Bogtui

মৌনতায় মুখরিত প্রতিবাদ বগটুইয়ের মৌন মিছিলে

রাজ্য জেলা

 ছিল না কোনও পতাকা। তৃণমূল, বিজেপি-র মত ছবি-হোর্ডিংয়ে ছয়লাপ করা হয়নি রাস্তার দু-পাশ। শোকার্তদের যন্ত্রণায় একাত্ম হতে হাজারও পায়ে ঢাকা পড়েছিল বগটুইয়ের রাস্তা। ছিল না কোনও আওয়াজ। মৌন মিছিল ঘুরেছে গোটা বগটুই। তাতে শামিল হয়েছিলেন বগটুই, কুমাড্ডা, চন্দনকুন্ঠা, পাবরোখিয়াসহ পরপর গ্রামের মানুষ। বগটুই গণহত্যায় নৃশংসভাবে খুন গ্রামবাসীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন সবাই। 
মৌন মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন সিপিআই(এম)'র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। গ্রামঘুরে মিছিল শেষ হয় বগটুই মোড়ে। সেখানে হওয়া সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘আমাদের ছিল না কোনও স্লোগান। ছিল না কোনও রাজনৈতিক প্রচার। ছিল না কোনও পতাকা। মানুষ নীরবে পথ হেঁটেছেন। মিছিল দেখে মানুষ দু পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।’’
প্রসঙ্গত, একবছর আগে তৃণমূলের নৃশংসতায় ১০জন খুন হয়ে যাওয়ার পরেই বগটুইয়ে চলে এসেছিলেন পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। পুলিশ সেদিন তাঁকে এবং পার্টিনেতাদের আটকানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। বিজেপি-র কোনও নেতা সেদিন নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াননি। মমতা ব্যানার্জি এসেছিলেন অনুব্রত মণ্ডলকে পাশে নিয়ে ক্ষতিপূরণের চেক বিলি করতে। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই অনুব্রত বলেছিলেন,‘‘ভালো করে কেস সাজাতে হবে।’’ তাৎপর্যপূর্ণ হলো, এদিনই, বগটুইয়ের গণহত্যার এক বছরের মাথায় অনুব্রতর ঠাঁই হয়েছে তিহাড় জেলে।
অপরদিকে একবছর আগে যেখানে সংঘটিত হয়েছিল পাশবিক হত্যালীলা, ঠিক সেখানেই রাস্তার দু পাশে হঠাৎই শহীদ বেদী বানিয়েছিল তৃণমূল আর বিজেপি। দুই শহীদ বেদী থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বাস করা মিল শ্রমিকের কথায় ঝড়ে পড়েছে একরাশ বিরক্তি। সাফ বলেছেন, ‘‘যারা মরেছে তারা তৃণমূল। যারা মেরেছে তারাও তৃণমূল। পেছনে আছে শুধু লুট। এখন আরও একটা দল এসে পড়েছে। তারা এবার একটা গোষ্ঠীকে নিয়ে শুরু করেছে মাতামাতি। এতেই তো ফের গন্ডগোল বাধার আশঙ্কা সবার।’’
গ্রাম ঘুরে পরিষ্কার মিলেছে এই মন্তব্যের সাক্ষ্য। দিনমজুরি করে দিনগুজরান করা আবু খায়ের আক্ষেপ, ‘‘এই অশান্তির জন্যই তো মানুষ পাড়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কত পরিবার উঠে চলে গেল গ্রাম থেকে। তাই সবাই এখন শান্তি চাইছে। এই শহীদ স্মরণ নিয়ে যা হল তাতে ফের গ্রাম চঞ্চল হয়েছে।’’
তবে শহীদ স্মরণ নিয়ে তৃণমূল বিজেপির কর্মসূচি নিয়ে নির্লিপ্তই ছিলেন গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দারা। গ্রামের মানুষের অনেকেরই স্পষ্ট মত, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদেই তো গ্রাম হয়েছে অশান্ত। এখন সেই দুই গোষ্ঠী বিবাদকেই তো ফের হাওয়া দেওয়া হচ্ছে দুই শহীদ স্মরণের নামে। বগটুই মোড়ে হওয়া সিপিআই(এম)'র সভা থেকেও মহম্মদ সেলিম বলেন,‘‘রাজ্যজুড়েই আমরা দেখেছি যখনই তৃণমূলের মধ্যে কোনও খুনখারাপি, হানাহানি হয়েছে তখনই বিজেপি গিয়ে এক গোষ্ঠীকে তোলা দিয়েছে। তাতে মানুষের কোন উপকারটা হয়েছে? এখনও বগটুইয়ের ঘটনায় সব অপরাধী গ্রেপ্তার হয়নি। যে বালি, পাথর, কয়লার তোলাবাজি নিয়ে বিবাদের পরিণতিতে বগটুই, সেই সকল রাঘব বোয়ালদের গ্রেপ্তারের দাবি আমরা প্রথম থেকে করে আসছি। সেই দাবি নিয়ে লড়াইয়ের শেষ দেখে ছাড়ব।’’
লড়াই শেষ দেখে নিষ্কৃতি চাইছে গোটা বগটুইও। গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ সানাউল্লার কথায়,‘‘দশ বারো বছরে মানুষের ঢের শিক্ষা হয়েছে। মানুষ নিজেরাই বুঝে নিয়েছে কোন দলের চরিত্র কেমন। তাই তো গ্রামে বাইরে থেকে এত লোকজন নিয়ে এসে শহীদ স্মরণ হচ্ছে। তাতে গ্রামের মানুষের হেলদোল দেখতে পাচ্ছেন?’’ গোটা গ্রামের মত এক,‘লুট বন্ধ হলেই অশান্তি বন্ধ হবে।’ কিন্তু সেই লুট বন্ধের জন্য ন্যূনতম কোনও সদিচ্ছা না তৃণমূল না বিজেপি, কারোর মধ্যেও দেখতে পাচ্ছেন না কেউ।  গ্রামের সেই মেজাজের সুরে মহম্মদ সেলিমও বলেন,‘‘লুট বন্ধ না হলে খুন বন্ধ হবে না। লুটে নবান্নও যা, দিল্লির ছাপান্নও তাই। কলকাতায় যেমন ভাইপো আছে, রামপুরহাটেও আছে আরেক ভাইপো। তিনি আশিস ব্যানার্জির ভাইপো। যাকে গ্রামে ঢুকতে বাধা দিয়েছে এদিন। সেই ভাইপো তো এখানকার লুটের পান্ডা। তারাও কি না শহীদ স্মরণ করছে।’’
শুভেন্দু অধিকারের এদিন বগটুইয়ে আসা প্রসঙ্গেও কটাক্ষ করেছেন মহম্মদ সেলিম। বলেছেন,‘‘শুভেন্দু যখন চাকরি চুরি করেছিল তখন তাকে পাহারা দিয়েছিল রাজ্যের পুলিশ। এখন সে দিল্লির কোলে। তাকে পাহারা দিচ্ছে কেন্দ্রের পুলিশ। আমরা বলছি সব চোর-জোচ্চরদের হাত থেকে পঞ্চায়েত কেড়ে মানুষের হাতে তুলে দেব। তবেই বন্ধ হবে পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে লুট। বন্ধ হবে লুটের বখরা নিয়ে খুন,জখম।’’
এদিন বগটুই মোড়ে সভায় এছাড়াও বক্তব্য রেখেছেন সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ। উপস্থিত ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চ্যাটার্জি, কংগ্রেস নেতা মিলটন রশিদ প্রমুখরা। 
 

Comments :0

Login to leave a comment