Ration scam

রেশনে ৬বছরের অডিট কেন হয়নি, প্রশ্নে জেরবার বালু

কলকাতা

রাজ্যের রেশন ব্যবস্থার অডিট হয়নি ৬ বছর। সেই সময়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ছিলেন রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী। ওই ৬ বছরে রেশনের জন্য রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে অন্তত ৩০হাজার কোটি টাকার খরচ হয়েছে। কিন্তু তার কোনও হিসাব নিকাশই হয়নি। যা সরকারি ক্ষেত্রে এক বিরাট দুর্নীতির আশঙ্কাকে প্রবল করে তোলে। ইডি খতিয়ে দেখতে চাইছে এই অডিট না হওয়ার কারণ।
কেন হয়নি? এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট(ইডি)-র আধিকারিকরা এই বিষয়ে একাধিকবার প্রশ্ন করেছেন জ্যোতিপ্রিয়কে। কিন্তু জবাবে প্রতিবারই মমতা ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ এই তৃণমূল নেতা বলেছেন, ‘‘সিএম(মুখ্যমন্ত্রী) সব জানেন। এই বিষয়ে যা সিদ্ধান্ত হয়েছে সরকারের অনুমতিতেই নেওয়া হয়েছে।’’
জেরার সময় এই ভাবেই, নানা প্রশ্নে মমতা ব্যানার্জি, রাজ্য সরকারকে ঢাল করছেন জ্যোতিপ্রিয় ওরফে বালু। ইডি সূত্রে এমনই জানা যাচ্ছে।
২০১৫-১৬ আর্থিক বছর থেকে রাজ্যের রেশন নিয়ে কোনও হিসাবই হয়নি। খতিয়ে দেখা হয়নি সব লেনদেন, টাকার আদান প্রদান আদৌ নিয়ম মাফিক ছিল কিনা। একে বলা হয় ‘পিডিএস অডিট।’ মমতা ব্যানার্জির মন্ত্রীসভায় ২০১১ থেকে দশ বছরের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী ছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাঁকে খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তর থেকে সরিয়ে বন দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী, ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের পরে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল, বন দপ্তরের নিয়োগে অনিয়ম খুঁজে বের করাই হবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রধান কাজ। কিন্তু বন দপ্তরে নিয়োগের অনিয়মের রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। মূলত বিজেপি-তে চলে যাওয়া রাজীব ব্যানার্জি বন মন্ত্রী থাকাকালীন নিয়োগের যে প্রক্রিয়া ছিল, তা ধরাই ছিল মমতা ব্যানার্জির উদ্দেশ্য। ইতিমধ্যেই রাজীব ব্যানার্জি ফিরেছেন তৃণমূলেই। ফলে সেই ‘তদন্তে’ ধামাচাপা পড়েছে। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সময়কালের ৬বছর রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা নিয়ে কোনও অডিট কেন করা যায়নি, তারও কোনও তদন্ত রাজ্য সরকার করেনি। 
এখন ইডি-র নজরে সেই ‘রেশন অডিট।’
রাজ্যের রেশন ব্যবস্থা বিস্তৃত। রাজ্যের রেশন দোকানগুলিতে চাল, আটা সহ নানা জিনিস প্রতি সপ্তাহে সরবরাহের দায়িত্ব রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের। রেশনে জিনিস সরবরাহই এই দপ্তরের প্রধান কাজ। এছাড়া এই দপ্তরের মাধ্যমে ধান, চাল সংগ্রহের কাজও হয়। প্রতি বছরই প্রচুর টাকা বাজেট বরাদ্দ থাকে দপ্তরে। অন্তত ১২-১৪ হাজার কোটি বরাদ্দ থাকে এই ক্ষেত্রে। তার সিংহভাগই খরচ হওয়ার কথা রেশনের জন্য। বালু খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী থাকাকালীন সর্বশেষ, ২০২০-২১-এ রেশন বণ্টনের জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় ৮০০০ কোটি টাকা। কত টাকা খরচ হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। আবার ২০১৯-২০-তে রেশন কার্ড ছাপাতে, বিলি করতে সাড়ে ১৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে দপ্তরের পক্ষ থেকে অর্থ দপ্তরকে জানানো হয়েছিল। ওই বছরই রেশনে চাল সরবরাহের ক্ষেত্রে ভরতুকি বাবদ প্রায় ৪৮০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে অর্থ দপ্তরের নথিতে জানানো হয়েছিল। আরও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে সেই বছর প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল রেশন সরবরাহে। ইডি জেনেছে, ২০১৮-১৯-এ এই বাবদ প্রায় ৬৯০০ কোটির বেশি টাকা খরচ হয়েছে। ২০১৭-১৮-তে প্রায় ৬০২৪ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ২০১৬-১৭’তে খরচ হয়েছে প্রায় ৫২০০ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬-তে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৩০০ কোটি টাকা। তবে এই সব হিসাবই অর্থ দপ্তরকে দেওয়া খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের হিসাব। 
রাজ্যের অর্থ দপ্তরের আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘বাজেটের আগে কোনও প্রকল্পে কত টাকা খরচ হয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব দেখা, বিচার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। দপ্তরের দেওয়া হিসাবের উপরেই আমাদের নির্ভর করতে হয়। খরচের প্রকৃত, অপচয় সবই অনেকটা বোঝা যায় অডিটে। যা অডিটর জেনারেলকে জমা দিতে হয়। সেখানে কেন অডিট হয়নি, তার দায় মূলত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের।’’ 
আগামী কয়েকদিন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রেশন দোকান, গোডাউনে তল্লাশি চালাবেন ইডির অফিসাররা। চলবে বালুকে জেরাও। এই প্রসঙ্গে জানা গেছে, রাজ্য বিধানসভায় খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী হিসাবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বিভিন্ন সময়ে যে উত্তর দিয়েছেন বিধায়কদের করা প্রশ্নের— সেদিকেও লক্ষ্য আছে গোয়েন্দাদের। কিছু নথি তারা জোগাড় করেছেন। তবে যেহেতু গত প্রায় একবছর রাজ্য বিধানসভায় লিখিত উত্তর দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে তৃণমূল সরকার, তাই বিভিন্ন সংবাদপত্রের কাটিং জোগাড় করছেন গোয়েন্দারা। বিশেষত করোনার সময়কালে রেশন বিলি এবং রেশন কার্ডের সংখ্যার হেরফের খতিয়ে দেখতে চাইছে ইডি।

Comments :0

Login to leave a comment