Haryana violence

সবাইকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়, বললেন খাট্টার

জাতীয়

 সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনরোহরলাল খাট্টার বুধবার সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন। তিনি বলেন, সদ্ভাব থেকেই নিরাপত্তা আসে। সমাজে নিজেদের মধ্যে সম্প্রীতি না থাকলে নিরপত্তার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকেই। নিরপত্তার জন্য সমাজে একটি সদ্ভাবের পরিবেশ তৈরি করতে হয়, প্রথমে সেই চেষ্টাই করতে হয়। প্রতিটি ব্যক্তির সুরক্ষা পুলিশ বা সেনা কেউই করতে পারে না বলেও মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর সমর্থনে তিনি বলেন, হরিয়ানার জনসংখ্যা ২ কোটি ৭০ লক্ষ। পুলিশ ৫০-৬০ হাজার। কিভাবে পুলিশ সবার নিরাপত্তা দিতে পারবে! যদিও এদিনই তিনি কেন্দ্রের কাছে আরও অতিরিক্ত বাহিনী চেয়েছেন।
সমাজে শান্তি, সদ্ভাব বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা মুখ্যমন্ত্রী বললেও কারা সেই সদ্ভাব নষ্ট করছে, তা বলেননি খাট্টার। সোমবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের যে শোভাযাত্রাকে ঘিরে হিংসা ছড়ানো হয়েছে, সেই হিংসায় কারা উসকানি দিয়েছে। তারপরেও দুই দিন ধরে গুরগাঁও সহ হরিয়ানার বিভিন্ন অংশে কারা হিংসা চালাচ্ছে সেই সব কথাও স্বাভাবিকভাবেই চেপে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী খাট্টার। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বজরঙ দল নেতা, খুন সহ বিভিন্ন অপরাধের মূল অভিযুক্ত মনু মানেসরের সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন খাট্টার। দায় ঝেড়ে ফেলার কায়দায় খাট্টার বলেছেন, ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে রাজস্থান সরকার। আমি রাজস্থান সরকারকে বলেছি, মনু মানেসরকে খুঁজে বের করতে যদি আমাদের সাহায্য লাগে আমরা করবো। এখন রাজস্থান পুলিশ তাকে খুঁজছে। আমাদের কাছে মনু মানেসর সম্পর্কে কোনও খবর নেই। মুখ্যমন্ত্রী খাট্টার দাবি করেছেন, তার সম্পর্কে হরিয়ানা পুলিশ-সরকার কিছুই জানে না। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অনিল বিজও এদিন মনু মানেসরের ভিডিও’র সমর্থনে সরব হয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমি মনু মানেসরের ভিডিও দেখেছি। বজরঙ দলের নেতা মনু মানেসর কোনও উসকানিমূলক কথা বলেননি। তিনি শুধুমাত্র শোভাযাত্রায় বড় সংখ্যায় উপস্থিত হতে বলেছেন। ফরিদাবাদের সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কৃষাণ পাল গুজ্জরও ‘ষড়যন্ত্রের’ তত্ত্ব আওড়ে মনু মানেসরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। এমনকি ভিএইচপি’র মিছিলে অস্ত্র নিয়ে যাওয়া এবং পুলিশের অনুমোদিত রুট বদল নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার পক্ষেও সাফাই গেয়েছেন। 
উল্লেখ্য, গোরক্ষার নামে দুই যুবককে গাড়ির ভিতরে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনু রবিবার সোশাল মিডিয়ায় ভিডিও পোস্ট করে হিন্দুত্ববাদীদের শোভাযাত্রায় দলে দলে যোগ দেওয়ার ডাক দেয়। সে নিজেও উপস্থিত থাকবে বলে ঘোষণা করে দেয়। এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তার প্রধান সঙ্গী এবং জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত বিট্টু বজরঙি সোমবার সশস্ত্র দলবল নিয়ে ভিএইচপি’র শোভাযাত্রায় ছিল এবং হিংসায় উসকানি দিয়েছে। 
মুখ্যমন্ত্রী কিছু না জানার ভান করেছেন। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সরাসরি সমর্থনে দাঁড়িয়েছেন বজরঙ দলের নেতার। তারপরেও বুধবার হরিয়ানা পুলিশের ডিজি পি কে আগরওয়াল এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, নূহতে হিংসার ঘটনায় বজরঙ দল নেতা মনু মানেসরের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে। এদিন গুরগাঁওয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ডিজিপি বলেন, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নূহতে অল্প সময়ের জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়েছিল। গুরগাঁও সম্পূর্ণ নিরাপদে আছে এবং কোথাও কোনও হিংসার খবর নেই। নূহতে শীর্ষ পুলিশ আধিকারিকরা রয়েছেন বলে জানিয়ে ডিজিপি বলেছেন, প্রশাসনিক নির্দেশ কেউ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। হিংসার ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠন করা হবে বলে ডিজিপি জানিয়েছেন। যদি এর পিছনে কোনও ষড়যন্ত্র থেকে থাকে, তারও তদন্ত হবে বলে ডিজিপি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী খাট্টার হিংসার ঘটনার পিছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ দেখেছিলেন। মোদীর রাজত্বের সময়ে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনাগুলিতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে এই ধরনের ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ সাধারণভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পদেক্ষপ করার আগে ব্যবহার করা হয়। তারপর বুলডোজার চলে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে ডিজিপি জানান, বজরঙ দল নেতা মনু মানেসরের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হবে। 
দুই দিনের হিংসার ঘটনায় হরিয়ানা ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শতাধিক জখম হয়েছেন। ১১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী হরিয়ানার বিভিন্ন অংশে মোতায়েন আছে। এরমধ্যে ১৪ কোম্পানি নূহতে। ৩ কোম্পানি পলওয়ালে, ২ কোম্পানি গুরগাঁওয়ে এবং এক কোম্পানি ফরিদাবাদে। মুখ্যমন্ত্রী আরও ৪ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছেন। 
এদিকে উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্যন্ত চৌতলার মঙ্গলবারের বক্তব্য নিয়েও এদিন প্রশ্নের মুখে পড়েন খাট্টার। চৌতলা মঙ্গলবার পুলিশের ভূমিকা, তথাকথিত গোরক্ষকদের ভূমিকা এবং শোভাযাত্রার আয়োজক বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন। চৌতলা বলেছিলেন, হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশেই থাকত হরিয়ানায়। অতীতে কখনও এইধরনের ঘটনা ঘটেনি। নাম না করে তিনি বলেন, এইরকম পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। এই নিয়ে বুধবার মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি এইরকম নয়। পাল্টা নিজের বক্তব্যের সমর্থনে যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করেন। চৌতলার বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মোদীর মন্ত্রিসভার সদস্য কৃষাণ পাল গুজ্জরও হিন্দুত্ববাদীদের সমর্থনেই নানা যুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যদিও চৌতলার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই হরিয়ানা সরকার বেকায়দায় পড়েছে। নিজেদের অপরাধ এবং অপদার্থতা আড়াল করতে পারছে না। উল্লেখ্য, হরিয়ানায় বিজেপি সরকার চালায় জেপিপি’র সমর্থনে। জেপিপি নেতা দুষ্যন্ত চৌতলাই রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী। সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি’র সঙ্গে বিরোধী বৃদ্ধি পেয়েছে জেপিপি’র। বিজেপি’র উগ্র হিন্দুত্বের কর্মসূচিই এই বিরোধের অন্যতম কারণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
 

Comments :0

Login to leave a comment