সাম্প্রদায়িক হিংসা থামাতে সক্রিয় হলো হরিয়ানার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। নুহতে শুরু হিংসার অবসান চেয়ে শনিবার সর্বধর্ম সম্মেলন হবে জিন্দে। এমন সংহতির প্রয়াসকে সমর্থন জানিয়েছে হরিয়ানায় অত্যন্ত প্রভাবশালী বিভিন্ন খাপ পঞ্চায়েত। উদ্যোগে শামিল কৃষক সংগঠনগুলির মঞ্চ সংযুক্ত কিষান মোর্চা।
শুক্রবার প্রশাসনিক বিবৃতিতে বক্তব্যের গুরুতর ফারাকও ধরা পড়েছে। নুহের পুলিশ সুপার নরেন্দ্র সিং বিজরনিয়া বলেছেন, ‘‘দুষ্কর্মে যুক্ত কাউকে ছাড়া হবে না। তবে এই ঘটনায় প্রধান চক্রী হিসেবে কাউকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। এই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে কোনও প্রধান ষড়যন্ত্রকারী ছিল না। বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়েছে।’’
পুলিশ সুপারের বক্তব্যের সঙ্গে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজের বক্তব্য একেবারেই মিলছে না। ভিজ বলেছিলেন যে কেউ না কেউ গোটা ঘটনার পরিকল্পনা করেছে। প্রত্যেককে বিচারের মুখে দাঁড় করানো হবে। গত মঙ্গলবার হিংসা ছড়িয়ে পড়ার কিছু পরই এমন মন্তব্য করেচিলেন ভিজ।
শুক্রবারই দাঙ্গা মোকাবিলার নামে নুহ জেলায় তাউরু শহরে বুলডোজার নামিয়ে ঝুপড়ি উচ্ছেদ শুরু করেছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার। হিংসার জন্য দায়ী করা হয়েছে ‘আসাম থেকে আসা বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের। এরাই ঝুপড়ি বানিয়ে রয়েছে।’
এসপি এদিন বলেছেন, ‘গোরক্ষা বজরঙ ফোর্স’-র সভাপতি বিট্টু বজরঙ্গীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। ফরিদাবাদের এই স্বঘোষিত গোরক্ষক বাহিনীর নেতার আসল নাম রাজ কুমার। গোরক্ষার নামে নুহ সহ রাজস্থান সীমান্তের মেওয়াত এলাকায় একের পর মুসলিমকে আক্রমণ করা হয়েছে, হত্যাও করা হয়েছে অনেককে। এই বিট্টু বজরঙ্গী আরএসএস’র শাখা সংগঠন বজরঙ দলের সদস্য। গত তিন বছর ধরে ফরিদাবাদের এই সংগঠন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মনু মানেসরের মতো ‘গোরক্ষক’-রা একের পর এক হত্যায় জড়িত বলে অভিযোগ উঠলেও হরিয়ানার পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ১ জুলাই বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরঙ্গ দলের ডাকা ব্রিজমণ্ডল জলাভিষেক যাত্রা ঘিরে এমন অপরাধীদের অংশ নেওয়ার আশঙ্কা ছিল। নাগরিক সমাজ পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও জানিয়েচিল। তারপরও মিছিল ঠেকানো হলো না কেন, এই প্রশ্ন বড় হয়েছে হরিয়ানায়।
বিট্টু বজরঙ্গীর বিরুদ্ধেও কেবল গত এক মাসে দায়ের হয়েছে তিনটি অভিযোগ। প্রতিটি অভিযোগই সাম্প্রদায়িক প্ররোচনা দেওয়ার। কোনও ব্যবস্থা এতদিন নেয়নি পুলিশ। এদিন পুলিশ যদিও জানিয়েছে যে চব্বিশ ঘন্টায় নতুন করে কোনও হিংসার খবর নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার দিকে এগনোয় ইন্টারনেট পরিষেবা ফের চালু করার কথা ভাবছে প্রশাসন। মোট ৫৫টি এফআইআর দায়ের হয়েছে এবং ১৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে শনিবার জিন্দে সর্বধর্ম সম্মেলনের ডাক বিশেষ নজর কেড়েছে বিভিন্ন অংশেরই। খাপ পঞ্চায়েত দীর্ঘসময় জাতভিত্তিক সামাজিক রীতি চাপিয়ে দিয়েছে। আদিপত্যবাদী রাজনীতির প্রতিবাদেও দেখা যায়নি খাপ নেতাদের। একাংশ মনে করাচ্ছেন যে কৃষক আন্দোলনের সময় থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যুক্ত হয়েছে সমাজে। একজোটে আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিচ্ছে বিভিন্ন খাপ। দিল্লিতে অবস্থানরত কৃষকদের ওপর বিজেপি সরকারের নিপীড়নের প্রতিবাদে খোলাখুলি শামিল হয়েছিল বিভিন্ন খাপ। সর্বধর্ম সম্মেলনের ডাক দিয়ে সাম্প্রদায়িক হিংসা বন্ধের আহ্বানে সেই আন্দোলনের প্রভাব রয়েছে।
Comments :0