির লড়াই যেমন পুঁজিবাদী শোষণের বিরুদ্ধে এবং পুঁজিবাদের অবসানের লক্ষ্যে তেমনি যেসব অবাস্তব যুক্তিহীন ধারণা, ধর্মান্ধতা, জাত-ধর্ম-বর্ণের বিভাজন ইত্যাদিকে আশ্রয় করে পুঁজিবাদ তাদের শোষণকে বৈধতা দেবার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধেও গণশক্তি সমানভাবে সক্রিয়। বস্তুত এসবের আড়ালে পুঁজিবাদ শ্রমশোষণের তীব্রতা বাড়ায় এবং প্রসারিত করে। ভারতের বুকে পুঁজির অন্তহীন শোষণ আশ্রয় করেছে হিন্দুত্ববাদকে। সারা বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান সঙ্কটের মধ্যে যখন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে আর বেশি শোষণ ও বৈষম্য তখন তারা বেশি বেশি করে আঁকড়ে ধরছে কট্টর দক্ষিণপন্থার রাজনীতিকে। ভারতে পুঁজিতন্ত্র বেছে নিয়েছে হিন্দুত্বের ধর্মান্ধতাকে। অর্থাৎ ধর্মের নামে, জাতির নামে, বর্ণের নামে মানুষকে বিভাজিত করে একের বিরুদ্ধে অন্যকে লড়িয়ে দিচ্ছে যাতে মানুষ তাদের অর্থনৈতিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার লড়াই থেকে সরে আসে। শ্রমজীবী মানুষ, তা সে শ্রমিক হোক বা কৃষক, দলিত হোক বা আদিবাসী— তারা যদি পুঁজির শোষণের বিরুদ্ধে তাদের শ্রমের প্রকৃত মূল্য দাবি করে ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে তাসের ঘরের মতো ভেঙে যা‍বে এই ব্যবস্থা। কয়েক বছর আগে দিল্লিতে কৃষক আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে সমস্তরকম বিভেদ-বিভ্রান্তিকে প্রত্যাখ্যান করে খেটে-খাওয়া মানুষ যদি এক হতে পা‍‌রে, জেদি লড়াইয়ে জান কবুল করতে পারে তাহলে জয় অবশ্যম্ভাবী। গণশক্তি মানুষের মধ্যে এই চেতনা সঞ্চার করতে প্রতিদিন কাজ করে চলেছে। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদকে হাতিয়ার করে প্রকৃত ইতিহাস চেতনায় সমৃদ্ধ মানুষই পারে সমাজকে বদলাতে। সবরকমের বৈষম্য নির্বাসন দিতে। গণশক্তি সেই মহান দায়িত্ব সাধ্যমত পালনের শপথ নিয়েছে।

Comments :0

Login to leave a comment